আমন খেতে কট ইঁদুরের হানা

প্রকাশ : ০৬ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি

লক্ষ্মীপুরে ফসলি খেতে বড় ও দ্রুতগামী এক জাতের ইঁদুরের আক্রমণ দেখা দিয়েছে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন জেলার শত শত কৃষক। আমন ও সবজি খেতে হঠাৎ করে ব্যাপকহারে আক্রমণ শুরু করেছে ইঁদুর। খেতের সব কাঁচা ধানের গাছ কেটে ফেলছে। এতো বড় ইঁদুর আগে দেখেননি এখানকার কৃষকরা। তাই এর নাম দিয়েছেন ‘কট’ ইঁদুর। এদের আক্রমণে এখন ফসল নিয়ে উৎকণ্ঠায় আমন চাষিরা। কৃষকরা বলছেন, প্রতিদিনই নতুন নতুন খেতে আক্রমণ করছে ইঁদুর। তাদের আক্রমণ থেকে ফসল বাঁচাতে রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা কামনা করেছেন অনেকে। লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা, কমলনগর ও রামগতি উপজেলার অধিকাংশ মাঠে নতুন ধরনের এ ইঁদুর আক্রমণ করেছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। বিষটোপ ও প্রাকৃতিক কোনো পদ্ধতিতেই থামানো যাচ্ছে না এদের। সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ, চররমনী মোহন এবং কমলনগর উপজেলার চর লরেঞ্চ ইউনিয়নের ২০ থেকে ২৫টি খেতে গিয়ে দেখা গেছে, প্রত্যেকটি খেতেই কাঁচা ধান কেটে ফেলেছে ইঁদুর। এতে কাঁচা ধান গাছ মরে গেছে। একই এলাকার সবগুলো খেতে ইঁদুর আক্রমণের খবর জানিয়েছেন কৃষকরা। ইঁদুরের এমন আক্রমণ দেখে দিশেহারা কৃষকরা। কমলনগর উপজেলার চর লরেঞ্চ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. ইসমাইল হোসেন জানান, চলতি আমন মৌসুমে সাড়ে চার একর জমিতে আমন ধান চাষ করেছেন তিনি। তার সবগুলো জমিতেই ব্যাপকহারে ইঁদুর আক্রমণ করেছে। ধানে থোড় (ফুল ধরার আগের পর্যায়) আসার আগেই ইঁদুর অন্তত ১০ শতাংশ জমির ধান পুরোপুরি কেটে ফেলেছে। সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের চর উভূতি গ্রামের কৃষক নুর মোহাম্মদ জানিয়েছেন, তার ৬৪ শতাংশ জমির আমন ধানের প্রায় চার শতাংশ কেটে ফেলেছে ইঁদুর। চর কালকিনি এলাকার কৃষক রহমান মিঝি বলেন, নদীপাড়ের সব জমিতে বিশাল আকৃতির ‘কট’ ইঁদুরের আক্রমণ শুরু হয়েছে। ইঁদুর তাড়াতে রাতে খেতের পাশে পুরোনো টায়ার পোড়াই, পটকা ফোটাই, বিষটোপ ব্যবহার করি। কিন্তু কাজ হচ্ছে না। ওই এলাকার কীটনাশক বিক্রেতা জিহাদ হোসেন বলেন, প্রতিদিন আমন খেতে বড় বড় ইঁদুরের আক্রমণ হচ্ছে। কৃষকরা ইঁদুর দমনে খেতে ‘জিংক ফসফাইড’ নামক এক ধরনের ওষুধ ব্যবহার করছেন। তাতেও নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না ইঁদুর। সদর উপজেলার শাহাজাহান, বেলাল, আবুল বাশার, মো. হানিফ, মহিন উদ্দিন, মোশাররফসহ অন্তত ৫০ জন কৃষক ইঁদুরের এমন আক্রমণকে মহামারির সঙ্গে তুলনা করেছেন। লক্ষ্মীপুর জেলার সার ও কীটনাশকের পরিবেশক আক্তার এন্টারপ্রাইজের পরিচালক আবদুর রহমান মোহন জানান, জেলার বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত তাদের তিনটি বিক্রয় কেন্দ্রে প্রতিদিনই শতশত কৃষক ইঁদুর মারার ওষুধ খুঁজছেন। কিন্তু সুনির্দিষ্ট কট ইঁদুর নিয়ন্ত্রণের কোনো ওষুধ নেই। তিনি জানান, এ ধরনের ইঁদুর বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসে অন্য কোনো জেলা থেকে পানি বা অন্য কোনো পথে লক্ষ্মীপুরে চলে এসেছে। অবসরপ্রাপ্ত কৃষি বিশেষজ্ঞ ড. মহি উদ্দিন জানান, অতীতে কৃষকদের মাঠে ছিল পেঁচা, সাপ, গুইসাপ, শিয়ালসহ বিভিন্ন প্রাণী। যেগুলো ইঁদুর ধরে খেতো। এসব প্রাণী এখন তেমন দেখা যায় না। এসব প্রাণী সংরক্ষণ করলে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি ইঁদুরের সমস্যা অনেকটা কমে যাবে। লক্ষ্মীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক ড. জাকির হোসেন জানান, ইঁদুর দমনে মাঠ পর্যায়ের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের সঙ্গে কাজ করছেন।