কে শুনবে গাছের বোবা কান্না

গাছে পেরেক ঠুকে বিজ্ঞাপন

প্রকাশ : ০৮ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  মাহফুজ খন্দকার, কুড়িগ্রাম

গাছ মানুষের পরম বন্ধু। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি আর্থিকভাবেও উপকার করে। কিন্তু আমরা গাছের সঙ্গে নিজেদের প্রয়োজনে নিষ্ঠুর আচরণ করে থাকি। প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে যেন গাছকে হত্যা করার অলিখিত প্রতিযোগিতা চলছে সর্বত্র। এ রকমই এক প্রতিযোগিতা চলছে কুড়িগ্রামে। সড়কের দুই পাশে সারিবদ্ধ গাছ। বিজ্ঞাপন আর রাজনৈতিক প্রচারণায় ছেয়ে গেছে অধিকাংশ বৃক্ষ।

গাছে পেরেক ঠুকে এসব বিজ্ঞাপনের সাইনবোর্ড, ফেস্টুন টাঙানো হয়েছে। এতে গাছগুলো মৃত্যুঝুঁকিতে পড়েছে। এর ফলে পরিবেশের সৌন্দর্য্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশ ভারসাম্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এ চিত্র কুড়িগ্রাম জেলা জুড়ে। পরিবেশবিদ কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মীর্জা মো. নাসির উদ্দিন বলেন, পেরেক লাগানোর কারণে গাছের গায়ে যে ছিদ্র হয় তা দিয়ে পানি ও তার সঙ্গে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া ও অণুজীব প্রবেশ করে। এতে গাছে দ্রুত পচন ধরে। ফলে তার খাদ্য ও পানি শোষণ প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়।

এতে করে গাছটি মারাও যেতে পারে। গাছের প্রতি এই নিষ্ঠুর আচরণ দেশের বন আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ হওয়ায় কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে কার্যকরি পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান তিনি। জেলা প্রশাসক সাইদুল আরীফ জানান, জেলার মাসিক সমন্বয় মিটিংয়ে অবৈভাবে গাছে পোস্টার, ফেস্টুন ইত্যাদি লাগানোর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা শুরুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এগুলো অপসারণে দ্রুত কার্যকরি পদক্ষেপ নেয়া হবে। তবে ব্যবসায়িক, চিকিৎসক এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রচার-প্রচারণার অসংখ্য ব্যানারের মিছিলে পিছিয়ে নেই স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কোচিং সেন্টারগুলোও। দেখে মনে হয় একেকটি গাছ যেন একেকটি বিজ্ঞাপন বোর্ডের খুঁটি। কোনো নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করেই যে যেখানে পারছে পেরেক ঠুকে গাছকে বিজ্ঞাপনের জন্য ব্যবহার করছে। সরেজমিন দেখা যায়, কুড়িগ্রাম বিজিবি-২২ ব্যাটালিয়ন ক্যাম্প, কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ ও মহিলা কলেজ এবং আনসার ভিডিপি কার্যালয়ের সামনে চিলমারী-কুড়িগ্রাম সড়কের দুই পাশে সারিবদ্ধভাবে লাগানো রয়েছে বড় বড় গাছ। আম, মেহগনি, অর্জুনসহ বিভিন্ন বৃক্ষের মধ্যে অসংখ্য পোস্টার, ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে। সারিবদ্ধ এসব গাছের মধ্যে একটি মৃত আমগাছের মধ্যে লাগানো হয়েছে বিজ্ঞাপনের পোস্টার। নাগেশ্বরী উপজেলা পরিষদ চত্বরে নারকেল গাছসহ বিভিন্ন গাছে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের ফেস্টুন পেরেক দিয়ে লাগানো হয়েছে। এছাড়া রাজারহাট উপজেলার নাজিমখা সড়কে রাজারহাট পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং সরকারি মীর ইসমাইল হোসেন ডিগ্রি কলেজে ভেতরে ও রাস্তার দুই ধারে ছোট-বড় গাছে শত শত পোস্টার, ফেস্টুন এবং রাজনৈতিক দলের ব্যানারে ভরে গেছে। নাগেশ্বরী উপজেলার বাসিন্দা মাহাবুব আলম বলেন, পুরো উপজেলার বিভিন্ন অফিস এবং গাছে শুধু নেতাদের ছবি দিয়ে পোস্টারে সাঁটানো। এতে করে অফিসের সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে গেছে।