হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী ছনের ঘর

প্রকাশ : ০৯ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  হীরেশ ভট্টাচার্য্য হিরো, মাধবপুর (হবিগঞ্জ)

হবিগঞ্জের মাধবপুরে গ্রামাঞ্চলে ছনে ব্যবহার কমতে শুরু করেছে। ঘরের চালায় ব্যবহার করার জন্য উলুখড় জাতীয় এক ধরনের তৃণ বিশেষ। এককালে আবহমান গ্রামবাংলার ঐতিহ্য ছিল ছনের ঘর। একসময় যে ছন দিয়ে মানুষ থাকার ঘরের ছাউনি হিসেবে ব্যবহার করত, এখন তা গ্রামীণ থাকার ঘর থেকে বিলুপ্ত হয়ে আধুনিক জগতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার হচ্ছে। পার্কের দর্শনার্থীদের বিশ্রামের জন্য বৈঠকখানায়, শখের রেস্টুরেন্ট, পাকা বাড়ির সামনে কিংবা বাগানে বসে আড্ডা দেওয়ার ঘর অথবা কোনো শুটিং স্পটে। অনেকের কাছে ছনের বাহারি ব্যবহার দেখে মনে হয় আধুনিকতার এক অনন্য ছোঁয়া। অনেকের পাকা বসতঘরের উপর তলায় ছনের তৈরি ছোট ঘরটিকে ঐতিহ্যের রূপ দেয়। চিরচেনা এই ছন তৎকালে ঘরের ছাউনির জন্য শতভাগ ব্যবহার হতো। ছনই ছিল ঘরের চালার একমাত্র ভরসা। আদিকাল থেকে মানুষ বসবাসের জন্য গোলপাতা, পরে খড় তারপর এই ছন দিয়ে ঘরের চাল-ছাউনি তৈরি করে বসবাস করত। ছন গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের নিদর্শন। গ্রামীণ এলাকার গরিব-মধ্যবিত্তের বাড়ির ঘরের ছাউনির একমাত্র অবলম্বন ছিল এই ছন। সেকালে ছন মাটি কিংবা বেড়ার ঘরে ছাউনি হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। কালের আবর্তনে এখন হারিয়ে যেতে বসেছে আবহমানকালের গ্রামীণ ঐতিহ্যের চিরচেনা এই চিহ্নটি। আধুনিকতার গন্ডি পেরিয়ে এখন আমরা বাস করছি অত্যাধুনিক যুগে। এতে মানবজীবন ও পরিবেশের এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। এ পরিবর্তনের ছোঁয়ায় বর্তমানে ছনের তৈরি ঘর বিলুপ্তির পথে বললেই চলে। এদিকে রঘুনন্দন পাহাড়ী এলাকায় ছন কাটা উৎসব চলে। ছন কেটে ধানের মতো মেলে দিয়ে কিছুদিন শুকানোর পর তা বিক্রির জন্য ভার বেঁধে হাটে নিয়ে যাওয়া হয়। একসময় পাহাড়গুলো এলাকাভিত্তিক ছনখোলা হিসেবে বেশ পরিচিত ছিল। কিন্তু কালের বিবর্তনে সেই দৃশ্য এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। হারিয়ে যাচ্ছে পাহাড়ি এলাকার ছন। আধুনিক সভ্যতায় মানুষ এখন পাকাণ্ডআধাপাকা বাড়ি তৈরিতে ব্যস্ত। ছাউনি হিসেবে ব্যবহার করছে টিনকে। ফলে গ্রাম থেকে ছনের ব্যবহার ক্রমেই বিলুপ্তির পথে। যৎসামান্য ছন রঘুনন্দন পাহাড়ি অঞ্চল থেকে কেটে আনেন পাহাড়ি লোকজন। আগের মতো ছন পাওয়া যায় না বলে জানান পাহাড়ি এক চাষি রেমন সাওতাঁল। তিনি বলেন, প্রতিবছর ঘরে পুরাতন ছনের ছাউনি সরিয়ে নতুন করে ছন ব্যবহার করে। এ সময়ে মানুষ ব্যস্ত থাকে ঘর ছাউনিতে। অনেকে অর্থাভাবে টিনের পরিবর্তে ছনকে ছাউনি হিসেবে ব্যবহার করে যাচ্ছে। আগের মতো ছন তেমন পাওয়া যায় না পাহাড়ে। তাছাড়া ছনের চাহিদা কমে যাওয়ায় পাহাড়ী চাষিরাও বিমুখ হচ্ছে দিন দিন। জানা গেছে, ছনের ছাউনির ঘর তৈরির জন্য গ্রামে কিছু কারিগর ছিলেন। তাদের দৈনিক মজুরি ছিল ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত। ফাল্গুন-চৈত্রমাসে গ্রামের বিভিন্ন এলাকার ঘরের ছাউনি হিসেবে ছনের ব্যবহারে ধুম পড়ে যেতো। এখনো প্রায় পরিবার ছনের ওপর নির্ভরশীল। বছর গত হলে ঘরের ছাউনিতে ছনের প্রয়োজন হয়। এ ছাড়া দুই-তিন বছর পরপর ছন পরিবর্তন করতে হয় বলে এটাকে অনেকে ঝামেলা মনে করেন। সেই থেকে ছনের ছাউনি ঘরের সংখ্যা কমতে শুরু করে। বর্তমানে এই ঘর খুব একটা চোখে পড়ে না।