পর্যটক টানছে কাঞ্চনজঙ্ঘার মায়া

প্রকাশ : ০৯ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  এসকে দোয়েল, পঞ্চগড়

কোনো প্রকার পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়াই দেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে খালি চোখে দেখা মিলছে পৃথিবীর তৃতীয় পর্বতশৃঙ্ঘ অপরূপ সৌন্দর্যের মোহনীয় কাঞ্চনজঙ্ঘা। চলতি অক্টোবর মাসের শেষের দিকে মেঘমুক্ত উত্তরের আকাশে এই অপরূপ সৌন্দর্যের রূপ দেখতে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ছুটছে হাজারও পর্যটক। পর্যটকের সমাগমে মুখরিত হয়ে উঠেছে উত্তরের এ জেলার পর্যটন স্পটগুলো। শনিবার, শুক্রবার ও গত বৃহস্পতিবার তেঁতুলিয়া উপজেলার পর্যটনস্পট ডাকবাংলোয় গিয়ে দেখা যায়, ভোরের আলো না জাগতেই পর্যটকদের ঢল। তারা সীমান্ত প্রবাহিত মহানন্দা নদীর তীরে ডাকবাংলোয় দাঁড়িয়ে দেখছেন হেমন্তে হিমালয়ের বরফে টুপি পরা অপরূপ ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’। হাত নাড়িয়ে একে অপরকে দেখিয়ে বলছেন, ওই দেখা যাচ্ছে। কী মোহনীয় রূপের আঁধার এ পর্বতশৃঙ্গ। তৃপ্তি জুড়িয়ে দেখছেন তারা। কেউ কুয়াশা ঢাকার কারণে দেখতে না পাওয়ায় তা দেখার জন্য থেকে যাচ্ছেন। পরের দিন ভোরে আবার হাজির হচ্ছেন তারা। হিমালয়ের দ্বিতীয় পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা। প্রতিবছর এই কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পর্যটকরা পাড়ি জমান হিমালয়ের দেশ নেপালে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিংয়ের টাইগার হিলে দাঁড়িয়ে অপরূপ কাঞ্চনজঙ্ঘায় মুগ্ধ হন পর্যটকরা। কেউ আরো কাছ থেকে দেখতে নেপালেই ছুটে যান। দিনের আলোয় সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নানা রূপ মেলে ধরে ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’। এ কারণে হিমালয়ের মাঝে কাঞ্চনজঙ্ঘা রূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে ছুটে আসছেন পর্যটকরা।

কাঞ্চনজঙ্ঘা ছাড়াও জেলার পর্যটন স্পটগুলো ঘুরে দেখছেন পর্যটকরা। বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর, ইমিগ্রেশন ও জিরো পয়েন্ট, বিজিবি-বিএসফের জয়েন্ট রিট্রিট সেরিমনি, ইংরেজ আমলে জেলা পরিষদ ডাকবাংলো, সমতল ভূমির চা বাগান, আনন্দধারা পার্ক, ভিতরগড় দূর্গনগরী, মহারাজা দিঘী, পাথরের জাদুঘর, মোগল স্থাপনা মির্জাপুর শাহী মসজিদ, বোদেশ্বরী পীঠ মন্দিরসব বিভিন্ন ঐতিহ্য দর্শনীয় স্থানগুলো মুগ্ধতা কাড়ছে পর্যটকদের। পর্যটন এ সময়ে পর্যটকদের আগমনে ঘুরে দাঁড়িয়েছে স্থানীয় অর্থনীতি। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকদের সেবা দিতে ভ্যান, অটোচালক, মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন যানবাহনগুলো ব্যস্ত সময় পাড় করছে। তারা পর্যটকদের নিয়ে ঘুরিয়ে দেখাচ্ছেন কাঞ্চনজঙ্ঘাসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানগুলো। এতে করে অর্থ উপার্জন বেড়ে গেছে। ব্যস্ত হয়ে উঠেছে আবাসিক হোটেল ও রেস্টুরেন্ট ও পর্যটক সেবা দেওয়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো। আবাসিক হোটেলগুলোতে মিলছে না পর্যাপ্ত রুম। পর্যটকদের নির্ভিঘ্নে ভ্রমণের জন্য নিরাপত্তাসহ যাবতীয় সেবা দিচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন, থানা পুলিশ ও ট্যুরিস্ট পুলিশ। তেঁতুলিয়ায় স্থাপিত হওয়া ট্যুরিস্ট পুলিশ পঞ্চগড় জোন পর্যটকদের নিরাপত্তাসহ তাদের সমস্যা নিরসনে তারা কাজ করছে। স্থানীয় আলোকচিত্রী ফিরোজ আল সাবাহ জানান, শ্বেত শুভ্র কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্য উপভোগ করার মোক্ষম সময় ভোর ও বিকেল বেলা। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নানান রঙ নিয়ে হাজির হয় বরফে আচ্ছাদিত এ পর্বতচূড়া। কখনো শুভ্র, কখনো গোলাপি, আবার কখনো লাল রঙ।

ভোরের আলো ফুটতেই তা গিয়ে পড়ে ঠিক কাঞ্চনজঙ্ঘার চূড়ায়। চারপাশে আবছা অন্ধকার থাকলেও চকচক করে চূড়াটি। ভোরের আলোয় এবং বিকেল পর্বত চূড়াটি পোড়া মাটির রঙ নেয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু ঝাপসা হয়ে আসে। তখন রং হয় সাদা। দূর থেকে মনে হয় এ যেন আকাশের গায়ে খণ্ড বরফ। পঞ্চগড় ট্যুরিস্ট পুলিশ জোনের অফিসার ইনচার্জ মো. সাজেদুর রহমান বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে যেসব পর্যটক আমাদের এখানে আসেন তাদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। প্রতিদিন ভোর থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত পর্যটন স্পট ডাকবাংলো পিকনিক করনারে ট্যুরিস্ট পুলিশ মোতায়েন করা থাকে। আমরা নতুনভাবে উদ্যোগ নিয়েছি কোনো পর্যটক যেন স্থানীয় কিংবা দুষ্কৃতকারী দ্বারা হয়রানি শিকার না হন, তার জন্য আমরা হেল্প ডেস্ক তৈরি করব। এটি স্থানীয়দের সহযোগিতা নেয়া হবে। পর্যটকরা সমস্যা তুলে ধরতে পারবেন। আমরা তা নিরসন ও নিরাপত্তা প্রদানে তৎপর রয়েছি।