ঢাকা ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

যুগের ‘হাতেম তায়’ বীর মুক্তিযোদ্ধা জব্বার ডাক্তার

যুগের ‘হাতেম তায়’ বীর মুক্তিযোদ্ধা জব্বার ডাক্তার

দানবীর হাতেম তায়ের নাম শোনেনি, এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। ছোটবেলায় পাঠ্যবইয়ের সুবাদে তার নাম না জানা মানুষ উপমহাদেশে বিরল। অনেকেই তাকে রূপকথার চরিত্র হিসেবেই মনে করে, অথচ তিনি সত্যিকারের রক্ত মাংসের মানুষ ছিলেন! তার পরোপকার আর মহৎ হৃদয়ের গল্প এতটাই অবিশ্বাস্য যে তিনি ইতিহাসের তাম্রলিপিতে স্থান পেয়ে গেছেন। এই আধুনিক যুগেও এমনি এক হাতিম তায় এর খোঁজ পাওয়া গেছে, শেরপুরের প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে। তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা হলেও পেশায় একজন পল্লী চিকিৎসক। প্রায় ৩০ বছর ধরে নিরবে-নিভৃতে এ পেশা থেকে আয় করা সিংহ ভাগ নগদ অর্থ তিনি এলাকার শিশুদের জন্য ব্যয় করে যাচ্ছেন। প্রতিমাসে তার সে ব্যয়ের পরিমাণ প্রায় লাখ টাকা। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, শেরপুর জেলার শ্রীবর্দী উপজেলার ভেলুয়া ইউনিয়নের ডাকরাপাড়া গ্রামের সত্তরোর্ধ্ব এই বীর মুক্তিযোদ্ধা পল্লী চিকিৎসক হাবিবুর রহমান ওরফে জব্বার ডাক্তার প্রায় ৩০ বছর ধরে প্রতিদিন এভাবেই ছুটে চলেন গ্রামীণ রাস্তা ও গ্রামের বিভিন্ন পাড়ার বাড়ি বাড়ি। সঙ্গে নেন একটি সোপিং ব্যাগ। সে ব্যাগে থাকেন ১০ ও ২০ টাকা নোটের নগদ ৩ হাজার টাকা এবং কিছু বিস্কুট ও চকোলেট। বাসায় আগে থেকেই প্রতিদিনের জন্য ৩ হাজার টাকা খুচরা করে রাখেন তিনি। এরপর বেরিয়ে পড়েন দানের উদ্দেশে। কোলের শিশুসহ স্কুলগামী শিশুদের মাঝে তিনি সেই টাকা এবং চকোলেট ও বিস্কুট বিলিয়ে দেন। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত গ্রাম ঘুরে বাড়ি ফিরেন দুপুর বেলা। এরপর দুপুরের খাবার খেয়ে বিকেলে স্থানীয় ঝগড়ারচর বাজারে তার নিজস্ব ভবনের ফার্মেসিতে বসেন। প্রতিদিন সে পাড়া পাড়া ভাগ করে ঘুরেন, শেরপুর সদর উপজেলার কিছু অংশ, জামালপুরের বক্সীগঞ্জ, ইসলামপুর ও দেওয়ানগঞ্জ এবং শ্রীবর্দী উপজেলার প্রায় ১০ থেকে ১৫টি গ্রাম। তার অর্থ ও খাদ্য বিতরণের সময় যদি কোনো শিশু বাড়িতে না থাকে, তখন তাদের অভিভাবকদের হাতে তুলে দেয় টাকা বিস্কুট-চকোলেট। তার এ দানের বিষয়ে খুশি শিশু এবং এলাকার সাধারণ মানুষ। কেউ তাকে দাদু আবার কেউ তাকে জ্যাঠা বলে সম্বোধন করে থাকেন। জব্বার ডাক্তার ১৯৭৯ সালে পল্লী চিকিৎসকের পরীক্ষা দিয়ে শেরপুর জেলার প্রথম হন তিনি। এরপর ঝগড়ার চর বাজারে চেম্বার খুলে একটি ওষুধের ফার্মেসি দেন তিনি। শুরু করেন বিনামূল্যে রোগী দেখা। তবে শুধু ওষুধের দাম রাখেন তিনি। তার চিকিৎসায় রোগীরা ভালো হওয়ায় আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে তার নাম। রোগীরাও খুশি তার চিকিৎসায় ও শিশুদের প্রতি ভালোবাসা দেখে। যেকোনো শিশু রোগী চিৎকার করলে তিনি তাকে কোলে নিয়েই শান্ত করে ফেলেন। এরপর গালে চুমু খেয়ে চিকিৎসা শুরু করেন। গ্রামের সাধারণ মানুষ মনে করেন হাতিম তায় এর মতো নিজের মুক্তিযোদ্ধার ভাতা ও ব্যবসার অর্থ বিলিয়ে দেয়া জব্বর ডাক্তারের মতো আরো ডাক্তার ঘরের ঘরে জন্ম হোক। এতে বদলে যাবে সমাজের চিত্র। তার এ দানশীলতায় উদ্ধুদ্ধ হোক আরো অনেকেই, এমনটি আশা করেন এলাকার সচেতন মানুষ।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত