খেজুরগাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত চুয়াডাঙ্গার গাছিরা

প্রকাশ : ১০ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

গেল বেশ কিছুদিন ধরেই দিনে গরম সন্ধায় শীত অনুভূত হচ্ছে। সকালের শিশিরভেজা ঘাস জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা।

অনেকেই রাতে কাথা বা পাতলা কম্বল ব্যবহার করছে। এরই মধ্যে চুয়াডাঙ্গার গাছিরা আগাম খেজুর গাছ তুলতে শুরু করেছে। শীত আসতে না আসতে চুয়াডাঙ্গা জেলার গাছিরা খেজুর গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছে। কে কত আগে, খেজুর রস সংগ্রহ করতে পারে, সেই প্রতিযোগিতা চলছে গাছিদের মধ্যে। খেজুরগাছ থেকে বিশেষভাবে রস সংগ্রহ করতে পারদর্শী তাদের গাছি বলা হয়। শীতের মৌসুম শুরু হতে না হতেই, আগাম রস পাওয়ার আশায় অধিকাংশ এলাকার গাছিরা গাছের পরিচর্যা ও গাছ প্রস্তুত করতে শুরু করেছে। গাছিরা হাতে দা নিয়ে ও কোমরে ডোঙ্গা বেঁধে নিপুণ হাতে গাছ চাছাছোলা করছেন। ধারালো দা দিয়ে খেজুর গাছের সোনালি অংশ বের করা হয়, যাকে বলে চাঁচ দেওয়া তার সপ্তাহ খানেক পর বাঁশের তৈরি নোলন স্থাপনের মাধ্যমে শুরু হবে সুস্বাদু খেজুর রস আহরণের কাজ। শীতের মৌসুম মানেই খেজুর গুড়ের মৌ মৌ গন্ধে ভরে ওঠে পুরো পাড়া মহল্লা। আর শীতের সকালে ঠান্ডা খেজুর রসের তৃপ্তি-ই আলাদা। এছাড়া খেজুর রসের ক্ষীর পায়েসের মজাই না-ই বা বলা হলো। প্রতিদিন গ্রামের কোনো না কোনো বাড়িতে খেজুর রসের খবারের আয়োজন চলে।

খেজুরের শুধু রসই নয়, পাটালি, নলেন গুড় ছাড়া জমেই না। চুয়াডাঙ্গা জেলার প্রতিটি মাঠে ক্ষেতের আইলে, রাস্তার পাশে, পুকুর পাড়ে-অযত্নে-অবহেলায় বেড়ে ওঠা খেজুরের গাছ জেলার অর্থনীতিতে আশীর্বাদ। শীত মৌসুমে রস-গুড় উৎপাদন করে প্রায় ৫ থেকে ৬ মাস স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে জেলার কয়েক হাজার পরিবার। খেজুরের রস, গুড় ও পাটালি উৎপাদনে প্রসিদ্ধ জেলা চুয়াডাঙ্গা। এ জেলায় যে রস, গুড় ও পাটালি তৈরি হয়, তা নিয়ে শীত মৌসুমে রীতিমতো কাড়াকাড়ি শুরু হয়। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি হয় এ জেলার গুড়-পাটালি। দেশের বাইরেও এর বেশ কদর রয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলিত মৌসুমে জেলার ৪ উপজেলায় ২ লাখ ৬৬ হাজারের মতো খেজুরগাছ থেকে কৃষকরা রস আহরণ (সংগ্রহ) করছে। যার প্রায় অর্ধেকই সদর উপজেলায়। নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত চলে গুড়ের মৌসুম। এই মৌসুমে গড়ে আড়াই হাজার টন গুড় উৎপাদিত হবে। শীত মৌসুম খেজুরের রস দিয়ে গ্রামীণ জনপদে শুরু হয় শীতের আমেজ। শীত যত বাড়বে খেজুরের রসের স্বাদ তত বাড়বে। সুস্বাদু পিঠা ও পায়েস তৈরিতে আবহমান কাল থেকে গ্রামবাংলার ঘরে ঘরে খেজুরের গুড় ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এখানকার কারিগরদের দানা গুড়, পাটালি গুড় তৈরিতে ব্যাপক সুনাম থাকায় খেজুরের গুড় পাটালির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে দেশজুড়ে। চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, জেলাজুড়ে খেজুরের রস আহরণের জন্য গাছিরা আগাম খেজুর গাছগুলো প্রস্তুত করছে। সঠিক পদ্ধতিতে, স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে যেন রস-গুড় উৎপাদন করে গাছিরা- এজন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হয়।

তিনি আরো জানান, ভোক্তারা যাতে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে প্রস্তুত খেজুরের রস-গুড় পেতে পারে এজন্য কাজ করে করে থাকে চুয়াডাঙ্গা কৃষি বিভাগ। মৌসুমে প্রতিটি গাছ থেকে গড়ে ১০ কেজি গুড় পাওয়া যায়। সে হিসাবে চলতি মৌসুমে ২ লাখ ৬৬ হাজারের মতো খেজুরগাছ থেকে গড়ে আড়াই হাজার থেকে ৩ হাজার টন গুড় উৎপাদিত হবে। এছাড়া গাছিরা খেজুর রস-গুড়ের বিভিন্ন ধরনের পিঠা ও মিষ্টান্ন তৈরি করে নিকটস্থ বাজারে বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে থাকে।