নকশিকাঁথায় স্বাবলম্বী সেলিনা

প্রকাশ : ১১ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

এক সময় স্বামীর স্বল্প আয়ে সংসার পরিচালনা নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতে হতো সেলিনা আক্তারের। অভাবের কারণে দুই সন্তানের পড়াশুনা বন্ধের উপক্রম। তখন সংসারের অভাব দূর করতে খুঁজতে থাকেন বিকল্প আয়ের পথ। ইউটিউব দেখে নকশিকাঁথা তৈরিতে আগ্রহী হন সেলিনা আক্তার। মাত্র ২০ হাজার টাকা ধার নিয়ে শুরু হয় তার নকশিকাঁথার ব্যবসা। সেখান থেকেই অভাব দূর করে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন তিনি। নারী উদ্যোক্তা সেলিনা আক্তার জানান, নকশিকাঁথার ব্যবসা করে সব অভাব দূরে করে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন তিনি। বর্তমানে স্বামী সন্তান নিয়ে ভালোই আছেন। ব্যবসার লাভের টাকা দিয়ে প্রায় দেড় বছর আগে বড় মেয়ে নুরসাত জাহানের ধুমধাম করে বিয়েও দিয়েছেন তিনি।

বর্তমানে তার অধীনে কাজ করছেন ৪০ জন নারী। জানা গেছে, ভোলা পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাঁঠালি এলাকার ব্যাপারী বাড়ির সংগ্রামী নারী সেলিনা আক্তার। তার স্বামী মো. আলম এক সময় ভোলা বাস মালিক সমিতির অধীনে মাত্র ৬ হাজার টাকা বেতনে বাসের টিকিট বিক্রির চাকরি করতেন। তা দিয়ে দুই মেয়ের পড়াশুনার খরচ তো দূরের কথা সংসারও চলত না তাদের। অভাবের কারণে মেয়েদের পড়াশুনা বন্ধ হতে বসেছিল।

আর তখনই ইউটিউব দেখে নকশিকাঁথা তৈরি করতে আগ্রহী হন সেলিনা আক্তার। কিন্তু টাকার অভাবে তাও করতে পারছিলেন না তিনি। পরে বড় ভাই মঞ্জুর আলমের কাছ থেকে মাত্র ২০ হাজার টাকা ধার নিয়ে ২০১৮ সালের দিকে শুরু করেন নকশিকাঁথার ব্যবসা। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। সেলিনা আক্তার আরও জানান, এক সময় তিনবেলা খাবার খেতে যেখানে কষ্ট হতো, সেখানে আজ তার অধীনে ৪০ জন নারী কাজ করছেন। তার ডিজাইন করা নকশী কাঁথা সেলাই করে সংসারে বাড়তি আয়ের জোগান দিচ্ছেন তারা। সেলিনা আক্তার তার তৈরি নকশিকাঁথা অনলাইন ও স্থানীয় পর্যায়ে বিক্রি করেন। প্রতি মাসে ২০-২৫টি নকশিকাঁথা বিক্রি করতে পারেন তিনি। বাচ্চাদের নকশিকাঁথা ৩০০ থেকে ১ হাজার ও বড়দের কাঁথা ৬ থেকে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। শ্রমিক খরচ ও সুতাসহ সব খরচ বাদে তার মাসে আয় হয় প্রায় ৪০ হাজার টাকা বলেও জানান তিনি।

সেলিনা আক্তারের ছোট মেয়ে ইসরাত জাহান মিম জানান, তিনি ভোলা মহিলা কলেজে বাংলা বিভাগে অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। পড়াশুনার পাশাপাশি মায়ের ব্যবসায় সময় দেন তিনি। এতে তার মায়ের অনেক উপকার হয়। সেলিনা আক্তারের অধীনে নকশিকাঁথার কাজ করা মাহেনুর বেগম, সীমা বেগম ও সাদেজা বেগম বলেন, আমরা কয়েক বছর ধরে সেলিনা আক্তারের ডিজাইন করা নকশিকাঁথা সেলাই করে আসছি।

এরমধ্যে বাচ্চাদের নকশিকাঁথায় ২০০-৬০০ ও বড়দের নকশিকাঁথায় ৩-৪ হাজার টাকা মজুরি পাই। ভোলা মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. ইকবাল হোসেন জানান, সেলিনা আক্তার অনেক সংগ্রাম করে আজ নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন। তার অধীনে কাজ করে এখন অনেক নারী তাদের সংসারে স্বামীর পাশাপাশি বাড়তি আয় করছেন। ওইসব নারীদের কর্মসংস্থান হয়েছে। সেলিনা আক্তারের ব্যবসা আরো বাড়াতে ও উন্নতি করতে আমরা সব ধরনের সহযোগিতা করব।