ঢাকা ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

এক জেলায় পাঁচ সাগর

এক জেলায় পাঁচ সাগর

পাঁচ সাগরের জেলা দিনাজপুর। এখানে রয়েছে পাঁচটি দিঘি। জেলা শহরের কিছু দূরে হলেও এসব দিঘির রয়েছে ইতিহাস-ঐতিহ্য। সাগর নয়, তবু সাগর নামেই পরিচিত। দিঘিগুলো হলো- রামসাগর, সুখসাগর, মাতাসাগর, আনন্দ সাগর ও জুলুম সাগর। রামসাগর : নাম তার রামসাগর। মধ্যযুগের বিখ্যাত সামন্ত রাজার অমর কীর্তি রামসাগর ঐতিহাসিক দিঘি। মহারাজাদের কীর্তিময় এ দিঘির অবস্থান দিনাজপুর শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে দক্ষিণে। কৃষিনির্ভর দিনাজপুর রাজা-মহারাজাদের ইতিহাসে যেমন সমৃদ্ধ; তেমনই মন্দির, মসজিদ, বৌদ্ধবিহার, রাজবাটী আর কৃত্রিম সাগরগুলো কালের সাক্ষী হয়ে আছে। সাগরগুলো নিয়ে স্থানীয় মানুষের মধ্যে নানা জনশ্রুতি আছে। কেউ বলেন, প্রচণ্ড খরা থেকে বাঁচতে প্রজাদের কথা চিন্তা করে তৎকালীন রাজা সাগরগুলো খনন করেছিলেন। কারো মতে, অলৌকিকভাবে সাগর তৈরি হয়েছে। আবার কেউ বলেন, রাজ্য চালাতে গিয়ে বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এসব সাগর খনন করা হয়েছে। এসব সাগরের পেছনের গল্পই তুলে ধরা হলো। ১৮৬০ খ্রিষ্টাব্দে মেজর শেরউইলের জরিপসংক্রান্ত বিবরণ থেকে দিনাজপুরে ১৫ হাজার প্রাচীন দিঘি ও পুকুরের কথা জানা যায়।

এসব রাজ-জমিদারি এস্টেটের প্রাচীন কীর্তি। এফ ডব্লিউ স্ট্রং রচিত ‘ইস্টার্ন বেঙ্গল অ্যান্ড আসাম ডিস্ট্রিক্ট গেজেটিয়ার দিনাজপুর (১৯১২)’ এর তথ্যমতে, রাজবংশের প্রথম রাজা ছিলেন শুকদেব রায়। ব্যক্তিজীবনে তিনি ছিলেন ধর্মপ্রাণ, দেবদ্বিজ ভক্ত, সৎকর্মশীল ও উদার মানসিকতার। ১৬৭৭ খ্রিষ্টাব্দে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর কয়েক বছর আগে প্রজাদের জন্য এবং স্মৃতিস্বরূপ একটি দিঘি খনন করা হয়েছিল। পরে সেটির নামকরণ করা হয় শুকসাগর। শহর থেকে চার কিলোমিটার দূরে রাজবাটী এলাকায় শুকসাগরের অবস্থান। উত্তর-দক্ষিণ বরাবর সাগরের দৈর্ঘ্য প্রায় ৪৭০ মিটার এবং প্রস্থ ১৯৫ মিটার। জলভাগের আয়তন প্রায় ২২ দশমিক ৬৩ একর, আর পাড়ের আয়তন ২২ দশমিক ৯৯ একর। সাগরের উত্তর প্রান্তে রাজা ইট ও চুন-সুরকি দিয়ে একটি শিব মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। বর্তমানে সেটির অস্তিত্ব নেই। সাগরের তিন পাশে আছে নানা গাছগাছালি। সম্প্রতি সাগরপাড়ে ইকোপার্ক তৈরি করা হয়েছে। শিশু-কিশোরদের বিভিন্ন রাইড, বসার ছাউনি, বে, টি স্টল ও রেস্টহাউস নির্মাণ করা হয়েছে। সাগরের স্বচ্ছ পানিতে ভেসে থাকে নানা প্রজাতির মাছ। অতিথি পাখিদের সঙ্গে বেড়েছে পর্যটকের সংখ্যাও। সাগরপাড়ে বনভোজন কিংবা চড়ুইভাতির আয়োজনও করেন ভ্রমণপিপাসুরা। দিনাজপুর শহরের পাশে ঐতিহ্যবাহী মাতাসাগর। চারপাশে উঁচু পাহাড়ের মতো ঢিবিতে বসে সাগরের সৌন্দর্য উপভোগ করেন পর্যটক ও দর্শনার্থীরা। দিনাজপুর শহরের পাশে ঐতিহ্যবাহী মাতাসাগর। চারপাশে উঁচু পাহাড়ের মতো ঢিবিতে বসে সাগরের সৌন্দর্য উপভোগ করেন পর্যটক ও দর্শনার্থীরা। দূর থেকে দেখলে পাহাড়ের মতো লাগে। কাছে এলে পরিষ্কার বোঝা যায়, মাতাসাগরে বাতাসে দুলছে টলটলে পানি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত