তিস্তার চরে চাষাবাদ

কর্মসংস্থান বেড়েছে অনেক নারী-পুরুষের

প্রকাশ : ১৪ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

কুড়িগ্রামের তিস্তা নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়ায় সেখানে জেগে উঠেছে চর। যেদিকে দুই চোখ যায় শুধু ধু-ধু বালুচর। এ বালুচরে স্থানীয় কৃষকরা আলু, পেঁয়াজ, রসুন ও মিষ্টিকুমড়া রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ব্যাপক পরিসরে তিস্তার চরে চাষাবাদ হওয়ার ফলে কর্মসংস্থান হয়েছে অনেক পুরুষ ও নারী শ্রমিকের। কেননা কৃষি সেক্টর ছাড়া, তেমন কোনো কাজের সুযোগ নেই এ অঞ্চলে। কৃষি বিভাগ জানায়, কুড়িগ্রামের বিভিন্ন চরাঞ্চলের ৪৫ হাজার হেক্টর জমির মধ্যে ৩৪ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রকার আবাদ করা হয়ে থাকে। কৃষকরা বলছেন, এ বছর বন্যায় ভারত থেকে পানির সঙ্গে কাদাপানি আসার ফলে তিস্তা নদীর বালু মাটিতে পলি জমেছে। ফলে এসব জমিতে বিভিন্ন আবাদ ভালো হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন তারা। কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ হাজার হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত সাড়ে ৫০০ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ ও ১৫০ হেক্টর জমিতে মিষ্টিকুমড়ার আবাদ অর্জিত হয়েছে। তবে এখনো পেঁয়াজ ও রসুনের পরিসংখ্যান হাতে পায়নি কৃষি বিভাগ। উলিপুর উপজেলার দলদলিয়া ইউনিয়নের চাপড়ার পাড় এলাকার কৃষক জিয়াউর রহমান বলেন, আমার তিস্তার চরে এক একর জমি আছে। সেই জমিতে প্রতিবছর বিভিন্ন আবাদ করেই চলি। চরের এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষে সব মিলিয়ে খরচ হয় প্রায় ১৫-২০ হাজার টাকা। আর এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজ উৎপাদন হবে ৩০-৩৫ মণ। আমাদের এখানকার অনেকে চরে বিভিন্ন আবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। জানা গেছে, তিস্তা নদীটি নীলফামারী সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে লালমনিরহাট হয়ে কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট, উলিপুর ও চিলমারী উপজেলা হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে মিলিত হয়েছে। দেশের অভ্যন্তরে ১১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এ নদীটি কুড়িগ্রাম অংশে পড়েছে ৪০ কিলোমিটার। তিস্তার চরে কাজ করতে আসা আলেয়া বেগম বলেন, সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত কাজ করলে মজুরি পাই ২০০ টাকা। পুরুষরা পান ৪০০ টাকা। মজুরিটা একটু বেশি হলে ভালো হতো। তারপরেও নিয়মিত কাজ থাকার কারণে সংসারে একটু অভাব কমেছে। এইরকম কাজ সারা বছর থাকলে, আমার মতো পরিবারগুলোর অনেক ভালো হতো। ঘোড়ার গাড়ি চালক রহিম মিয়া বলেন, পুরোদমে কাজ চলছে তিস্তার চরে। জমিতে আমরা বিভিন্ন মালামাল পরিবহণ করছি। সেখানে তো অন্য কোনো গাড়ি যায় না। তাই ঘোড়ার গাড়ি ভরসা। আমার কাজেরও ব্যস্ততা বেরেছে। নিয়মিত এমন কাজ থাকলে, আয়টা ভালো হয়। কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত বলেন, আমাদের কৃষকরা শীতকালীন আলু, সরিষা, পেঁয়াজ, রসুন ও মিষ্টিকুমড়া রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এদিকে আগাম অনেক শাকসবজিও পাওয়া যায়। যেহেতু কৃষকরা দাম ভালো পায়, তাই একটু বেশি পরিসরে আবাদে করার জন্য উৎসাহী হচ্ছেন। আমরা তাদের সবসময় পরামর্শ দিয়ে আসছি।