মৌ বাক্স দিয়ে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত সাতক্ষীরার মৌ চাষিরা

প্রকাশ : ১৬ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

আধুনিক পদ্ধতিতে ভ্রাম্যমাণ মৌ খামারে আহরণ হচ্ছে কোটি কোটি টাকার মধু। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও উৎপাদিত এ মধু রপ্তানি করা যেতে পারে বলে আশাবাদী এ অঞ্চলের মৌ চাষিরা। অন্যদিকে মধু অধিক লাভজনক হওয়ায় জেলায় ভ্রাম্যমাণ মৌ খামারের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটার কাশিপুর আমবাগানে মৌ বাক্স স্থাপন করে মৌমাছির মাধ্যমে সরিষা থেকে শুরু করে বরইসহ বিভিন্ন ফসলের ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করছে মৌ চাষি আলতাফ হোসেন। তিনি ভ্রাম্যমাণ মধুবক্স স্থাপন করে মৌসুমে প্রায় ৫ লক্ষাধিক টাকা আয় করছেন। এসব খামারিকে আধুনিক পদ্ধতিতে মধু উৎপাদনের ওপর বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। ভ্রাম্যমাণ মৌ চাষ অত্যন্ত লাভজনক একটি শিল্প। শ্যামনগর উপজেলার শ্রীফলাকাটি গ্রামের আসলাম হোসেনের ছেলে আলতাফ হোসেন জানান, ১০ বছর আগে শুরু করেন মধু চাষ। জেলাসহ জেলার বাইরের বিভিন্ন জায়গায় বাগান নিয়ে গ্রামের পাশে চাষ করেন তিনি। বর্তমান পাটকেলঘাটা উপজেলার কাশিপুর এলাকায় একটি আম বাগানে ১৫০টি মৌ বক্স স্থাপন করে মধু সংগ্রহ করছেন তিনি। এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পরিচর্যা ও মৌমাছি দেখশোনার জন্য টং তৈরি করে সেখানে রাত্রিযাপনসহ খাওয়া-দাওয়া করেন তিনি নিজেই। এই চাষ দেখাশোনা করার জন্য দুইজন কর্মচারীও রেখেছেন আলতাফ হোসেন। আসন্ন শীত মৌসুমের শুরু থেকে ছয় মাস মধু সংগ্রহ করা হবে এ বাক্স থেকে। প্রতিটি মৌ বাক্সের মধ্যে একটি করে রানি মৌমাছির সাথে রয়েছে হাজার হাজার মৌমাছি। মৌমাছিগুলো প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে গিয়ে মধু সংগ্রহ করে আনতে পারে। ভরা মৌসুমে সপ্তাহে একটি মৌ-বাক্স থেকে তিন থেকে চার বারে ২ কেজি পর্যন্ত মধু পাওয়া যায় প্রতিবারের ৫ থেকে সাড়ে ৫ মন মধু পাওয়া যায়। তিনি ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে মধু পাইকারি বিক্রি করছেন। সরিষা, ধনে, কালোজিরা, লিচু, বরই ফুলসহ বিভিন্ন ফুল থেকে মৌমাছির সংগ্রহকৃত মধু আহরণ করে থাকেন তিনি। মৌ চাষি আলতাফ হোসেন বলেন, আমাদের সাতক্ষীরায় অনেকগুলো ভ্রাম্যমাণ মধুর খেত রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এ চাষ পদ্ধতি লক্ষ্য করে একসময় এসে নিজেই আমবাগান নিয়ে চাষ শুরু করি। প্রথম দিকে মৌসুম শেষে খুব বেশি লাভের মুখ দেখতে পাইনি। তবে বছর গড়াতেই আস্তে আস্তে বেশ লাভবান হচ্ছি। আমি নিজে উদ্যোগ নিয়ে এ কাজ করতে নেমেছি। তবে সরকারি বা বেসরকারিভাবে কোনো সহযোগিতা পেলে আরো বড় পরিসরে চাষ করতে পারব। বর্তমানে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মধু ৫০০ টাকা থেকে হাজার টাকায় বিক্রি করছি। সাতক্ষীরার তালা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ হাজিরা খাতুন জানান, উপজেলায় নির্দিষ্ট করে কোনো চাষি মধুচাষ করেন না। তবে উপজেলার বাইরে থেকে এসে অনেকে মধুচাষ শুরু করেছেন। সাতক্ষীরা জেলা মধু খামার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোসারাফ হোসেন জানান, সরিষা খেতের পাশে বাক্স পদ্ধতিতে সরিষা ফুলের মধু আহরণ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। দুই শতাধিক মধু উৎপাদনকারী (প্রতিষ্ঠান) খামারি এ বছর সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকায় সরিষা ফুলের মধু আহরণ করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এসব খামারে বহু মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। তিনি আরো জানান, মধু চাষিদের সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা দেওয়া হলে এই সেক্টরও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে আরো বেশি ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন মধু খামার মালিকরা। সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, সরিষা ফুল থেকে যখন মৌমাছি মধু আহরণ করে তখন পরাগায়নের সৃষ্টি হয়। যার ফলে সরিষার ফলন ২৫ থেকে ৩০ ভাগ বেশি উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।