ঢাকা ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

স্বাদে অনন্য পলাশের পানতোয়া

স্বাদে অনন্য পলাশের পানতোয়া

ছয় দশকেরও বেশি সময় ধরে মিষ্টির ব্যবসা করে আসছে মানিকগঞ্জ জেলা শহরের ঘোষ পরিবার। বাবার পেশাকে এখনো ধরে রেখেছেন স্বপন কুমার ঘোষ। মানিকগঞ্জ শহর বাজারের লক্ষ্মীমণ্ডপ এলাকায় পলাশ মিষ্টান্ন ভাণ্ডার নামে দোকানে পাওয়া যায় বিশেষ ধরনের সুস্বাদু এই নরম পানতোয়া মিষ্টি। দোকানের পেছনেই তৈরি করা হয় এই মিষ্টি। বিশেষ এই মিষ্টিটি পরিচিতি পেয়েছে ‘পলাশের পানতোয়া’ নামে। স্থানীয়দের কাছে এই মিষ্টি খুবই প্রিয়। শুধু জেলাজুড়েই নয়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ভোজনরসিকদের কাছেও স্বাদে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে এই পানতোয়া। প্রথমে দুধ থেকে ছানা তৈরি করা হয়। এরপর সেই ছানা ঘি দিয়ে ভেজে চিনির রসে ডুবিয়ে তৈরি করা হয় পানতোয়া মিষ্টি। পূর্বপুরুষদের মিষ্টির দোকানটি এখনো ধরে রেখেছেন স্বপন। প্রায় দুই যুগ ধরে তিনি বিশেষ এই পানতোয়া মিষ্টি তৈরি করে আসছেন। ধরে রেখেছেন মিষ্টির মান। সরেজমিন পলাশ মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে পুড়ি, সিঙারা, সমুচা এবং মিষ্টি বেচাকেনায় কর্মচারীদের ব্যস্ততা দেখা গেছে। কর্মচারীদের সঙ্গে দোকান মালিক স্বপন ঘোষও বসে নেই, বেচাকেনায় কর্মচারীদের সঙ্গে তিনিও সহযোগিতা করছেন। কাজের ফাঁকে আলাপ হয় তার সঙ্গে। এ সময় তিনি জানান, মিষ্টি তৈরি তাদের আদি পেশা। তার বাড়ি পৌরসভার পূর্ব-দশড়া এলাকায়। জানা গেছে, স্বপন ঘোষের বাবা বুদ্ধমন্ত ঘোষ ১৯৬০ সাল থেকে মিষ্টির ব্যবসা শুরু করেন। বাবার মৃত্যুর পর তার ভাই কালীপদ ঘোষ ও স্বপন ঘোষ সেই মিষ্টির ব্যবসায় যুক্ত হন। তখন কালীপদ ঘোষের ছেলের (স্বপনের ভাতিজা) পলাশ ঘোষের নামেই দোকানের নামকরণ করা হয় ‘পলাশ মিষ্টান্ন ভাণ্ডার’। দুই ভাইয়ের মিষ্টির ব্যবসায় বেশ ভালোই চলছিল। তবে পরবর্তীতে কালীপদ ঘোষ পাশেই আরেকটি দোকান নিয়ে মিষ্টির ব্যবসা শুরু করেন। বর্তমানে পালাশ মিষ্টান্ন ভাণ্ডার স্বপন ঘোষই পরিচালনা করেন। বিশেষভাবে তৈরি করা পানতোয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে স্বপন ঘোষ বলেন, আমি ১৯৮৯ সালে মেট্রিক (এসএসসি) পরীক্ষা দিয়ে স্বজনদের সঙ্গে ভারতের কলকাতায় বেড়াতে যাই। সেখানে কালীপূজায় বিশেষ ধরনের মিষ্টি পানতোয়া দেখে লোভ সামলাতে পারিনি। দোকানে বসে সেই মিষ্টি খেয়ে এক ধরনের বিশেষ স্বাদ উপভোগ করি। এরপর ২০০০ সালের শুরুর দিকে আমি পানতোয়া তৈরি শুরু করি। মিষ্টির স্বাদ ও ঘ্রাণের কারণে অল্প সময়ের মধ্যেই ক্রেতা ও চাহিদা দুটোই বাড়তে থাকে। জেলাজুড়ে আমার দোকানের তৈরি পানতোয়ার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। তখন থেকেই জেলা শহরের লোকজনের মুখে মুখে ‘পলাশের পানতোয়া’র সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। জেলা শহরের বাসিন্দা তারিকুল হাসানসহ বেশ কয়েকজন দোকানে বসে পানতোয়া খাচ্ছিলেন। তারিকুল হাসান বলেন, মাঝে-মধ্যেই দাদার দোকানে পানতোয়া খাওয়ার জন্য আসি। এই দোকানের পানতোয়ার স্বাদ ও মান ভালো। স্কুলে লেখাপড়ার সময় যে স্বাদ পেতাম, এখনো পানতোয়ার স্বাদ তেমনি আছে। জেলা ক্যাবের সভাপতি গোলাম ছারোয়ার বলেন, প্রতিবেশী দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বেশ কয়েক জায়গায় বিশেষ এই পানতোয়া মিষ্টি তৈরি করা হয়। আমাদের দেশেও কয়েকটি স্থানে এই মিষ্টি তৈরি হয়। তবে ‘পলাশের পানতোয়া’ স্বাদে ও মানে ভালো হওয়ায় জেলার বাহিরের অনেকে এই পানতোয়া কিনতে চলে আসেন। আমিও মাঝে মধ্যেই এই পানতোয়া খাই। আর পানতোয়া মিষ্টি তৈরির কারিগররা দীর্ঘ দিন ধরে স্বাদ ও মান ধরে রেখেছেন বলেই এখনো ‘পলাশের পানতোয়া’ মিষ্টির চাহিদা অনেক।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত