কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে ইঞ্জিনচালিত নৌকা

প্রকাশ : ১৬ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

এখন আর আগের মতো খালে বিলে পানি না হওয়ায় ও স্থল পথে যোগাযোগব্যবস্থা ভালো হওয়ায় কালের বিবর্তনে এসব ইঞ্জিনচালিত নৌকার ব্যবহার প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এখন গ্রাম অঞ্চলে খালে বিলে ইঞ্জিনের নৌকায় করে মালামাল পরিবহন করতে খুব একটা দেখা যায় না। একসময় গ্রাম অঞ্চলে মানুষ ইট, বালু, পাট, ধান, গম কেনাবেচা করতে পরিবহনের জন্য বর্ষা মৌসুমকে সামনে রেখে প্রস্তুতি নিত। বর্ষায় যখন খালে বিলে পনি থই থই করত তখনই মানুষ ইটের ভাটা থেকে ইট ও বিভিন্ন বালু মহাল থেকে বালু ইঞ্জিনের নৌকায় করে আনতেন। এ ছাড়া হাটবাজারে থেকে ক্রয় বিক্রয়কৃত কৃষিপণ্য হাটবাজারে আনা নেওয়ার ক্ষেত্রেও পাইকারদের ইঞ্জিনের নৌকাই ছিল একমাত্র ভরসা। সম্প্রতি কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার দুলালপুর পূর্বপাড়া এলাকায় চোখে পড়ে ইটবোঝাই একটি ইঞ্জিনের নৌকা থেকে কয়েকজন শ্রমিকের ইট নামানো দৃশ্য। তারা বলেন, আমরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার একটি ইটের ভাটা থেকে এই এলাকায় ইট নিয়ে এসেছি। তিন হাজার ইট নৌকা থেকে নামানো হয়েছে। আরো তিন হাজার ইট নৌকাতে আছে। সব ইট নামানো হলে আমরা আবার ওই ইটের ভাটায় ফিরে যাব। ইটের ক্রেতা ওসমান গণি বলেন, আমরা ছোটবেলায় আমাদের এলাকার বিভিন্ন লোকজনকে দেখেছি বর্ষা মৌসুমে ইঞ্জিনের নৌকায় করে ইট বালু আনত। আমার বাবাও আমাদের ঘর নির্মাণের সময় এসব নৌকা দিয়ে ইট, বালু, রড, সিমেন্ট ও কাঠ সংগ্রহ করেছিলেন। আমি আমার বাড়ি নির্মাণের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের একটি ইটের ভাটা থেকে ইট ক্রয় করেছি। এসব ইট সেখান থেকে এই ইঞ্জিনের নৌকায় করে আমার বাড়ি পর্যন্ত আনা হয়েছে। এ নৌকাতে একবার ছয় হাজার ইটবোঝাই করে আনা হয়েছে, যা পিকআপ ভ্যানে করে আনা সম্ভব হতো না। এতে আমার একদিকে পরিবহন খরচ অনেক কম লেগেছে এবং সময়ও বেঁচে গেছে। আমার প্রতি হাজার ইট ১৫ হাজার টাকা করে কেনা ও বাড়িতে পৌঁছানো পর্যন্ত ১৬ হাজার টাকা খরচ পড়েছে। আমার ৩০ হাজার ইট এই ইঞ্জিনের নৌকায় করেই ইটের ভাটার মালিক বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছেন। দুলালপুর বাজারের ব্যবসায়ী মফিজুল ইসলাম বলেন, আমরা যখন নৌকায় করে মালামাল আনা নেওয়া করতাম তখন আমাদের পরিবহন খরচ কম লাগত লাভ বেশি হতো। এখন পিকআপ ভ্যানে করে দোকানের মালামাল পরিবহনের কারণে খরচ বেশি হয়। এতে অনেক সময় লোকসান গুনতে হয়। ধান, গম ও পাট ব্যবসায়ী শাহ আলম বলেন, আমরা এলাকার কৃষকদের কাছ থেকে পাট, ধান, গম কিনে তা সংরক্ষণ করে রাখতাম। বর্ষাকালে তা ইঞ্জিনের নৌকায় করে বড় বড় পাইকারদের কাছে নিয়ে বিক্রি করতাম। এখন কালের বিবর্তনে নৌকার প্রচলন নেই বললেই চলে। তাই ট্রাক্টর ও পিকআপ ভ্যানে করে এগুলো পরিবহন করা হয়।