ঢাকা ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ঝুঁকিপূর্ণ প্রাথমিক ভবনে পাঠদান

আতঙ্কে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা
ঝুঁকিপূর্ণ প্রাথমিক ভবনে পাঠদান

জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার আলমপুর ইউনিয়নের ধামশুন্ডা শিবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে পাঠদান। এতে আতঙ্কে আছে ওই স্কুলের শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ধামশুন্ডা শিবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়।

সরকারি করণ করা হয় ১৯৮৫ সালে। বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৭৯ জন। এর মধ্যে ছাত্রী ১০৯ জন এবং ছাত্র ৭০ জন। প্রধান শিক্ষকসহ শিক্ষক আছেন ৫ জন। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার ধামশুন্ডা শিবপুর গ্রামের ভেতরে এক বিশাল পুকুরের পাড় ঘেঁষে অবস্থিত ওই বিদ্যালয়টি ভবনের বাইরে চকচক করলেও কোথাও কোথাও দেয়ালের রঙের প্রলেপ উঠে গেছে অনেক আগেই। প্রায়ই খসে পড়ে পলেস্তারা, বেরিয়ে গেছে ছাদের জরাজীর্ণ রডও। শ্রেণিকক্ষের মেঝের কোথাও কোথাও উঠে গেছে ঢালাই। ফাটল দেখা গিয়েছে ভবনের দেয়াল, ছাদ, পিলার ও বিমে। সেগুলোতে আবার দেওয়া হয়েছে শান্তনার পলেস্তারা। কিন্তু কোনো উপায় না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। বিদ্যালয় চত্বরের পশ্চিম দিকে একটিমাত্র ভবনই গ্রামের সড়কঘেঁষা। ভবনটির চার কক্ষের মধ্যে তিনটিতে চলে পাঠদান। বাকি একটি কক্ষে বসেন প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকরা।

শিক্ষার্থীদের সংখ্যার তুলনায় ক্লাসরুম অর্ধেক এবং রুমগুলো যথেষ্ট সংকীর্ণ। যার জন্য দুই শিফটে পাঠদান করতে হয়, যা শিক্ষকদেরও মানসিক চাপ বাড়িয়ে দেয়। বিদ্যালয়টি ঘুরে আরো দেখা গেছে, ছাত্রছাত্রীদের জন্য নেই কোনো ওয়াশরুম, একটিমাত্র পায়খানা সেটিও মূল ভবন থেকে অনেক দূরে পুকুরের পাড়ে অবস্থিত। আবার সেখানে যাওয়ার ভালো রাস্তাও নেই। যে কারণে শিক্ষার্থীরা সেখানে যেতে ভয় পায়। প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের একমাত্র ব্যবহৃত পায়খানাটি অনেক সময় বাধ্য হয়েই শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করতে দিতে হয়।

বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাস্তুরা তাসনিম বলেন, ক্লাস চলাকালীন সময়ে মাঝেমধ্যে আমাদের ওপর ছাদের পালেস্তারা খুলে পড়ে। এই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী পাঠিয়ে আতঙ্কে থাকেন অভিভাবকরা। আব্দুল করিম নামের এক অভিভাবক বলেন, ওই বিদ্যালয়ে আমার দুই সন্তানই পড়াশোনা করে। বিদ্যালয়ের ভবন এমন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সন্তানদের পড়তে পাঠিয়ে আতঙ্কে থাকি। দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও বিদ্যালয়ের নতুন ভবন করা হচ্ছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে সন্তানকে অন্য বিদ্যালয়ে বদলি করা ছাড়া উপায় থাকবে না। ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় শিক্ষার্থীদের নিয়ে অভিভাবকদের মতো শিক্ষকেরাও উদ্বিগ্ন। তবে কোনো বিকল্প নেই তাদের। বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নাজিম উদ্দিন বলেন, একদিকে শ্রেণিকক্ষের স্বল্পতার জন্য শিক্ষার্থীদের গাদাগাদি করে বসতে হয়। যার জন্য পাঠদান ব্যাহত হয়।

অন্যদিকে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। পাঠদানের সময় প্রায়ই বাচ্চাদের সামনেই পলেস্তারা খুলে পড়ে। এতে বাচ্চারা ভয় পেয়ে যায়। আবার ভবনে বাচ্চাদের জন্য কোনো ওয়াশরুম না থাকায় বাচ্চারা অনেক সময় ক্লাসরুমেই নোংরা করে ফেলে। প্রধান শিক্ষক তোজাম্মেল হোসেন তালুকদার বলেন, বিদ্যালয়ের ভবন কয়েক বছর ধরে জরাজীর্ণ অবস্থায় পরিণত হয়েছে। ভবনটির ছাদের পলেস্তারা প্রায়ই শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওপর খুলে পড়ে। বিকল্প উপায় না থাকায় বাধ্য হয়েই শিক্ষার্থীদের এ ভবনে পাঠদান করা হচ্ছে।

নতুন ভবন প্রাপ্তির জন্য বারবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর লিখিত দিয়েছি। বিদ্যালয়টির বিষয়ে ক্ষেতলাল উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক একটি লিখিত দিয়েছে। ওটা আমরা আমলে নিয়েছি। শিক্ষা কমিটির রেজুলেশন নিয়ে পাঠিয়ে দেব। নতুন যেসব ভবন হবে, সেগুলোর মধ্যে ওটাও থাকবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত