ঢাকা ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বেনাপোল বন্দরে যত্রতত্র পড়ে আছে কেমিক্যাল বর্জ্য

বেনাপোল বন্দরে যত্রতত্র পড়ে আছে কেমিক্যাল বর্জ্য

দেশের বৃহত্তর স্থলবন্দর বেনাপোলে দীর্ঘদিন ধরে যত্রতত্র পড়ে রয়েছে কেমিক্যাল বর্জ্য। অগ্নিকাণ্ডে গত কয়েক বছরের সৃষ্টি এ বর্জ্য অপসারণের কোনো উদ্যোগ এখনো নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ফলে স্থান সংকটে বন্দর ব্যবহারকারী ও আশপাশের মানুষ স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। বর্তমানে বন্দরের টিটিআই ও টিটিপি মাঠ ও বন্দরের তিন নম্বর গেটসহ বিভিন্ন স্থানে কয়েক হাজার মেট্রিক টন কেমিক্যাল বর্জ্যে ভরে আছে। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, দ্রুত যাতে বর্জ্য অপসারণ হয়, তার চেষ্টা চলছে। জানা গেছে, দেশে শিল্প কারখানায় ব্যবহৃত যেসব কেমিক্যাল জাতীয় কাঁচামাল ভারত থেকে আমদানি হয়, তার ৭০ শতাংশ বেনাপোল বন্দর দিয়ে আসে। এসব পণ্যের মধ্যে রাসায়নিক ও কেমিক্যাল জাতীয় দ্রব্য রয়েছে। কিছু কিছু রাসায়নিক পণ্য এতো বিপদজনক যে ট্রাকে বা গোডাউনে থাকা অবস্থায় তেজস্ক্রিয় হয়ে আগুন ধরে যায়। গত ১০ বছরে বেনাপোল বন্দরে এ ধরনের ছোট বড় ৭টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এসব অগ্নিকাণ্ডে সৃষ্টি হয়েছে কয়েক হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য। এসব বর্জ্য নিরাপদ জায়গায় না সরিয়ে বছরের পর বছর বন্দর অভ্যন্তরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এতে মারাত্মকভাবে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। বৃষ্টি হলেই এসব বর্জ্য গলিত পানি জনবসতি এলাকায় প্রবেশ করে পুকুরের পানি দূষিত করছে। কেমিক্যাল ধুলা-বাতাসে মিশে আক্রান্ত করছে বন্দর ব্যবহারকারীদের। এসব বর্জ্য অপসারণে বিভিন্ন সময় ব্যবসায়ী নেতারা কর্তৃপক্ষকে অবগত করলেও নানা অযুহাতে এতদিনে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। ব্যবসায়ীরা জানান, ২০২২ সালের ১৫ এপ্রিল বন্দরে ৩১ নাম্বার ইয়ার্ডে আগুনে ৫টি ভারতীয় ট্রাক ও মেশিনারিজ পণ্য ও ২০২১ সালের ৭ জুন সন্ধ্যায় বন্দরের ৩৫ নম্বর পণ্যাগারের সামনে মহাসড়কের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রাকে অগ্নিকাণ্ডে মালামালসহ একটি ট্রাক সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। বন্দর সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৬ সালে বন্দরের ১০ নম্বরসহ ১০টি পণ্যাগারে আগুনে পুড়ে ৩০০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়। ২০০১ সালে ২৬ নম্বর পণ্যাগারে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতি হয় ৩০ কোটি টাকার। ২০০৫ সালে ১০ ও ৩৫ নম্বর পণ্যাগারে আগুনের ঘটনায় ক্ষতি হয় ৭০ কোটি টাকা। ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারিতে ৩৫ নম্বর পণ্যাগারে আগুনে ক্ষতি হয় প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। একই বছরের ২২ জুন ২৭ নম্বর পণ্যাগারে আগুনে ক্ষতি হয় ১৫০ কোটি। ২০১৬ সালে ২ অক্টোবরে ২৩ নম্বর পণ্যাগারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় আনুমানিক ৫০০ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের ৬ জুন বন্দরের ২৫ নম্বর শেডে আগুন ধরে এক ট্রাক পণ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভারতীয় ট্রাক টার্মিনালে এ ঘটনায় প্রায় ১০ কোটি টাকার পণ্য পুড়ে যায়। ২০১৯ সালের ২৭ আগস্ট বন্দরের ৩৫ নম্বর শেডে অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ৫০ কোটি টাকার পণ্য পুড়ে যায় এবং সর্বশেষ গত ৭ জুন বেনাপোল বন্দরের ৩৫ নম্বর পণ্যাগারের সামনে মহাসড়কের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা ভারতীয় ব্লিচিং পাউডারবাহী ট্রাকে আগুন লেগে প্রায় ৫০ লাখ টাকার ক্ষতি হয় ব্যবসায়ীদের। এছাড়া ছোটখাটো আরও ৫/৬টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে এ সময়ে। বন্দর ব্যবহারকারী সিঅ্যান্ডএফ স্টাফ স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি সাজেদুর রহমান জানান, বন্দরে আমদানি পণ্যের আগুনো পোড়া বর্জ্য স্তুপ পড়ে থাকায় পণ্য খালাসে দুর্ভোগ ও জায়গা সংকট তৈরি হচ্ছে। বারবার বন্দর কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করা হলেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। বন্দরের পার্শ্ববর্তী বসতি আশাদুজ্জামান আশা জানান, কেমিক্যাল বর্জ্য বৃষ্টির সময় এলাকায় প্রবেশ করে পানি দূষিত হচ্ছে। এতে গ্রামবাসী নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। বেনাপোল ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক (রসায়ন) প্রদীপ কুমার সরকার বলেন, কেমিক্যাল বর্জ্য বাতাসে মিশে বিষক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এতে চুলকানিসহ স্কিন ক্যানসার হতে পারে। বেনাপোল বন্দরের পরিচালক ট্রাফিক (অতিরিক্ত দায়িত্বে) রেজাউল করিম কেমিক্যাল বর্জ্য বন্দরে জায়গা সংকটের বিষয়টি স্বীকার করে জানান, আইনগত জটিলতার কারণে অগ্নিকাণ্ডের সৃষ্টি বর্জ্য সব সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে দ্রুত অপসারণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে কাস্টমসকে চিঠি দিয়ে পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত