অভয়নগরে কারেন্ট পোকায় ধানের সর্বনাশ

পাঁচ হেক্টর জমির ধান আক্রান্ত

প্রকাশ : ১৮ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  অভয়নগর (যশোর) প্রতিনিধি

যশোরের অভয়নগর উপজেলা ও নওয়াপাড়া পৌর এলাকার আমন ধানগাছে বাদামি গাছ ফড়িংয়ের আক্রমণে চাষিদের প্রায় পাঁচ হেক্টর জমির ধানগাছ আক্রান্ত। জানা গেছে, পোকাটির আক্ষরিক নাম বাদামি গাছ ফড়িং। কৃষকের ভাষায় ‘ধানের কারেন্ট পোকা’। বিদ্যুতের মতো স্পর্শ করলেই সর্বনাশ, এমন ধারণা থেকেই পোকাটির নাম হয়েছে ‘কারেন্ট পোকা’। দেখতে প্রায় উকুনের মতো। পোকাটি প্রথমে ধানগাছের নিচের অংশে অবস্থান করে প্রথমে রস চুষে খায়। পরে ধানগাছ লাল বা পোড়া বাদামি রঙের হয়ে যায়। অবশেষে আক্রান্ত ধানগাছ মারা যায়। গত বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সবুজ ধানগাছের মধ্যে লাল বা পোড়া বাদামি রঙের গাছ রয়েছে। পোকা দমনে কৃষকরা কীটনাশক স্প্রে করছে। উপজেলার বাগুটিয়া এলাকার প্রদ্বিপ শীল বলেন, দেড় বিঘা জমিতে আমন ধানের চাষ করেছি। এর মধ্যে বাদামি গাছ ফড়িংয়ের (কারেন্ট পোকা) আক্রমণে ‘২৫ শতক জমির আমন ধানের ক্ষতি হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ২৫ শতক জমিতে কমপক্ষে ১২-১৩ মণ ধান পেতাম। পোকার আক্রমণে সেখানে মাত্র আড়াই মণ ধান পেয়েছি। বর্তমানে কারেন্ট পোকার আক্রমণে আমাদের এলাকার আমন ধানের সর্বনাশ হয়েছে। এ বছর আমন ধানের ফলন ভালো হলেও পোকার আক্রমণের কারণে ধানের অনেক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। পোকা আক্রমণের শিকার উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষক জানান, কারেন্ট পোকার আক্রমণ থেকে উত্তরণের জন্য কীটনাশক ছড়ানো হয়েছে। তবে যে গাছে পোকা আক্রমণ করেছে, সেগুলো বাঁচানো যাচ্ছে না। যে কারণে এবার ধানের উৎপাদন কম হবে। কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে সচেতনতামূলক লিফলেট ও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাতেও কেনো কাজ হচ্ছে না। ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারি প্রণোদনার আওতায় আনার দাবি জানান ক্ষতিগ্রস্ত আমন চাষিরা। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, এবার অভয়নগর উপজেলা ও নওয়াপাড়া পৌর এলাকার ৭ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ করা হয়েছে। যার মধ্যে মাত্র পাঁচ হেক্টর জমির ধানগাছ ‘কারেন্ট পোকা’ আক্রামণের শিকার হয়েছে। এ ব্যাপারে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লাভলী খাতুনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, মাঝ খানে অতি বৃষ্টির পানি নেমে যাওয়ার পরপরেই কিন্তু কারেন্ট পোকার (বাদামি গাছ ফড়িং) আক্রমণের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে ঘের বা নিচু জমিতে এ পোকার আক্রমণ বেশি হয়ে থাকে। স্থানীয় আমন চাষিদের পরার্মশ দিয়েছিলাম লোগো মেনে চলা। অর্থাৎ ধানগাছ রোপণের সময় দশ লাইন পর পর এক লাইন ছেড়ে দেয়া। কিন্তু কৃষকরা তাদের মতো করেই ধানগাছ রোপণ করেন। কারেন্ট পোকার সম্ভাবনা যখন দেখা দেয় তখনি কৃষকদের সচেতন করা হয়েছে। ইতোপূর্বে পোকার আক্রমণ থেকে আমন ধান রক্ষার জন্য কৃষকদের মাঝে সচেতনতা মূলক ৪ হাজার লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। আক্রান্ত জমিতে বালাই নাশক স্প্রে করাসহ বিভিন্ন পরার্মশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু ‘কৃষকরা না শুনে না বুঝে গাছের উপরের অংশে বালাই নাশক স্প্রে করছেন। অথচ এই পোকা গাছের নিচের অংশে অবস্থান করে। আক্রান্ত ধানগাছের নিচের অংশে কীটনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দেওয়া হলেও তারা তা করছেন না। যাদের ৮০ শতাংশ ধান পেকে গেছে তাদের ধান দ্রুত কেটে ফেলতে বলা হয়েছে। বেশি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করে প্রণোদনার আওতায় অন্তর্ভুক্ত করণের প্রক্রিয়া চলছে।’