ঢাকা ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

নবান্ন উৎসব ঘিরে জমে উঠেছে উথলী হাটের মাছের মেলা

নবান্ন উৎসব ঘিরে জমে উঠেছে উথলী হাটের মাছের মেলা

অগ্রহায়ণ মাস শুরুর সঙ্গে গ্রামবাংলার পরিবেশে ফসল তোলার ধুম পড়ে যায়। নতুন ধান ঘরে তোলে কৃষক। শুরু হয় নবান্ন। কৃষিমুখী মানুষগুলোর মাঝে বইতে থাকে উৎসবের হাওয়া। যান্ত্রিক সময়ে এসব খুব একটা দেখা যায় না। তবু এখনো বহু গ্রামে টিকে আছে নবান্নের রীতি। এমনই ধারাবাহিকতা দেখা মিলে বগুড়ার শিবগঞ্জের উথলী গ্রামে। প্রায় ২০০ বছর ধরে এদিনের জন্য উথলী গ্রামের হাটটিতে নবান্ন উপলক্ষ্যে জমে ওঠে বিশাল মাছের মেলা। পাশাপাশি আলু থেকে শুরু করে শীতের সব ধরনের নতুন সবজি তোলা হয় মেলায়। মেলার ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উথলী, রথবাড়ি, ছোট ও বড় নারায়ণপুর, ধোন্দাকোলা, সাদুল্লাপুর, বেড়াবালা, আকন্দপাড়া, গরীবপুর, দেবিপুর, গুজিয়া, মেদনীপাড়া, বাকশন, রহবল, মোকামতলা, লক্ষ্মীকোলাসহ ২২ গ্রামের মানুষের ঘরে ঘরে এ উৎসবের আয়োজন। প্রতিটি বাড়িতেই মেয়ে-জামাইসহ আত্মীয়-স্বজনদের আগেই নিমন্ত্রণ করা হয়। পুরো হাটের অর্ধেক এলাকাজুড়ে মাছের পসরা নিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। মাছ ব্যবসায়ীরা জানান, মেলায় বোয়াল মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৪০০ টাকা কেজি দরে। একটু বড় সাইজের রুই, কাতলা ও চিতল মাছের দাম হাঁকাচ্ছেন ৪৫০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি। মাঝারিগুলো ৩০০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে। এছাড়া বিগহেড ও সিলভার কার্প মাছ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা দরে। মেলায় কয়েকজন ব্যবসায়ী এনেছেন বাঘাইড় মাছ। দাম চাইছেন প্রতি কেজি ১৪০০ টাকা। নবান্ন উপলক্ষ্যে নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজিতে। মিষ্টি আলু, কেশুরও বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৩০০ টাকায়। এছাড়া মেলায় আছে নানা ধরনের মিষ্টি, দই, জিলাপি, মুড়ি-মুড়কি, খই, মাটির তৈজসপত্র ও খেলনা। শিবগঞ্জের মাছ ব্যবসায়ী প্রদীপ চন্দ্র দাস নাটোরের সিংড়া থেকে এসেছেন। তিনি বলেন, সকাল থেকে প্রায় ৫০ মণ বিভিন্ন ধরনের মাছ বিক্রি করেছি। প্রতিটি মাছ দুই হাজার থেকে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। অপর মাছ বিক্রেতা জয়পুরহাটে মাছ ব্যবসায়ী ফরিদুল ইসলাম জানান, মেলায় ছোট-বড় মিলে শতাধিক মাছের দোকান বসেছে। প্রত্যেক বিক্রেতা ৫ থেকে ১০ মণ করে মাছ বিক্রি করেছেন। উথলী গ্রামের বাসিন্দা বাদশা আকন্দ জানান, এই নবান্নের মেলা আমাদের কাছে ঈদের চেয়েও বেশি আনন্দের। বাড়িতে মেয়ে-জামাই, ভাগ্নি জামাইকে দাওয়াত করা হয়েছে। সব বাড়ির মানুষ তাদের আত্মীয়দের এমন দাওয়াত করে। মেলায় বড় মাছ, তরিতরকারি, বড় বড় মানকচু ওঠে। এগুলোই সবাই কিনে নিয়ে যায়। মেলায় ঘুরতে আসা প্রায় শতবর্ষী নারী মল্লিকা রানী বলেন, আমার বিয়ের পর থেকেই আমি এই মেলা দেখতে আসি। এ মেলার জন্য আমরা আত্মীয়-স্বজনদের দাওয়াত করি। আমাদের বাড়ির জন্য এবার ১০ কেজি ওজনের বাঘাইড় মাছ কিনেছি। জানা যায়, মেলাটি প্রায় ২০০ বছরের পুরাতন। তৎকালীন ব্রিটিশ আমলে জমিদার বুৎসিংহের কাছে স্থানীয়রা দাবি করেন একটি হাট স্থাপনের। প্রজাদের কথা শুনে জমিদার প্রায় ৫২ বিঘা জমি হাটের জন্য দান করেন। সেই থেকে বাংলা বর্ষের পহেলা অগ্রহায়ণে এখানে নবান্ন মেলা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সময় থেকে নবান্নের জন্য নতুন সবজি, মাছ ক্রয় করার রেওয়াজ তৈরি হয়। শিবগঞ্জ উথলি হাটের ইজারাদার মো. বাদশা বলেন, বাংলার ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে প্রতিবছর সুষ্ঠুভাবে নবান্ন উপলক্ষ্যে একদিনের এই মেলা হয়ে আসছে। আগে মেলাটি ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও গত ৩০ বছর ধরে বড় পরিসরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। শুধু আশপাশের গ্রামের নয় পুরো বগুড়া জেলার মানুষ এখানে নবান্নের বাজার করতে আসেন এ মেলায়। আরেক ইজারাদার ওমর ফারুক বলেন, এবার মেলায় দেড় হাজার মণের বেশি মাছ আমদানি হয়েছে। যার আনুমানিক বাজার মূল্য সাড়ে তিন কোটি টাকা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত