কুমিল্লা বিসিক শিল্পনগরী

ভাঙাচোরা রাস্তায় ভোগান্তিতে কারখানার মালিক-শ্রমিক

প্রকাশ : ২০ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নজরুল ইসলাম দুলাল, কুমিল্লা

কুমিল্লার বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) বা কুমিল্লা বিসিক শিল্পনগরী। প্রতিষ্ঠার ৬৩ বছরেও নানা সমস্যায় জর্জরিত এ বিসিক শিল্পনগরীর রাস্তাঘাট ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক। সামান্য বৃষ্টিপাত হলেই সেখানকার রাস্তাগুলো পানিতে তলিয়ে যায়। শিল্প ইউনিটেও পানি প্রবেশ করে। অধিকাংশ সড়ক ভাঙাচোরা ও খানাখন্দে ভরপুর থাকে।

এতে কারখানার মালিক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকদের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করে। এছাড়াও পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকাসহ নানা সংকটে খুঁড়িয়ে চলছে এ শিল্পনগরী। এসব সমস্যার সমাধান না হওয়ায় ক্ষুব্ধ এখানকার কারখানার মালিক ও শিল্প উদ্যোক্তাসহ সংশ্লিষ্টরা। তারা দ্রুত সড়ক ও ড্রেনেজ সমস্যার সমাধানসহ অবকাঠামো উন্নয়নের দাবি জানান। কুমিল্লা বিসিক শিল্পনগরী সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬০ সালে নগরীর অশোকতলা এলাকার ৫৪ দশমিক ৩৫ একর জায়গা নিয়ে ‘কুমিল্লা বিসিক শিল্পনগরী’ গড়ে ওঠে। এখানে ১৪২টি শিল্প প্লটের মধ্যে আটা, অটো রাইস, মুড়ি, ময়দা, বিস্কুট, মিষ্টি, চানাচুর, সরিষা, ওষুধ, জাল, ক্যাবল, সুতা, অ্যালুমিনিয়ামের পাতিল তৈরিসহ বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী উৎপাদনের ১৩১টি কারখানা চালু আছে। এসব কারখানায় প্রায় ৭ হাজার শ্রমিক কাজ করছেন। এখানে বছরে প্রায় ৩৫০ কোটি টাকার পণ্য উৎপাদিত হয় এবং সরকারের রাজস্ব আসে প্রায় ১৮ কোটি টাকা। বিসিকের বিভিন্ন কারখানায় উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী প্রতিদিন শত শত পণ্যবাহী ট্রাক, লরি ও কাভার্ড ভ্যানে করে কুমিল্লার বিভিন্ন এলাকা ছাড়াও দেশের অন্যান্য জেলায় নিয়ে যাওয়া হয়। তবে এখানে কিছু কারখানা রুগ্ণ এবং বন্ধ অবস্থায় রয়েছে।

বিসিকের শিল্প মালিকরা বলেন, সড়ক ও ড্রেনেজ সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। সামান্য বৃষ্টি হলে সড়ক পানিতে তলিয়ে যায়। পানি বেড়ে শিল্পকারখানার ভেতর উঠে যায়। অধিকাংশ পাকা সড়কের পিচঢালাই উঠে কাঁচা সড়কে পরিণত হয়েছে। গর্ত ও ড্রেনে ময়লা-আবর্জনা জমে আছে। তবে বর্ষায় এ দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করে। শিল্পপতি ও মেট্রিক্স ফুডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আলী আকবর বলেন, ‘রাস্তাঘাটের সমস্যার কারণে বিসিকে শিল্পকারখানা করতে অনেক উদ্যোক্তা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। রাস্তা-ঘাট ও ড্রেনেজ সমস্যার বিষয়ে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে, তারা সমস্যা সমাধানে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন।’ কুমিল্লা ফ্লাওয়ার মিলসের কর্মকর্তা সৈয়দ গোলাম কাদের জানান, ‘অধিকাংশ সড়ক এখন চলাচলের অনুপযোগী, হেঁটেও চলাচল করতে কষ্ট হয়। মালামাল নিতে আসা ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানের চালকরা ভোগান্তিতে পড়েন। সড়কের গর্তে পড়ে যানবাহন আটকে যায়।’

পাবন গ্রুপের চেয়ারম্যান সাফায়েত আলম খান ও ফরিদ গ্রুপের কর্মকর্তা মো. জহিরুল হক বলেন, পণ্য সরবরাহ ও কাঁচামাল সংগ্রহের জন্য প্রতিনিয়ত ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু সড়কের বেহাল অবস্থার কারণে খুবই ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। বিসিকের সড়ক ও ড্রেন সংস্কার করে জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবি জানান তারা। কুমিল্লা বিসিক শিল্পনগরী কর্মকর্তা বদিউল আলম জানান, এ শিল্পনগরীতে ১০ হাজার ৭৫০ ফুট সড়ক আছে, এর মধ্যে ৫ হাজার ফুট সড়ক ভাঙাচোরা। ২১ হাজার ৫০০ ফুট ড্রেন আছে, এর মধ্যে ১০ হাজার ফুট ড্রেন খারাপ।

সরকারিভাবে একনেক থেকে পাওয়া প্রায় সাত কোটি টাকা সরকারি বরাদ্দের মাধ্যমে এখানকার পুরোনো ভবন ভাঙা, সড়ক মেরামত ও ড্রেন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। বিসিক কুমিল্লার উপব্যবস্থাপক মো. মুনতাসীর মামুন বলেন, বিসিক শিল্প এলাকাটি নিচু হওয়ায় নগরীর বিভিন্ন এলাকার বৃষ্টির পানি এখানে ঢোকে। অবকাঠামোর উন্নয়নসহ শিল্পমালিকদের অন্যান্য সমস্যা সমাধানের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।