ঢাকা ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

লালমনিরহাটের তিস্তার চরে সস্তায় আবাদ

লালমনিরহাটের তিস্তার চরে সস্তায় আবাদ

লালমনিরহাটের পাঁচটি উপজেলায় তিস্তা নদীতে জেগে ওঠা চরের আয়তন বাড়ছে ক্রমাগত। এতে নদীর পানির ধারণক্ষমতা কমলেও জেলার ২১টি ইউনিয়নের শতাধিক চরে চাষ বেড়েছে ফসলের। চলতি মৌসুমেই আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ২ হাজার হেক্টর বেড়েছে বলে কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। কৃষক ও কৃষি বিভাগ জানায়, চরের জমিতে যে ভুট্টা উৎপাদন হচ্ছে, তা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া চরে আলু, পেঁয়াজ, রসুনসহ প্রায় সব ধরনের শাক, সবজি ও মশলাজাতীয় ফসল উৎপাদিত হচ্ছে। এবার চরগুলোতে ৯০ কোটি টাকার ফসল উৎপাদন হতে পারে বলে ধারণা কৃষি বিভাগের। তবে যোগাযোগব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় ভালো ফসল উৎপাদন হলেও ভালো দাম পান না বলে অভিযোগ চরের কৃষকদের।

সে ক্ষেত্রে গুদাম নির্মাণ ও পরিকল্পিত নদীশাসনের দাবি জানিয়েছেন কৃষকরা। জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, তিস্তা নদীবেষ্টিত এ জেলার ২১টি ইউনিয়ন দহগ্রাম, সানিয়াজান, গড্ডিমারি, সিন্দুর্না, ডাউয়াবাড়ি, পাটিকাপাড়া, ভোটমারি, তুষভান্ডার, কাকিনা, মহিষখোঁচা, খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুন্ডাসহ ২১টি ইউনিয়নের শতাধিক চরের সবই আবাদযোগ্য। চলতি মৌসুমে এসব চরে প্রায় ১১ হাজার হেক্টর জমিতে ফসল উৎপাদন হচ্ছে, গত মৌসুমের চেয়ে যা ২ হাজার হেক্টর বেশি। সম্প্রতি চরাঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, নদীর বুকে চাষ করা হয়েছে ভুট্টা, আলু, ধান, কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন, মিষ্টিকুমড়া, লালশাকসহ নানা ধরনের রবিশস্য। পাশাপাশি প্রস্তুতি চলছে গম, ছোলা, মসুর, সরিষা ও বাদাম চাষের। চরের কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সারা বছরই চরের জমিতে ২০ থেকে ২৫ ধরনের ফসল চাষ করা হয়। বন্যার পর চরের মাটিতে পলি জমে। এ কারণে সার খুব একটা লাগে না। পোকামাকড়েরও আক্রমণ কম। কীটনাশকের ব্যয় তেমন নেই। তাই ফসল উৎপাদনে খরচও কম। গড্ডিমারি ইউনিয়নের কৃষক মনছুর আলী পাঁচ একর জমিতে ভুট্টা, পেঁয়াজ, আলু, মরিচ ও শাকসবজি চাষ করেছেন। তিনি বলেন, বালুচরে যে এত প্রকার আবাদ হচ্ছে তা তাদের ভাগ্য। বন্যায় চরাঞ্চলের মানুষের যে পরিমাণ ক্ষতি হয়, তার কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারছেন এমন আবাদে। মহিষখোঁচা ইউনিয়নের চর বালাপাড়ার কৃষক রাশেদ মিয়া বলেন, যোগাযোগব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় কৃষকরা উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বিশাল চর আর নদী পাড়ি দিয়ে ফসল নিয়ে যেতে হয় হাটে। ফলে উৎপাদন বেশি হলেও ব্যয়ও বৃদ্ধি পায় বাহনে। লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হামিদুর রহমান বলেন ‘আধুনিক প্রযুক্তি ও উন্নত বীজের ছোঁয়ায় বদলে গেছে তিস্তা চরের কৃষি চিত্র। প্রতিবছর উজানের ঢলে ফসলি জমিতে পানি প্রবেশ করে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। তাই এলাকার চাষিদের সরকারি প্রণোদনার আওতায় আনা হচ্ছে। পানি-সহনীয় জাতের ধান চাষে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।’ এ কর্মকর্তা আরো বলেন, বর্তমানে চরে আবাদযোগ্য জমি বৃদ্ধি পেয়েছে। পরিকল্পিত নদীশাসন করে চরের জমি আরো বৃদ্ধি করা সম্ভব।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত