ঢাকা ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সাতক্ষীরার মিঠাপানির শুঁটকি রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে

সাতক্ষীরার মিঠাপানির শুঁটকি রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে

সাতক্ষীরার উপকূলীয় অঞ্চলে সামুদ্রিকের পাশাপাশি উৎপাদন করা হচ্ছে মিঠাপানির শুঁটকি। তিন-চার বছর ধরে এ শুঁটকি উৎপাদন হচ্ছে। এসব শুঁটকি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি হচ্ছে পাশের দেশ ভারতে। এছাড়া উত্তরবঙ্গ ও চট্টগ্রামে রপ্তানি হচ্ছে এ অঞ্চলের শুঁটকি। এখানকার উৎপাদিত শুঁটকি মাছ দেশের চাহিদা মিটিয়ে পাঠানো হচ্ছে বিদেশেও। ফলে একদিকে মাছ চাষিরা যেমন ভালো দাম পাচ্ছে না, অন্যদিকে শুঁটকি উৎপাদন করেও লাভবান হচ্ছেন স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টরা। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বিনেরপোতা এলাকার শুঁটকি উৎপাদনকারী সাধন চন্দ্র রায় জানান, তিনি গত পাঁচ বছর যাবত শুঁটকি মাছ তৈরি করছেন। তিনি সাধারণত সিলভার কার্প, মৃগেল, বাটা, তেলাপিয়া ও পুটি মাছ কিনে এনে বেতনা নদীর ধারে তার খামারে শুকিয়ে থাকেন। তিনি আরও জানান, প্রতি মাসে তিনি প্রায় আট হাজার কেজি শুঁটকি মাছ উৎপাদন করেন। আর এসব শুঁটকি তিনি চট্টগ্রাম ও উত্তরবঙ্গের সৈয়দপুরে সরবরাহ করেন। প্রতি মণ শুঁটকির পাইকারি দর সাধারণত ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা। সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য অফিস জানায়, চলতি বছর জেলার ৭টি উপজেলায় ৬৩ হাজার জলাশয়ে (পুকুর, ঘের, খাল ইত্যাদি) ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে মিঠা পানির মাছ চাষ করা হচ্ছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ৩০ হাজার টন। ২০০ টাকা কেজি দরে যার বাজারমূল্য দুই হাজার ৬০০ কোটি টাকা। জেলা মৎস্য অফিস আরও জানা যায়, কার্প জাতিয় মাছের শুঁটকি উৎপাদনে সাতক্ষীরার অপার সম্ভাবনা রয়েছে। এ জেলায় বছরে বিপুল পরিমাণ মিঠাপানির মাছ উৎপাদন হয়। যা থেকে শুঁটকি উৎপাদন করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করাও সম্ভব। তবে জেলায় কি পরিমাণ শুঁটকি উৎপাদন হয়, তথ্য সংরক্ষণ না থাকায় তা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা সম্ভব হয়নি। তবে শুটকি উৎপাদনের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, আনুমানিক এক হাজার টন শুঁটকি প্রতিবছর সাতক্ষীরায় উৎপাদিত হয়। সাধারণত সিলভার কার্প, বাটা, তেলাপিয়া, পুটি ও মৃগেল মাছের শুঁটকি উৎপন্ন হয় জেলায়। জেলার তালা উপজেলার ত্রিশমাইল এলাকায় শুঁটকি খামার মালিক রমেশ চন্দ্র খাঁ ও শুঁটকি ব্যবসায়ী নৃপেন দাস জানান, দুই বছরের বেশি সময় ধরে তিনি শুঁটকি মাছের আড়ৎ বানিয়েছেন। তিনি প্রতিমাসে ৪ হাজার কেজির মতো শুঁটকি বানিয়ে থাকেন। বিনেরপোতার আরো এক স্থানীয় ভাবে কম দামের ছোট তেলাপিয়া দিয়ে তিনি শুঁটকি তৈরি করেন। পরে এসব শুঁটকি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন পোল্ট্রি ও মাছের ফিড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করেন। তারা আরও জানান, মিঠা পানির মাছে শুঁটকি উৎপাদনে সাতক্ষীরা একটি খুবই সম্ভাবনাময় জেলা সাতক্ষীরা। কারণ এ জেলায় প্রচুর পরিমান বিভিন্ন প্রজাতির মিঠা পানির মাছ উৎপাদিত হয়। এসব মাছ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানী করা সম্ভব। সৈয়দপুরের বৃহৎ শুঁটকি আড়তের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন জানান, প্রতি মৌসুমে সাতক্ষীরা জেলা থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ শুঁটকি মাছ তিনি সংগ্রহ করেন। এসব শুটকি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তিনি সরবরাহ করেন। তিনি আরও জানান, সিলভার কার্প মাছের শুঁটকি আমাদের দেশের লোক খায়। তাই উত্তরাঞ্চলে এই মাছের শুঁটকির চাহিদা বেশি। তেলাপিয়া মাছের শুঁটকি কাঁকড়ার খাবার হিসেবে চাহিদা বেশি। আর পাশের দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে পুটি শুঁটকির চাহিদা রয়েছে। তিনি পশ্চিমবঙ্গে পুটি শুঁটকি রপ্তানি করেন বলে জানান। সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনিছুর রহমান জানান, মিঠাপানির শুঁটকি মাছ উৎপাদনে খুবই সম্ভাবনাময় জেলা সাতক্ষীরা। বছরে প্রায় দুই লাখ টন সাদা মাছ উৎপাদন হয় উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরায়। স্থানীয় আমিষের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহের পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব। তিনি আরও জানান, এ জেলায় শুঁটকি উৎপাদনেও রয়েছে অপার সম্ভাবনা। বছরে একটি সময় ঘেরে ধান চাষ করার জন্য খুবই কম মূল্যে মাছ বিক্রি করেন চাষিরা। এ সময় ওই মাছ সংগ্রহ করে শুঁটকি তৈরি করতে পারলে ব্যাপক লাভবান হতে পারেন চাষি ও ব্যবসায়ী। তবে জেলায় কি পরিমাণ শুঁটকি মাছ উৎপন্ন হয়, তার পরিসংখ্যান জেলা মৎস্য অফিসে নেই বলে জানান তিনি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত