ঢাকা ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

শীতের আগমনে সুদিন ফিরে পেয়েছে বগুড়ার তাঁতিরা

শীতের আগমনে সুদিন ফিরে পেয়েছে বগুড়ার তাঁতিরা

শীতের আগমনে সুদিন ফিরে পেয়েছে বগুড়ার তাঁতিরা। তাদের তৈরিকৃত শীতবস্ত্র শুধু দেশেই নয়, বিদেশের মাটিতেও ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। সারা বছর শীতবস্ত্র তৈরি করলেও শীতের আগমনে ব্যবসা-বাণিজ্যের চাঙাভাব লক্ষ্য করা যায়। জানা যায়, বাংলাদেশের তাঁত শিল্পের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ভূমিকা বগুড়ার তাঁত শিল্পদের। উত্তরবঙ্গেও এই তাঁতি গোষ্ঠী আজও ধরে রেখেছে তাঁত সংস্কৃতি। বগুড়া জেলার দুপচাঁচিয়া, আদমদিঘী, কাহালু সহ বিভিন্ন এলাকায় শীতের আগমনে ব্যস্ত হয়ে পড়ে তাঁতীরা। দিবারাত্র তাঁতের শব্দে মুখরিত হয়ে থাকে গ্রামগুলো। নির্ঘুমভাবে তাঁতীরা কাজ করে থাকে। তাঁত ব্যবসায়ী রেজাউল করিম জানান, অন্য সময়ে ব্যবসার মন্দাভাব হলেও শীত পড়ার সাথে সাথে তাঁত ব্যবসা জমজমাট হয়ে ওঠে। তাঁত কর্মীদের সারা বছরের বেতন ভাতাদির সিংহভাগই পরিশোধ করা হয়ে থাকে শীতকালীন সময়ে। শীত ব্যতীত অলস দিনকাটে তাঁত শ্রমিকদের। এদিকে, তাঁত ব্যবসার মুল উপকরণ (উলেন) সুতা কেনাবেচা হয় বিভিন্ন হাটবাজারে। এ সমস্ত হাটকে ঘিরে প্রায় ২০০টি গ্রামে গড়ে উঠেছে তাঁতি পল্লি। তারাই কম্বল কেন্দ্রিক এ শিল্পের এক বিশাল সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। দূর-দূরান্ত থেকে আসা পাইকারী ব্যবসায়ীদের পদচারনায় সব সময় মুখরিত পথঘাট। বগুড়ায় শত শত ট্রাক, বেবিট্যাক্সি, রিকশাভ্যানের উপস্থিতি দেখা মিলে শীতের আগমনী বার্তায়। তাঁতের খটখট শব্দে আর সুতার বুননে মিশে আছে আশে পাশের গ্রামের মানুষের স্বপ্ন। কারও রয়েছে নিজের তাঁত আবার কেউ শ্রম দিচ্ছে অন্যের তাঁতে। প্রযুক্তির দাপট তারপরেও বগুড়ায় তাঁতীরা আকড়ে ধরে আছে এ শিল্পকে। বিভিন্ন গ্রাম জুড়ে একটানা তাঁতের খটখট শব্দে মুখরিত গ্রামের পরিবেশ আর নারী-পুরুষ সহ নানা পেশার মানুষের কর্মব্যস্ততা। কেউ সুতা ছাড়াচ্ছে আবার কেউ বা চরকা নিয়ে বসে সুতা নলি বা সূচিতে ওঠাচ্ছে কেউ বা সুতা ববিন করছে। প্রতিটি বাড়ির আঙিনায় ও ঘরে বসানো পরিপাটি তাঁত যন্ত্র দিন রাত চলছে। প্রতিটি বাড়িতেই কম করে হলেও একটা আর ২টা থেকে ১০টা পর্যন্ত তাঁত রয়েছে। কোনোটা চাকাওয়ালা আবার কোনোটা একেবারেই বাঁশ কাঠ দিয়ে হাতের তৈরী। বগুড়ায় এ শিল্পকে ঘিরে প্রায় লক্ষাধিক মানুষের বেঁচে থাকার সংগ্রাম চলে। কেউ বংশ পরম্পরায় আবার কেউবা নতুন করে। শীত শুরুর আগেই তাঁতিরা শুরু করে কম্বল তৈরী ও সুতা বোনা ও সুতার তৈরি বড় চাদর কম্বল, বিছানার চাদর থেকে শুরু করে লেডিস চাদর, কম্বল, লুঙ্গি, গামছা, তোয়ালা সহ নানা ধরনের শীত বস্ত্র ও পোশাক। তাঁতশিল্পিদের পর্যাপ্ত মূলধনের জোগান, সুস্থভাবে বাজারজাত করনের সুযোগ এবং ঠিকমতো কাচামাল সরবরাহ করলে এখনও আগের মত জনপ্রিয় আর গৌরবময় করে তোলা যায় এ দেশের তাঁত শিল্পকে। এ দেশের শিল্প সৌন্দর্যের এক ধারাকে বাঁচানো যায় ধ্বংসের হাত থেকে। প্রয়োজন কেবল একটু উদ্যোগ। আর তা পেলেই বেঁচে থাকে এ দেশের তাঁত শিল্প।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত