ঢাকা ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

দিনাজপুরে বেড়েছে সুগন্ধি ধানের চাষ

মোটা চালের চাহিদা পূরণে সংকটের আশঙ্কা

মোটা চালের চাহিদা পূরণে সংকটের আশঙ্কা

চলতি আমন মৌসুমে দিনাজপুরের পার্বতীপুরে ব্যাপকভাবে বেড়েছে সুগন্ধি জাতের ব্রি-ধান ৩৪ ধানের চাষ। তবে ওই অঞ্চলের বেশির ভাগ কৃষকের অভিযোগ, মানুষের প্রধান খাদ্য ভাতের চাহিদাকে উপেক্ষা করে মোটা ধানের পরিবর্তে এই সুগন্ধি ধান চাষাবাদে ঝুঁকে পড়েছেন কৃষকরা, এতে উপজেলার প্রায় ৪ লাখ অধিবাসীর বার্ষিক মোটা চালের চাহিদা পূরণে সংকট সৃষ্টি হয়েছে। তারা বলেছেন, এতে উৎসাহ জোগাচ্ছেন উপজেলা কৃষি অফিস ও স্থানীয় একটি বেসরকারি সাহায্য সংস্থা। এদিকে ব্যবসায়ীরাও বলেছেন, মোটা চালের চাহিদা উপেক্ষা করে চিকন ও সুগন্ধি ধান চাষ করা মানে বাজারে মোটা চালের ঘাটতি সৃষ্টি করা।

তবে কৃষি কর্মকর্তা বলেছেন, এলাকার মানুষের মোটা চালের চাহিদার কথা মাথায় রেখেই অন্যান্য জমিতে সুগন্ধি ধানের চাষ করছেন কৃষক। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গত ৩ বছরের পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, গত ২০২১-২০২২ সালে উপজেলায় আমন চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৮ হাজার ৮৪৫ হেক্টর জমি। এর মধ্যে ১১ হাজার ৩ হাজার ৫৪০ হেক্টর জমিতে সুগন্ধি ধান চাষ হয়েছিল। এর মধ্যে হাইব্রিড জাতের এজেড (৭০০৬) ১২৫ হেক্টর, ধানী গোল্ড ৪১৫ হেক্টর, টিয়া ১২৫ হেক্টর, এসিআই ৫৫ হেক্টর, মোট ৬৬০ হেক্টর জমিতে। উফশী জাত চাষাবাদ হয়েছে বিআর-১১, ১৩২ হেক্টর, ব্রিধান-৪৯, ৯৩ হেক্টর, ব্রিধান-৫১, ৩০৫ হেক্টর, ব্রিধান-৫২, ৬৫ হেক্টর, ব্রিধান-৭১, ৩৫ হেক্টর, ব্রিধান-৭৫, ৬০৫ হেক্টর, ব্রিধান-৮৭, ৯০ হেক্টর, বিনাধান-৭, ৮৩৫ হেক্টর, বিনাধান-১৭, ৬০ হেক্টর, গুটি স্বর্ণা ৮ হাজার ৯৫০ হেক্টর, স্বর্ণা-৫, ৫ হাজার ৪৩০ হেক্টর, সোনামুখী ৪৫ হেক্টর। গত ২০২২-২০২৩ সালে উপজেলায় আমন চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৮ হাজার ৮৮২ হেক্টর জমি। এর মধ্যে ১৪ হাজার ৭৩০ হেক্টর জমিতে সুগন্ধি ধান চাষ হয়েছিল। এর মধ্যে হাইব্রিড জাত হলো ধানী গোল্ড ৩৩৭ হেক্টর, হিরা-২, ৬৫হেক্টর, সিনজেনটা-১২০৫, ৮৫ হেক্টর, এজেড (৭০০৬) ১১৫ হেক্টর, এসিআই-১, ৬০ হেক্টর, টিয়া ৫৮ হেক্টর মোট ৭২০ হেক্টর জমিতে।

উফশী জাত চাষাবাদ হয়েছে বিআর-১১, ১২৫ হেক্টর, ব্রিধান-৪৯, ৭৫ হেক্টর, ব্রিধান-৫১, ২১৮ হেক্টর, ব্রিধান-৭৫, ৪১০ হেক্টর, ব্রিধান-৮৭, ২১২ হেক্টর, ব্রিধান-৯০, ৮০ হেক্টর, ব্রিধান-৯৩, ২০৫ হেক্টর, ব্রিধান-৯৪, ৬০ হেক্টর, বিনাধান-৭, ৩৬৫ হেক্টর, বিনাধান-১৭, ১২০ হেক্টর, গুটি স্বর্ণা ৩ হাজার ৬৮৫ হেক্টর, মামুন স্বর্ণা ৬৫০ হেক্টর, স্বর্ণা-৫, ৭ হাজার ১৬৫ হেক্টর, সোনামুখী ৬২ হেক্টর। চলতি ২০২৩-২০২৪ মৌসুমে উপজেলায় আমন চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৮ হাজার ৮৮২ হেক্টর জমি।

এর মধ্যে ১৪ হাজার ৮১৫ হেক্টর জমিতে ব্রি-ধান ৩৪ জাতের সুগন্ধি ধানের চাষ করা হয়েছে, যা ছিল মোট আমন চাষের জমির শতকরা ৫১ ভাগ। এরমধ্যে হাইব্রিড জাতের ধানী গোল্ড ৩৩৮ হেক্টর, তেজ গোল্ড ১৫৭ হেক্টর, এজেড (৭০০৬) ১২৫ হেক্টর, এসিআই-১, ২৬ হেক্টর, এসিআই-২, ৪২ হেক্টর, টিয়া ৪০ হেক্টর মোট ৭২৮ হেক্টর জমিতে। উফশী জাত চাষাবাদ হয়েছে বিআর-১১, ১৩২ হেক্টর, ব্রিধান-৪৯, ৬৫ হেক্টর, ব্রিধান-৫১, ২১২ হেক্টর, ব্রিধান-৫২, ৪৫ হেক্টর, ব্রিধান-৭৫, ৭৯৮ হেক্টর, ব্রিধান-৮৭, ৩১০ হেক্টর, ব্রিধান-৯০, ২০৩৬ হেক্টর, ব্রিধান-৯৩, ৫৮৫ হেক্টর, ব্রিধান-৯৪, ৭৫ হেক্টর, বিনাধান-৭, ১০৬ হেক্টর, বিনাধান-১৭, ৪৭৫ হেক্টর, গুটি স্বর্ণা ৩ হাজার ৬৬০ হেক্টর, স্বর্ণা-৫, ৪ হাজার ৭৫০ হেক্টর, সোনামূখী ৯০ হেক্টর।

পার্বতীপুরে চাউল আড়তের জোবেদ আলী ও আহম্মেদ আলীসহ একাধিক চাল ব্যবসায়ীরা জানান, সুগন্ধি ও চিকন চাল বিদেশে রপ্তানি হওয়ায় বাজারে রয়েছে প্রচুর চাহিদা। এ অঞ্চলের মানুষের প্রধান খাদ্য মোটা চালের চাহিদা উপেক্ষা করে চিকন ও সুগন্ধি ধান চাষ করা মানে বাজারে মোটা চালের ঘাটতি সৃষ্টি করা।

পার্বতীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রাজিব হুসাইন বলেন, সুগন্ধি জাতের ধানের আবাদ পরিবেশ সম্মত এবং অপেক্ষাকৃত কম উর্বর জমিতে ভালো ফলে।

উৎপাদন খরচও অনেক কম হওয়ায় এ ধান চাষে কৃষকদের আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। এছাড়া এখন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এই ধানের চাষ করে অনেকেই লাভবান হচ্ছেন। তিনি দাবি করেন, এলাকার মানুষের মোটা চালের চাহিদার কথা মাথায় রেখে অন্যান্য জমিতে সুগন্ধি ধানের চাষ করছেন কৃষক।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত