ডুঙ্গায় চড়ে জীবন চলে বিলপাড়ের মানুষের

প্রকাশ : ২৫ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নড়াইল প্রতিনিধি

নড়াইলে বিভিন্ন বিলের পানিতে দাঁড়িয়ে কেউ মাছ ধরছেন, আবার কেউ গবাদি পশুর খাবার, হাঁসের জন্য শামুক অথবা নিজেদের খাবারের জন্য শাপলা সংগ্রহ করছেন। বিলে এরকম ছোটোখাটো কাজের গুরুত্বপূর্ণ বাহন কোষা নৌকা। আঞ্চলিক ভাষায় এগুলো ‘ডুঙ্গা’ নামে পরিচিত। বিল আর খালে পরিপূর্ণ এ জেলার বিভিন্ন এলাকায় তাল গাছের তৈরি ডুঙ্গার ব্যবহার বেশ জনপ্রিয়। বিল পাড়ের হাজারো মানুষের বাহন এই ডুঙ্গা। খালে প্রবেশ করতে, খাল পাড়ি দিয়ে বাজার, বিল থেকে মাছ ধরা ও শাপলা তোলার কাজেও ব্যবহার হয় এই বাহন। এ বছর পানি কম হওয়ায় নৌকার থেকে খালে-বিলে ডুঙ্গার চলাচলই বেশি। নড়াইলের বিলগুলোতে কম পানিতে তাল গাছের তৈরি এসব ডুঙ্গা পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যবহার করেন। হাতিয়াড়া গ্রামের মালতি রানী সকালে বিলে যান মাছ ধরতে। নির্জন এলাকায় দাঁড়িয়ে বড়শি দিয়ে কয়েকটি দেশি পুঁটি আর টাকি মাছ ধরেছেন তিনি।

ফেরার পথে তুলে এনেছেন কলমি শাক, শাপলা আর গরুর জন্য ঘাস। এসব নিয়ে ডুঙ্গা ভর্তি করে বিকেলে বাড়ি ফিরেছেন স্বাচ্ছন্দ্যে। তবে হাটে এসব ডুঙ্গার দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে। নড়াইল-যশোর সড়কে তুলারামপুরের হাটটি ডুঙ্গার একটি বড় হাট। এখানে সপ্তাহের শুক্রবার ও সোমবার হাট বসে। একটি ছোট ডুঙ্গা দুই হাজার আর মাঝারি থেকে বড় ডুঙ্গা ৫-৭ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে তুলারামপুর হাটে ডুঙ্গা কিনতে আসেন কৃষকসহ গৃহস্থ বাড়ির কর্তারা। যশোরের অভয়নগর থেকে ডুঙ্গা কিনতে এসেছেন রকিব মোল্যা। তিনি বড় সাইজের একটি ডুঙ্গা কিনেছেন সাড়ে তিন হাজার টাকায়। জানালেন, ঘেরে মাছের খাবার দিতে এই ডুঙ্গা কাজে লাগে। গতবছরের তুলনায় কম দামে ডুঙ্গা কিনেছেন তিনি। ডুঙ্গা বিক্রেতা চর শালিখা গ্রামের সেলিম মোল্যা বলেন, এ বছর বিলে পানি কম হওয়ায় ডুঙ্গার চাহিদা কম। গতবছর যে ডুঙ্গা বিক্রি করেছি চার হাজারে সেটি এবার দুই থেকে আড়াই হাজার টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। তালগাছ আর শ্রমিকের দামও উঠছে না। একটি তালগাছ থেকে দুটি ডুঙ্গা তৈরি হয়। তালগাছের গোঁড়া মাটির ভেতর থেকে বের করে শিকড়সহ গাছটি কাটা হয়। এরপর গোঁড়ার অংশটি সুচালো করে ৯ হাত রেখে আলাদা করা হয়।

গাছটির মাঝামাঝি অংশ দাগ দিয়ে হাত করাত দিয়ে ধীরে ধীরে এপাশ ওপাশ কেটে দুভাগ করে ফেলা হয়। ভেতরের নরম অংশ কোদাল আর শাবল দিয়ে কুপিয়ে পরিষ্কার করে তৈরি হয় ডুঙ্গা। এরপর হাত বাশলে দিয়ে ধীরে ধীরে কেটে-চেঁছে সুন্দর আকারের ডুঙ্গা তৈরি করে তা বিক্রেতার কাছে বিক্রি করা হয়। লোক সংস্কৃতি গবেষক অধ্যক্ষ রওশন আলী বলেন, দেশীয় প্রযুক্তির এই বাহন লোক সংস্কৃতির অংশ। এলাকায় অধিক সংখ্যক মাছের ঘের হওয়ায় বিলে পানি কমে গিয়ে ধীরে ধীরে ডুঙ্গার ব্যবহার কমছে। খালে ও বিলে পানি প্রবাহ সঠিক রাখতে না পারলে জীব-বৈচিত্র্য ব্যাহত হবে।