ঢাকা ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

যোগাযোগ ব্যবস্থায় উন্নয়নের মডেল বাঞ্ছারামপুর

যোগাযোগ ব্যবস্থায় উন্নয়নের মডেল বাঞ্ছারামপুর

১৯৯৬ সালে বাঞ্ছারামপুরে পাকা রাস্তার অস্তিত্ব ছিল নামমাত্র। গোটা উপজেলায় ৫০ কিলোমিটার। আর এখন পাকা রাস্তা ২৮৫ কিলোমিটার। রাস্তার প্রশস্ততাও বেড়েছে। আগেকার ৮ ফুট রাস্তা বেড়ে হয়েছে ১৬ ফুট-১৮ফুট। ১২ ফুটের নিচে কোনো রাস্তা নেই। আর সেই সময় ফুটব্রিজ ও কালভার্ট ছিলো ৩০০ মিটার। আর এখন প্রায় ৫ হাজার মিটার ব্রিজ। অথচ ’৯৬ সালে ব্রিজ ছিলো কল্পনাতীত। ছোট ছোট কালভার্ট, ফুটব্রিজের সঙ্গেই পরিচিত ছিলেন এখানকার মানুষ। এখন ব্রিজের ছড়াছড়ি। ৭৭১ মিটার, ৫০০ মিটারের দুটি ব্রিজ ছাড়াও একশো মিটারের ওপরে ব্রিজ রয়েছে ৮টি। ১০০ মিটারের নিচে এবং ৫০ মিটারের ওপরে ব্রিজের অভাব নেই। উপজেলা প্রকৌশলী মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, আগের সাথে এখনকার পার্থক্য অনেক। যদি ফুট ওভারব্রিজ বা কালভার্টের কথা বলি সেগুলো দিয়ে রিকশাও চলাচল করতে পারত না। আর রাস্তাগুলোও অনেক প্রশস্ত হয়েছে। অবহেলিত এই বাঞ্ছারামপুর এখন জেলায় উন্নয়নের মডেল। দূর্গম এ উপজেলায় জেলা শহর থেকে যাওয়া-আসার ব্যাপার ছিলো আতকে উঠার মতো। সেকারনে ওই উপজেলা পানিশমেন্ট ট্রান্সফারের জায়গা হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠে জেলার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে। শাস্তিমূলক বদলীর জন্যে বেছে নেয়া হত ওই উপজেলাকে। দিন পেড়িয়ে যেতো বাঞ্ছারামপুর যেতে যেতে। ২০০৬ সালে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অফিস সহকারী ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের উড়শীউড়া গ্রামের মো. হুমায়ুন কবির। তিনি জানান, তখন ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ট্রেনে বা বাসে করে প্রথমে নরসিংদী যেতাম। সেখান থেকে মরিচাকান্দি। মরিচা থেকে রিকশা বা টেম্পু করে বাঞ্ছারামপুর সদর। এই রাস্তাও ছিলো জরাজীর্ন। ভোর ৪টা বা ৫ টায় রওনা হয়ে বাঞ্ছারামপুর পৌঁছতে বেলা সাড়ে ১১টা বেজে যেত। অন্যপথে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে কুমিল্লার দাউদকান্দি হয়ে গৌরিপুর। এরপর হোমনা হয়ে বাঞ্ছারামপুর। তাতে সময় লাগতো ৮ থেকে ১০ ঘন্টা। একদিনে আসা-যাওয়া কল্পনা করা যেতনা। মাসে একবার বাড়িতে আসতাম। এখনো অফিসের কাজে যেতে হয়। তবে সেই সময়ের সাথে এখনকার ফারাক অনেক। জেলার ভেতর দিয়েই এখন সরাসরি যাওয়া-আসা করা যায় বাঞ্ছারামপুর। আড়াই-তিন ঘণ্টায় যেতে পারছি। মোট কথা যোগাযোগ ব্যবস্থার আমুল পরিবর্তন হয়েছে। কড়ুইকান্দি গ্রামের এম মনিরুল ইসলাম বলেন, বাঞ্ছারামপুরে পোষ্টিং হলেও সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এখানে আসতে চাইতেননা। সড়ক ধরে পায়ে হেটে চলা যাবে এমন অবস্থা ছিলো না। চারিদিকে নদী-আর খাল। ২০০১ সালে তিতাস নদীর ওপর বাঞ্ছারামপুর-হোমনা সেতু হয়। এরপর শলফা এবং সলিমগঞ্জে তিতাস নদীর ওপর সেতু হয়। এভাবে তিতাস নদীর ওপর ওয়াই আকৃতির একটি বিশেষ সেতুসহ ১০টি সেতু নির্মিত হয়। উপজেলার ভেতরের যোগাযোগ ব্যবস্থাও ছিলো খুব বাজে। উপজেলা সদরের সাথে ইউনিয়নের, ইউনিয়ন থেকে ইউনিয়নে যাওয়ার কোন কানেকটিভিটি ছিলোনা। নৌকা ছাড়া কোন উপায় ছিলো না। আর এখন পাড়া-মহল্লায় যাওয়ার জন্য রয়েছে পাকা রাস্তা। শতভাগ সড়ক পাকা। সময় পরিক্রমায় সেই বাঞ্ছারামপুরের ওপর দিয়ে এখন ঢাকা-আগরতলা এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট বিকল্প সড়ক যোগাযোগ স্থাপন কাজ অগ্রগামী হচ্ছে। বাঞ্ছারামপুর-আড়াইহাজারের মধ্যে তৃতীয় মেঘনা সেতু নির্মাণ হলেই উন্মোচিত হবে সম্ভাবনার এই নতুন দুয়ার। প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকায় নির্মিত হবে এই সেতু। এরইমধ্যে বাঞ্ছারামপুর-আড়াইহাজার সড়ক নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। ২০১১ সালে ফেরি চলাচল শুরু হয় মেঘনা নদীতে কড়ুইকান্দি-বিশনন্দীর মধ্যে। সেতু নির্মিত হলে এদিক দিয়ে চট্টগ্রাম এবং সিলেটের দূরত্ব কমবে ২৫ থেকে ৩০ কিলোমিটার।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত