দেশি মাছের চরম সংকট

লোকসানে শুঁটকি উৎপাদনকারী চাতাল মালিকরা

প্রকাশ : ২৬ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি

নওগাঁর আত্রাইয়ে নদী-খাল-বিলে দেশি মাছের সংকট থাকায় বেশি দামে মাছ কিনে লোকসানের কবলে পড়েছেন শুঁটকি উৎপাদনকারী চাতাল মালিকরা। তারা বলছেন, অনেকাংশে নিষিদ্ধ চায়না দুয়ারী (রিং জাল), কারেন্ট ও সুতি জাল দিয়ে অবাদে মাছ ধরায় দেশি মাছের এই সংকট দেখা দিয়েছে। এতে একদিকে যেমন বেশ কিছু চাতাল বন্ধ হয়ে পড়েছে, অপর দিকে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা সিকিতে নেমে এসেছে। তবে এখন থেকেই এসব নিষিদ্ধ জাল দিয়ে মাছ ধরা বন্ধ করতে না পারলে আগামী বছর থেকে এ সংকট আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন চাতাল মালিকরা। আত্রাই উপজেলা মৎস্য দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এই উপজেলা একটি নিম্নবর্তি অঞ্চল হিসেবে খ্যাত। উপজেলাজুড়ে চারটি নদী, ২৫টি বিল, ২৩টি প্লাবনভূমি এবং ৩ হাজার ৬৭৬টি সরকারি-বেসরকারি পুকুর রয়েছে। যাহার মোট আয়তন রয়েছে প্রায় ৭হাজার ৮২১ হেক্টর। বিস্তীর্ণ এসব জলাভূমিতে প্রাকৃতিক প্রজনন সুবিধা থাকায় দেশীয় প্রজাতির মাছের উৎপাদন তুলনামূলক অনেক বেশি হয়ে থাকে। ফলে শুঁটকি উৎপাদনে মূল ভূমিকা রাখে এই উপজেলা। উপজেলার নদীর তীরবর্তী এলাকাজুড়ে টেংরা, পুঁটি, টাকি, শোল, চাঁন্দা, চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের শুঁটকি উৎপাদন করে থাকেন চাতাল মালিকরা। এই এলাকার শুঁটকি গুণেমানে এবং স্বাদে ভালো হওয়ায় দেশের বিভিন্ন এলাকাসহ ভারতে রপ্তানি করা হয়ে থাকে। উপজেলাজুড়ে ১৮টি চাতাল রয়েছে শুঁটকি উৎপাদনে। চলতি মৌসুমে এসব চাতাল থেকে ৬১১ মেট্রিক টন শুঁটকি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ভরতেতুলিয়া গ্রামের রিপন আকন্দ জানান, চলতি মৌসুমে তার চাতালে প্রায় ৬০ মেট্রিক টন শুঁটকি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু দেশি মাছের সংকট থাকায় বাজারে মাছ মিলছে না। ফলে লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকও উৎপাদন করা সম্ভব হবে না। তিনি বলছেন, যেটুকু পাওয়া যাচ্ছে তা চড়া দামে কিনতে হচ্ছে। এতে উৎপাদন করে বিক্রিতেই কেজি প্রতি প্রায় ৩০-৪০ টাকা লোকসান হচ্ছে। এ পর্যন্ত প্রায় দেড় লাখ টাকা লোকসান হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। শুঁটকি উৎপাদনকারী ওয়াহেদ প্রামানিক বলেন, মাছের রকম ভেদে তিন কেজি থেকে চার কেজি মাছ কিনে শুঁটকি করলে এক কেজি মেলে। পুঁটি, মওয়া, চাঁন্দা এসব মাছ গত বছর ৬০-৭০ টাকা থেকে ১২০ টাকা প্রতি কেজি পর্যন্ত ক্রয় করেছিলাম। কিন্তু এবার বাজারে মাছের সংকট থাকায় সেই মাছ ৯০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত প্রতি কেজি কিনতে হচ্ছে। এক কেজি মাছের শুঁটকি উৎপাদন করতে গড়ে প্রায় ৪০০ টাকা কেজি খরচ পড়ে যাচ্ছে কিন্তু শুঁটকি উৎপাদন করে ৩৬০ থেকে ৩৭০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। ফলে কেজিপ্রতি ৩০-৪০ টাকা করে লোকসান হচ্ছে। একই রকম কথা বলেছেন শুঁটকি উৎপাদনকারী জুয়েল সরদার। তিনি বলেন, এবার তার ১৫ মেট্রিক টন শুঁটকি উৎপাদন করার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। কিন্তু লোকসানের ভয়ে চাতাল বন্ধ রেখেছেন। ৪০ মেট্রিক টন শুঁটকি উৎপাদন করার কথা ছিল এলাহী প্রামানিকের, ৫ মেট্রিক টন শামীম হোসেন এবং ৩০ মেট্রিক টন শুঁটকি উৎপাদন করার কথা ছিল এরশাদ আলীর। কিন্তু বাজারে মাছের আকাল থাকায় এবং বেশি দামে মাছ কিনে শুঁটকি উৎপাদন করে বিক্রিতে লোকসান হচ্ছে দেখে চাতাল বন্ধ রেখেছেন তারা। চাতাল মালিকরা বলছেন, নদী-খাল-বিলে নিষিদ্ধ জালের এতো ব্যবহার বেশি হয়েছে যে, দেশি মাছের চরম সংকট সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে চায়না দুয়ারী (রিং) জাল দিয়ে মাছ ধরলে মাছের ডিম থেকে শুরু করে সব ধরনের মাছ ধরা পড়ে। ফলে মাছের বংশ বিস্তার করতে পারে না। এখনই মাছের বংশ নিধনকারী চায়না দুয়ারী জাল দিয়ে মাছ ধরা বন্ধ করতে না পারলে আগামী বছর মাছের সংকট চরম আকার ধারণ করবে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। ফলে দেশি মাছের আকালে সবগুলো চাতাল বন্ধ হয়ে যাবে। তাই দ্রুত পদক্ষেপ নিতে।