অযত্ন-অবহেলায় দেশের প্রথম রেলস্টেশনের বেহালদশা

প্রকাশ : ২৭ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

প্রায় ২০০ বছর আগে ব্রিটিশ শাসনামলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ও পণ্য পরিবহণ কাজের জন্য ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে কোম্পানি বাংলাদশে প্রথম রেলস্টেশন স্থাপন করে।

প্রতিষ্ঠানটি ১৮৬২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর কলকাতা থেকে রানাঘাট এবং একই বছরের ১৫ নভেম্বর রানাঘাট থেকে কুষ্টিয়ার জগতি পর্যন্ত রেলপথ চালু করে। প্রতিষ্ঠার পর এই অঞ্চলের মানুষের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে জগতি স্টেশনটি। কিন্তু কালের বিবর্তনে পুরোনো স্টেশনটি আজ তার জৌলুশ হারিয়েছে।

অবহেলা, অযত্ন আর সংস্কারের অভাবে স্টেশনটি পরিত্যক্ত জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এছাড়া স্টেশনের কয়েকশ’ বিঘা জমি অবৈধ দখলে চলে গেছে। এসব দেখভাল করার যেন কেউ নেই। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, কালের বিবর্তনে বাংলাদেশের প্রথম জগতি ট্রেন স্টেশন আজ শুধুই স্মৃতি হয়ে রয়েছে। আগের মতো ট্রেন থামে না, যাত্রীদের উপস্থিতি নেই, কোলাহলপূর্ণ পরিবেশ নেই। সেসব এখন শুধুই স্মৃতি। কর্তৃপক্ষের অযত্ন-অবহেলায় জরাজীর্ণ হয়ে পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। স্টেশনের ওয়েটিং রুম ভেঙে পড়েছে। প্লাটফর্মে ইট ও গাঁথুনি ক্ষয়ে গেছে। সংস্কারবিহীন স্টেশনের দ্বিতল ভবনের ছাদে জন্মেছে আগাছা। বিশাল আয়তনের পানির ট্যাঙ্ক দুটি পরিত্যক্ত হয়ে গেছে। বর্তমানে এখানে যাত্রীসেবামূলক কিছু নেই। স্টেশনের অফিস রুমগুলো বন্ধ। চারিদিকে বিরাজ করে নির্জন পরিবেশ। স্টপেজ না থাকায় বর্তমানে এই স্টেশনের ওপর দিয়ে চলে যায় ট্রেন। ৫৬ বছর বয়সি স্থানীয় বাসিন্দা মিজানুর রহমান লালু বলেন, আমি দেখেছি স্টিম ইঞ্জিনের (বাষ্পচালিত) কয়লার ট্রেন গাড়ি চলাচল করত। এখানে দুটি পানির ট্যাঙ্ক ছিল। এখনো আছে। সে সময়ে কয়লার ইঞ্জিনে এখান থেকে পানি দেওয়া হতো। এগুলোও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সে সময় অনেক ট্রেন এসে এখানে থামত। দুই থেকে পাঁচ পয়সা ভাড়া দিয়ে ট্রেনে চলাচল করা যেত। এখন বর্তমানে লোকাল দুটি ট্রেন থামে। অন্যগুলো থামে না। রেলওয়ে ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এখানে শুধুমাত্র স্টপেজ রয়েছে সরকারের লিজ দেওয়া খুলনা-গোয়ালন্দঘাট মেইল ট্রেন নকশিকাঁথা এক্সপ্রেস এবং পোড়াদহ ও রাজবাড়ির মধ্যে চলাচলকারী শাটল ট্রেনের। এই দুটি ট্রেনের অল্পসংখ্যক যাত্রী যাতায়াত করে।

স্বাধীনতার পূর্বে কুষ্টিয়ায় চিনিকল প্রতিষ্ঠার পর এখানে আখ সরবরাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল এই স্টেশনের। তখন আশপাশের জেলার জন্য ট্রেনে আনা খাদ্যশস্যসহ অন্যান্য পণ্যসামগ্রী খালাস ও যাত্রী ওঠাণ্ডনামা করত এই স্টেশনে। অথচ জগতি স্টেশনটি আজ কোলাহলমুক্ত নীরব পড়ে আছে। তবে স্টেশনে যাত্রীসেবা না থাকায় তাদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। জনবলের অভাবও রয়েছে প্রকট। বর্তমানে এই স্টশনে দুইজন গেটম্যান রয়েছেন। অপরদিকে দুইজন স্টেশন মাস্টার, তিনজন বুকিং সহকারী, তিনজন ল্যাইনম্যান, তিনজন পয়েন্টসম্যান ও দুইজন সুইপারের পদ দীর্ঘদিন থেকে শূন্য রয়েছে। স্থানীয়রা ও যাত্রীরা বলেন, স্টেশনে বসার জায়গা নেই, টিউবওয়েল নেই, বাথরুম নেই। একসময় কলকাতা থেকে জগতি স্টেশন হয়ে রাজবাড়ী পর্যন্ত ট্রেন চলাচল করত। প্রতিটি ট্রেন জগতি স্টেশনে থামত। কিন্তু এখন আগের মতো ট্রেন থামে না। কালের বিবর্তনে দেশের অনেক রেলস্টেশনের অবকাঠামোর উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু দেশের প্রথম রেলস্টেশন জগতির কোনো উন্নতি হয়নি। ট্রেন না থামায় এবং স্টেশনটি বন্ধ থাকার জন্য এই এলাকার বাসিন্দারা পোড়াদহ ও কুষ্টিয়া কোর্ট স্টেশন ব্যবহার করে। এখানে অনেক সমস্যা। আমরা দাবি জানাচ্ছি স্টেশনটিকে আধুনিকায়ন করা হোক। রেলওয়ে বিভাগের পশ্চিমাঞ্চলীয় পাকশী কার্যালয়ের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক শাহ সুফী নুর মোহাম্মদ বলেন, সরকার ব্যয় সংকোচন নীতি অবলম্বন করেছে। যেখানে অতিআবশ্যক কাজগুলো করাতে পারছি না সেখানে কেবল ঐতিহ্যের কারণে সংস্কার করে অর্থ ব্যয় করার অবস্থায় আমরা নেই। বাজেট আসলে তখন বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করব। স্টেশনটি সংরক্ষণে আমরা চেষ্টা করছি। স্টেশনটিতে আমাদের লোকবলের অভাব রয়েছে। স্টেশনটি চালু হলে লোকবলের ব্যবস্থা করা হবে।