রাজশাহীতে পানের বিপ্লব

প্রকাশ : ২৭ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

আমের জন্য রাজশাহীর সুখ্যাতি বেশ পুরোনো। আমের রাজ্যখ্যাত এ জেলায় এবার বিপ্লব ঘটছে পানে। লক্ষাধিক পরিবার নির্ভরশীল এ পানের ওপর। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এখানকার পান রপ্তানি হচ্ছে বিদেশেও। এরই মধ্যে জেলার মোহনপুরে পান গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এছাড়া পানের ভৌগলিক নির্দেশক (জিআই) স্বীকৃতির জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ে করা হয়েছে আবেদন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে রাজশাহীতে ৪ হাজার ৪৯৬ হেক্টর জমিতে পান আবাদ হচ্ছে। সর্বশেষ বছরে উৎপাদিত পানের পরিমাণ ৭৬ হাজার ৬৭৮ মেট্রিক টন।

জেলার বাগমারায় সর্বোচ্চ ১ হাজার ৫৬০ হেক্টর ও মোহনপুরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১ হাজার ৩১৭ হেক্টর জমিতে পানের আবাদ করছেন কৃষকরা। চাষিরা জানিয়েছেন, পানের লম্বা লম্বা সারিকে আঞ্চলিক ভাষায় ‘পিলি’ বলে চিহ্নিত করেন তারা। প্রতি পিলিতে পানগাছের লতা স্থির রাখার জন্য বাঁশ কেটে বিশেষ ধরনের কঞ্চি তৈরি করা হয়। আঞ্চলিক ভাষায় এ কঞ্চিকে তারা ‘ওয়াশি’ বলে থাকেন। বাঁশের খুঁটিকে ‘লগোইড়’ বলেন চাষিরা। পানবরজের পরিমাণকে ‘পোন’ বলে হিসাব করা হয়। ৮০ লগোইড়কে এক পোন বলেন তারা। প্রায় ৫ কাঠা জমিতে ৪ পোন লগোইড়ের পানবরজ স্থাপন করা যায়। এছাড়া, পানের পরিমাণকে বলা হয় ‘বিড়া’। ৬৪টি পানপাতাকে এক বিড়া পরিমাণ ধরা হয়। এরকম ৩২ বিড়াতে ধরা হয় ‘এক পোন’। প্রতিটি লতায় প্রায় ২০টি করে পানপাতা থাকে। বছরে ৩-৪ বার বিশেষ পরিচর্যা নিতে হয় পানবরজের। প্রত্যেকবার পরিচর্যার জন্য বিঘাপ্রতি ২০ জন করে শ্রমিক প্রয়োজন হয়। পানের লতা ওয়াশির সঙ্গে আটকিয়ে রাখতে খড় দিয়ে ছোট সাইজের তৈরি বিশেষ ধরনের বস্তু ব্যবহৃত হয়। সেটিকে তারা ‘উইল্যা’ বলেন। পানগাছের গোড়াকে আঞ্চলিক ভাষায় ‘পড়’ বলে সম্বোধন করেন চাষিরা। পানের আকৃতি অনুযায়ী ভিন্ন নামে ডাকা হয়। সবচেয়ে বড় পাতাকে ‘মোটা’ পান ও সবচেয়ে ছোট সাইজের পানকে ‘সাপটা’ পান বলা হয়। এছাড়া মধ্যম সাইজের পানকে মাঝারি ও সব মিশ্রিত পানকে একত্রে ‘ঝাড়া’ নামে ক্রয় করেন পান ব্যাপারীরা।

সূত্রমতে, জেলায় প্রায় ৩৯ হাজার পানচাষি রয়েছেন। আরো প্রায় ৪০-৪৫ হাজার পরিবার পানবরজের শ্রমিক, ব্যবসা ও পরিবহনসহ সংশ্লিষ্ট কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত। জেলায় বড় পানের হাট রয়েছে ২০-২৫টি। এরমধ্যে বাগমারার মচমইল, মোহনপুরের একদিলতলা, পাকুড়িয়া, মৌগাছি ও ধুরইল এবং দুর্গাপুরের দাওকান্দি বাজার উল্লেখযোগ্য। তবে মোট পানচাষির মধ্যে ১৭ হাজার ৮৫০ জনই মোহনপুরের। মোহনপুরের মৌগাছি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আল-আমিন বিশ্বাস বলেন, পানে বিপ্লব অলরেডি হচ্ছে। এখানকার ৭০ শতাংশ মানুষ পানচাষ করে। এখানে ধান, আলু, পান অনেক চাষ হয়। বিশেষ করে, পানটা সবচেয়ে মূল্যবান ফসল মনে হয়। এটা আমরা নিজেরা নিজেরা চাষ করি। এটা লাভজনক ফসল। আলু রাখার মতো পান সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা বা গবেষণা কেন্দ্র হলে কৃষকের উপকার হবে। মোহনপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছা. মোস্তাকিমা খাতুন বলেন, পান অর্থকরী ফসল তো বটেই, এটার অনেক ওষুধি গুণও রয়েছে। এখানে গবেষণা কেন্দ্র হলে পানচাষিরা নিরাপদে পান উৎপাদন করতে পারবেন। এছাড়া, বৈদশিক মুদ্রাও অর্জন হবে। এ ব্যাপারে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, পানে লাভ হচ্ছে। কিন্তু আমরা চাচ্ছি, পানবরজের ভেতরেও দুইটা লাইনের মাঝখানে একটা গ্যাপ থাকে; এই গ্যাপে ছায়াযুক্ত স্থানে আদা আর হলুদ হয়ত এবছরই ইন্ট্রোডিউস করব। তাহলে এটা করলে তাদের পানের পাশাপাশি এখান থেকে কিছু লাভ হবে।