মৈত্রী পাইপলাইনে তেল চুরির ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন

প্রকাশ : ২৮ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  কামরুল হুদা হেলাল, দিনাজপুর

বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডসশিপ পাইপলাইন উন্নত প্রযুক্তির সঙ্গে সংযুক্ত থাকায় সম্প্রতি পাইপলাইন ফুটো করে তেল চুরির ঘটনা ও ঘটনাস্থল শনাক্ত করে অধিকতর অনুসন্ধানের জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। মামলার এজাহার নামীয় চারজনকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে। ভবিষ্যতেও দুর্বৃত্তদের এভাবে তেল চুরির প্রয়াস ব্যর্থ করে দিবে উন্নত এ প্রযুক্তি। জ্বালানি সরবরাহের পাইপলাইনের সঙ্গে সংযুক্ত উন্নত প্রযুক্তির সেন্সর ও মনিটর থাকায় এর কোনো অংশে ত্রুটি দেখা দিলে কিংবা লিকেজ হলে তাৎক্ষণিক স্বয়ংক্রিয়ভাবে বার্তা পৌঁছে যাবে দু’দেশে স্থাপিত মনিটরে। বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইনের প্রকল্প পরিচালক টিপু সুলতান জানান, তেল চুরির এ ঘটনায় জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিবকে প্রধান করে ৪ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি কবে নাগাদ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিবেন এ বিষয়ে তিনি কিছু জানাতে পারেননি। তবে, গতকাল জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব, মেঘনা অয়েল কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক টিপু সুলতান, দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পার্বতীপুর রিসিপ্ট টার্মিনাল কর্তৃপক্ষ।

পার্বতীপুরে বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডসশিপ পাইপলাইনের রিসিপ্ট টার্মিনাল (আরটি) সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার দিন গত ২৪ নভেম্বর ভোররাতে ভারতের শিলিগুড়ি মার্কেটিং টার্মিনালে থেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার ফতেজংপুর ইউনিয়নের ফেরোশাভাঙ্গা চকইসবপুর গ্রামে ১১৭ কিলোমিটারের ৪০০ গজ দূরে পাইপলাইনে লিকেজের সংকেত শনাক্ত করে সেদেশে স্থাপিত সেন্সর মনিটর। একই সঙ্গে পার্বতীপুর রিসিপ্ট টার্মিনালের সেন্সর মনিটরে একই সংকেত ধরা পরে। তবে, টার্মিনাল কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থল শনাক্ত করতে না পারায় ভারতীয় প্রতিপক্ষের শরনাপন্ন হলে তারা পুরো ঘটনাটি অবহিত করেন। এরপরই তৎপর হয়ে ওঠে চিরিরবন্দর থানা পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন।

ওই সূত্র ধরে চুরির ঘটনায় জড়িত চারজনকে গ্রেপ্তার ও পরিত্যক্ত প্রায় ১০০ লিটার তেলও জব্দ করে পুলিশ। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন, চিরিরবন্দর উপজেলার উত্তর ভবানীপুর (ডাঙ্গারহাট) গ্রামের আলী উদ্দিনের ছেলে ও পার্বতীপুর আইবিএফপিএল আরটি অফিসের লাইনম্যান জাহাঙ্গীর আলম, পার্বতীপুর উপজেলার সোনাপুকুর গ্রামের মাজুম আলীর ছেলে মানিক শাহ, নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর উপজেলার সাশকান্দর গ্রামের মৃত তাবির উদ্দিনের ছেলে নাজমুল হক ও একই এলাকার ছলেমন বসু মিয়ার ছেলে আমিনুল ইসলাম। ঘটনার পর থেকে অপর অভিযুক্ত লাইনম্যান মো. ফেরদৌস পলাতক রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে পার্বতীপুর আইবিএফপিএলের আরটি’র ব্যবস্থাপক (অপারেশন) প্রবীর হীরা বাদী হয়ে চিরিরবন্দর থানায় তেল চুরির একটি মামলা করেন।

বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন (আইবিএফপিএল) পার্বতীপুর রিসিপ্ট টার্মিনাল (আরটি) কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক (অপারেশন) প্রবীর হীরা জানান, গত শুক্রবার ভোররাতে প্রকল্পের পার্বতীপুর আরটি অফিসে পাইপলাইনের লিকেজ সংকেত বেজে ওঠে। পরে প্রকল্পের ভারতীয় অফিসের শিলিগুড়ি মার্কেটিং টার্মিনালে যোগাযোগ করা হয়। সেখান থেকে জানানো হয়, ১১৭ কিলোমিটার সংকেত খুঁটির কাছে পাইপ লিকেজ হয়েছে। ঘটনাস্থলের উত্তরে ৪০০ গজের মধ্যে দিনাজপুর-রংপুর মহাসড়কের সঙ্গে লাগোয়া সোনাপুকুর এলাকায় রিসিপ্ট টার্মিনালের সাব অফিস। তেল চোর চক্রটি ১০ ইঞ্চি মূল পাইপে (৪ মিলি) ছিদ্র করে দুটি ক্লাম্প সেট করে। সেই ছিদ্রের সঙ্গে দেড় ফিট লম্বা জিআই পাইপ ঢুকিয়ে তেল চুরির চেষ্টা করে। ঘটনা শনাক্তের পরপরই পাইপলাইনের ছিদ্রটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, কম খরচে, কম সময়ে ভারত থেকে পাইপলাইনে জ্বালানি তেল সরবরাহের জন্য এই পাইপলাইনটি নির্মাণ করা হয়। ২০২৩ সালের ১৮ মার্চ দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি পাইলাইনে তেল আমদানি কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। ভারতের শিলিগুড়ির নুমালীগড় রিফাইনারি লিমিটেড থেকে শুরু হওয়া ১৩১ দশমিক ৫৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পাইপলাইন শেষ হয়েছে দিনাজপুরের পার্বতীপুর বিপিসি রেলহেড ডিপোতে।