৫০ বছর ধরে খুলছেন অন্যের তালা

খোলেনি নিজের ভাগ্য

প্রকাশ : ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে পুরাতন নানা ঐতিহ্য। বাড়ি-গাড়ি, অফিস-আদালত স্কুল-কলেজ দোকানপাটসহ সবকিছুই নিরাপদ রাখার অন্যতম মাধ্যম তালা। তালা নষ্ট হলে কিংবা চাবি হারিয়ে গেলে মানুষকে পড়তে হয় চরম বিড়ম্বনায়। প্রয়োজন পড়ে তালা মেরামত কিংবা নতুন চাবি তৈরির। তালা মেরামত আর নতুন চাবি বানানোর কাজ শিখেই সংসার চালাতেন এক শ্রেণির কারিগর। কিন্তু প্রযুক্তির উন্নয়নে হারিয়ে যাচ্ছে চাবি তৈরি ও তালা মেরামতের কাজ। তাই ভালো নেই তালা-চাবির কারিগররা। ফুটপাতের তালাচাবি কারিগর মো. রফিক বেপারি বলেন, বর্তমানে উন্নত প্রযুক্তির ডিজিটালসহ বিভিন্ন ধরনের তালা-চাবি বাজারে এসেছে। এগুলো বেশ টেকসই। ফলে পুরাতন তালা-চাবি মেরামত করতে তেমন কেউ আর আসে না। তারা মনে করেন, মেরামতের চেয়ে নতুন তালা নেওয়া ভালো। তবুও পেশা ধরে রেখেছি। কি করব, খেয়ে পরে বাঁচতে হবে তো। শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার কাজিরহাটে একসময় এই পেশার কারিগরদের বেশ কদর ও জমজমাট ছিল। নতুন চাবি তৈরি, অকেজো তালা ও টর্চলাইট মেরামত করে চলত নিম্ন আয়ের বহু মানুষের জীবন-জীবিকা। বর্তমানে রসদ খুঁজে না পাওয়ায় কমেছে এ পেশার মানুষের সংখ্যা। তালা মেরামত করতে আসা ওহাব আলী খান বলেন, এক সময় বিভিন্ন বাজারে, রাস্তার মোড়ে, ফুটপাতে, স্থায়ী-অস্থায়ী কারিগরদের দেখা যেত। কিন্তু বর্তমানে তাদের খুব বেশি চোখে পড়ে না। হাতে কাজ না থাকায় অনেকে হয়তো পেশা পরিবর্তন করেছেন। তালা চাবি মেরামতকারী অন্য আরেকজন বলেন, এখন তালার ধরন বদলেছে। সব তালার কাজও আমরা করতে পারি না। এখনকার অনেক মডেলের তালা নষ্ট হয়ে গেলে ফেলে দিতে হয়, মেরামত করা যায় না। আবার অনেক বাড়িতে আধুনিক তালা ব্যবহার করে। তাই আমাদের কদর কমেছে। এ পেশায় এখন আর কোনো ভবিষ্যৎ দেখছি না। তাই এই কাজ সন্তান কিংবা আত্মীয়স্বজন কাউকে শেখাতে চাই না। পাসের দোকানি আব্দুল মজিদ ঢালী বলেন, এক সময় তালা-চাবি ও টর্চলাইট মেরামতের প্রচুর কাজ হতো। আয় রোজগারও ভালো হতো। বর্তমানে কাজ একেবারেই কম। এখন টর্চ লাইটের স্থান মোবাইল দখল করে নিয়েছে। নানা ধরনের তালা-চাবিও হয়েছে। আয় অনেক কমে গেছে। প্রতিদিন যা আয় হয় তা দিয়ে কোনো রকম সংসার চলে। উল্লেখ্য, এখন থেকে একদশক আগেও কামারি তালা আর চার্জার লাইটের প্রচুর ব্যবহার ছিল। ফলে এসব নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসগুলো নষ্ট হলে মানুষ ছুটে আসত কারিগরদের কাছে। হাটবাজারে এ পেশার মানুষের বেশ কদর ছিল। কিন্তু উন্নত প্রযুক্তির ছোঁয়ায় এ পেশার মানুষের আয়ের পথ কিছুটা সংকুচিত হয়েছে।