বিলুপ্তির পথে মহৌষধি তুলসী

প্রকাশ : ৩০ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

এক সময়ে চিকিৎসার প্রয়োজনে ব্যাপক গুরুত্ব ছিল নানা ঔষধি গাছের। সময়ের ব্যবধান আর বিজ্ঞানের উৎকর্ষের ছোঁয়ার এসব ঔষধি গাছের কদর কমেছে। এসব ঔষধি গাছের মধ্যে অন্যতম নানা গুণে সমৃদ্ধ মহৌষধি গাছ তুলসী কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় আজ অবহেলার ফলে বিলুপ্তির পথে। রোগবালাই নিরাময়ে প্রাচীনকাল থেকেই এ তুলসীগাছ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে এসেছে। উপজেলার কান্দুঘর গ্রামের হেকিম (কবিরাজ) আবদুল হান্নান বলেন, আমার দাদা এক সময় গ্রামের আনাচে-কানাচে জন্মানো ঔষধি গাছ দিয়ে মানুষের নানা রোগ নিরাময় করতেন। আমার বাবাও এ পেশায় জীবন পার করেছেন। বংশ পরম্পরায় আমিও এই পেশাতেই আছি। তবে এখন আর আগের মতো সহজলভ্য নয় ঔষধি গাছ। তা ছাড়া মানুষের এখন এলোপ্যাথি চিকিৎসার প্রতি আগ্রহী বেশি। এতে করেও বনাজী গাছগাছালি অবহেলিত হয়ে প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। এলোপ্যাথি চিকিৎসার অগ্রগতি ও হারবাল চিকিৎসা প্রসারিত না হওয়ায় দিন দিন তুলসীসহ আরো অনেক ঔষধি গাছ বিলুপ্ত হয়ে পড়ছে। স্থানীয়রা বলছেন, উপজেলার কিছু হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি ছাড়া তুলসী গাছ আগের মতো এখন আর দেখা যায় না। কোনো এক সময় এই জনপদের বনবাদাড়ে, রাস্তার ধারে ও বসতবাড়ির আঙিনায় দেখা মিলত তুলসী গাছের। সময়ের পরিক্রমায় আর এলোপ্যাথি চিকিৎসার উৎকর্ষে বিলুপ্ত হয়ে পড়ছে তুলসীসহ নানা ঔষধি গাছ। গ্রাম-গঞ্জে আগের মতো ঔষধি গাছ আর লাগানো ও পরিচর্যা করতেও এখন আর তেমন দেখা যায় না। জানা গেছে, মহৌষধি গাছ তুলসী একটি ঘন শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট ২ থেকে ৩ ফুট উঁচু চিরহরিৎ প্রজাতির গুল্ম। এটি একটি ঔষধিগাছ। তুলসী অর্থ যার তুলনা নেই। তুলসী গাছ লামিয়াসি পরিবারের অন্তর্গত একটি সুগন্ধী উদ্ভিদ।

হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে এটি একটি পবিত্র উদ্ভিদ হিসেবে সমাদৃত। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে তুলসীকে ‘সীতাস্বরূপা’, স্কন্দপুরাণে ‘লক্ষীস্বরূপা’, চর্কসংহিতায় ‘বিষ্ণুপ্রিয়া’, ঋগবেদে ‘কল্যাণী’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এটি নানা রোগ নিরাময়ে আদিকাল থেকেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে এসেছে। ইউনানি চিকিৎসকদের তথ্য মতে, তুলসীর রয়েছে নানা ঔষধি গুণ। এর পাতা, ফুল ও ফলের একটি ঝাঁঝালো গন্ধ আছে। সর্দি ও দীর্ঘদিনের খুসখুসে কাশিতে কিছু তুলসী পাতা গরম পানিতে জ্বাল দিয়ে নির্যাস বের করে নিয়ে সামান্য আদা ও মধু দিয়ে খেলে সর্দি-কাশি ও জ্বর ভালো হয়। তুলসীর এই নির্যাস খেতে হবে পাঁচ থেকে সাত দিন তিন বেলা করে। মহৌষধি তুলসীর রয়েছে আরও নানা গুণ। সাধারণ জ্বর, ঠান্ডা ও কাশির তীব্রতা কমাতে তুলসী পাতার রসের জুড়ি নেই।

মুখের দাগের আধিক্য কমাতে তুলসীর রস মাখলে আস্তে আস্তে সেই দাগের পরিমাণ কমে আসে। তুলসী পাতা দিয়ে চা বানিয়ে খেলে নানান ধরনের রোগের উপশম সম্ভব। তুলসী গাছের শিকড় খেলে যৌন দুর্বলতা সেরে যায়। সকালে খালিপেটে পানির সঙ্গে তুলসীর রস মিশিয়ে খেলে হৃদরোগের উপকার পাওয়া যায়।