ঢাকা ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ময়মনসিংহে লাফা বেগুনের আবাদ বেড়েছে

ময়মনসিংহে লাফা বেগুনের আবাদ বেড়েছে

ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলার চরাঞ্চলে লাফা ও তাল বেগুনের আবাদ বেড়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল এলাকায় প্রান্তিক চাষিরা লাফা এবং তাল বেগুন আবাদ করে এখন লাভবান হচ্ছেন। গফরগাঁওয়ের বেগুনের স্বাদ ও গন্ধে অতুলনীয়। লাফা বেগুন নিয়ে চাকরি প্রার্থীরা বড় কর্মকর্তার দরজায় হাজির হলে তাদের ভাগ্যে মিলে যেত চাকরি। নানা সমস্যার কারণে বিলুপ্তি হয়ে যাওয়া বেগুন চরাঞ্চলে কৃষকরা আবার আবাদ শুরু করেছেন। গফরগাঁওয়ের চরআলগী নয়াপাড়া গ্রামের কৃষক গোলাম বর এবং ছামিদ মিয়া লাফা বেগুন চাষ করেছেন। এ বেগুনের আকৃতি গোল কিন্তু দেহ মসৃণ নয়। তাল বেগুনও দেখতে ঠিক লাফা বেগুনের মতো। কিন্তু এ বেগুন ঢেউ খেলানো খাঁজ কাটা নয়। সারা দেশের ঐতিহ্যবাহী গফরগাঁওয়ের বেগুন। অনেকেই একে গোল বেগুন বলে ডাকে। বড়া ও ভাজির জন্য প্রসিদ্ধ ও সুস্বাদু এ তাল বেগুন। এক সময়ে বিয়ের উৎসবে ঐতিহ্যবাহী লাফা গফরগাঁওয়ের বেগুন খাদ্যের তালিকায় না থাকলে বরপক্ষের খাবারে অপূর্ণতা থেকে যেত। এমন ঘটনা ঘটেছে বরকে বড় থালায় খাবার দেওয়া হলে সেই থালা লাফা বেগুনের ভাজা না থাকলে বর বিয়েতে অস্বীকৃতি জানাতো। একসময়ে গফরগাঁও উপজেলার চরআলগী ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকায় লাফা বেগুনের চাষ হতো। একটি বেগুনের ওজন হতো ২ থেকে ৩ কেজি পর্যন্ত কোনো প্রকার সার প্রয়োগ ছাড়াই এ বেগুন উৎপাদন হতো। লাফা বেগুনের খেতে কোনো রকম অপবিত্র শরীর নিয়ে গেলে কয়েক দিন পরেই বেগুনের গাছ মরে যায়। ব্রক্ষ্মপুত্র নদের ভাঙনে লাফা বেগুন চাষাবাদের জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। লাফা বেগুনের উন্নত বীজ কোথাও না পেয়ে কৃষকরা নিরূপায় হয়ে লাফা বেগুনের পরিবর্তে বিভিন্ন জাতের বেগুন চাষ করছে। এদের মধ্যে হলো- গোল আকৃতির লাফা বেগুন, তাল বেগুন, ভোলানাথ, সিংনাথ, ইসলামপুরী, বারী বেগুন, খটখটিয়া, তারা ও ঝুড়ি বেগুনের চাষ। লাফা বেগুন এর অপর চাষি জীবন মিয়া জানান, বংশানুক্রমিক ঐতিহ্য ধরে রাখতে দু-একজন চাষি লাফা বেগুনের চাষ করেন। আগের মতো আর এখন লাফা বেগুনের চাষ হয় না। ভরা শীত মৌসুমে চলে লাফা বেগুনের চাষ। রাতের শেষ প্রহরে মাটির ওলট-পালট করে দিতে হয়। প্রতি সপ্তাহে অল্প সেচ দিতে হয়। জাতের বেগুন গাছ মাটি থেকে প্রচুর পরিমাণ রস টেনে নেয়। কৃষক জীবন মিয়ার দাবি জরুরিভিত্তিতে লাফা বেগুনের ভালো বীজ সংরক্ষণ করা হউক। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রকিব আল রানা জানান চলতি মৌসুমে ৮০০ একর জমিতে বিভিন্ন জাতের বেগুনের চাষ হচ্ছে। চরআলগী, টাঙ্গাব, দত্তের বাজার ও সালটিয়া ইউনিয়নে বেগুনের চাষ হয়ে থাকে। এই পাঁচটি ইউনিয়নের প্রায় ১ হাজার ৬০০ পরিবার বেগুন চাষে সুফল ভোগ করবে। গফরগাঁওয়ের চরআলগী ইউনিয়নের কৃষক লাফা এবং বেগুন আবাদ করে বাংলাদেশে মধ্যে আবার গফরগাঁওয়ের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে বলে তিনি আরো জানান।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত