৫০ গ্রামের লাখো মানুষের দুঃখ বালু নদ

প্রকাশ : ৩০ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

রূপগঞ্জের কোলঘেঁষে প্রবহমান একসময়ের খরস্রোতা বালু নদ এখন মৃতপ্রায়। নয়ন জুড়ানো রূপ ক্ষয়ে যেতে শুরু করে দুই যুগ আগে থেকেই। নদে এখন মাছ নেই। কমে গেছে ফসলের উৎপাদন। বেড়েছে রোগবালাই। দূষিত পানির গন্ধে তীরবর্তী এলাকার মানুষের দুর্ভোগও বেড়েছে পাল্লা দিয়ে। বিপন্ন হয়ে যাচ্ছে প্রাণপরিবেশ। বিপর্যস্ত মানুষের জীবন। রাজধানী ঢাকার পয়োবর্জ্য ও শিল্পকারখানার বর্জ্য পড়ে এ নদের পানি এখন অনেকটাই আলকাতরার মতো কালো। রাজধানী ঢাকার খিলগাঁও, ডেমরা, বেরাইদ, গুলশান ও রূপগঞ্জের ৫০ গ্রামের লাখো মানুষের কাছে বালু নদের পচা এখন অভিশাপ। শীতলক্ষ্যার মোহনা ডেমরা থেকে বালু নদ শুরু। ডেমরা থেকে বালু নদ টঙ্গীতে গিয়ে তুরাগ নদে মিলেছে। বালু নদ থেকে দুটি ছোট নদী নড়াই ও দেবধোলাই ঢুকেছে ঢাকার রামপুরায়। এ নদী দুটি দিয়ে ঢাকার মিরপুর, পল্লবী, উত্তরা, গুলশান, তেজগাঁও, সবুজবাগ, মতিঝিলসহ বিশাল এলাকার শিল্প ও পয়োনালার বর্জ্য রামপুরা ব্রিজের নিচ দিয়ে বালু নদে পড়ছে। আছে শিল্পকারখানার বিষাক্ত কেমিক্যালও। ওয়াসার সূত্র মতে, ২২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে বালু নদে ঢাকা থেকে ১০ লাখ ঘনমিটার পয়োবর্জ্য, ৫৬ কোটি ঘনমিটার বর্জ্য মেশানো পানি, কলকারখানার ৪৫০ ঘনফুট বর্জ্য প্রতিদিন পড়ছে। এছাড়া বালু, নড়াই ও দেবধোলাইয়ের ওপর আছে সহস্রাধিক খোলা পায়খানা। এসব থেকে আরো ৫৬০ ঘনফুট পয়োঃবর্জ্য মিশছে। সরেজমিন বালু নদের তীরবর্তী বালুরপাড়, দাসের কান্দি, কামশাইর, চানখালী, ধীৎপুর, চনপাড়া, দক্ষিণপাড়া, নয়ামাটিসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এসব গ্রামের সাধারণ মানুষ পানিতেই দৈনন্দিন কাজ সারছেন। স্থানীয়রা পরিবেশ ও কৃষি বিপর্যয়ের পাশাপাশি মশামাছির যন্ত্রণাও রয়েছে। পচা পানির কারণে মশার উপদ্রব এসব এলাকায় অনেক। মশা নিধনে নেই সরকারি কোনো উদ্যোগ। বালুতীরবর্তী দাসের কান্দি, চরচনপাড়া ও ফকিরখালীর জেলেপল্লি ঘুরে জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নদে মাছ না থাকায় দেড় শতাধিক জেলে পরিবার এখন নিদারুণ কষ্টে দিনাতিপাত করছে। বছরের ছয় মাস তাদের কাটাতে হয় অর্ধাহারে-অনাহারে। তাদের পরবর্তী প্রজন্ম পেশা বদলাচ্ছে। পচা পানি তাদের জন্য অভিশাপে পরিণত হয়েছে। দূষণ রোধ করে বালু নদকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে এলাকাবাসী দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে আসছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। প্রতিশ্রুতি আর আশ্বাসের বাক্সে বন্দি হয়ে আছে। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তাসমিয়া তাসমিন বলেন, নদের পানিতে কার্বন ডাইঅক্সাইড ও মনোক্সাইডের পরিমাণ অনেক বেশি। কোনো প্রাণী এ অবস্থায় বাঁচতে পারে না। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আইভি ফেরদৌস প্রভা বলেন, পচা পানির কারণে লাংসহ দেহে দেখা দিতে পারে মরণব্যাধি ক্যানসার। তাই এখনও সময় আছে নদরক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসার। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফয়সাল হক বলেন, এ ক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি সব শ্রেণিপেশার মানুষ সম্মিলিতভাবে সামাজিক ও সচেতনতা তৈরি করে কাজ করলে হয়তো বালু নদের দূষণ অনেকটা কমিয়ে আনা যাবে।