ঢাকা ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

নদীর নীরব কান্না শোনে না কেউ

নদীর নীরব কান্না শোনে না কেউ

টাঙ্গাইল শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদী লৌহজং। সময়ের বিবর্তনে দখল দূষণের কবলে মৃতপ্রায় একসময়ের খরস্রোতা নদীটি। নাব্য হারিয়ে পরিণত হয়েছে মরা খালে। ভরা মৌসুমেও নদীটি ঢেকে থাকে কচুরিপানায়। ৭ বছর আগে নদীটি দখলমুক্ত কার্যক্রম শুরু হলেও ৩ বছরের মাথায় বন্ধ হয়ে যায় কার্যক্রম। এরই ফাঁকে অবৈধ দখল আর দূষণে ফিরে গেছে আগের রূপে। প্রতিনিয়ত কলকারখানার বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে নদীর পানি। নদীর দুই পাড়ের পরিবেশ চরম বিপর্যয়ের মুখে। নদীটি দখল ও দূষণমুক্ত করার দাবি স্থানীদের। লৌহজং নদীর দৈর্ঘ্য সদর উপজেলার যুগনী থেকে বুড়িগঙ্গা পর্যন্ত ৭৫ কিলোমিটার। শহরের নিরালাড়া মোড় এলাকায় একসময় ছিল নৌবন্দর। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লঞ্চ, স্টিমার, জাহাজ ও বড় বড় নৌকা বাণিজ্যে আসত এ বন্দরে। মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক পরিবেশ ছিল এখানে। বর্তমানে এসব অতীত। দীর্ঘদিন ড্রেজিং না করায় এর নাব্য হারিয়েছে। এই সুযোগে দুই পাড়ের সাধারণ মানুষ কৌশলে প্রথমে ময়লা-আবর্জনা ফেলে দখল করছে। পরে নির্মাণ করছে স্থায়ী ভবন, দেওয়াল ও স্থাপনা। এ ছাড়াও মিল কারখানা, শহরের ময়লা-আবর্জনা নদীতে ফেলে দূষিত করা হচ্ছে পানি। নদীটি দূষণ ও দখলমুক্ত করার জন্য ২০১৬ সালে আন্দোলনে নামেন স্থানীয়রা। ওই বছরের ২৯ নভেম্বর নদীটি দূষণ ও দখলমুক্ত করার কাজ উদ্বোধন করেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. মাহবুব হোসেন। শহরের পুলিশ লাইনস হাজরাঘাট এলাকা থেকে বেড়াডোমা পর্যন্ত চার কিলোমিটার দূষণ ও দখলমুক্ত করা হয়। চার বছর ধরে কোনো কার্যক্রম না থাকায় নদীর পানি দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। কুচুরিপানায় পরিপূর্ণ থাকায় নদী হারিয়ে ফেলেছে তার স্বাভাবিক গতি। করটিয়া এলাকার বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন কারখানার বর্জ্য ফেলে নদীটি বিভিন্নভাবে দূষণ করা হচ্ছে। নদী থেকে পঁচা দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। নদীটি মানুষের উপকারে আসার পরিবর্তে অপকারই হচ্ছে। নদী রক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক রতন সিদ্দিকী বলেন, লৌহজং নদীটি উদ্ধারের জন্য মানববন্ধন, সচেতনতামূলক নানা কর্মসূচি পালন করি। জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে ২০১৬ সালে নদীটি উদ্ধারের জন্য দখলমুক্ত করা হলেও ২০১৯ সালের পর থেকে আর কোনো কার্যক্রম না থাকায় নদীটি আবার দখল হয়ে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, শুনেছিলাম নদীটি দখল ও দূষণমুক্ত করার ২৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। কিন্তু এর কোনো কার্যক্রম নেই। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) বিভাগীয় সমন্বয়কারী গৌতম চন্দ্র চন্দ বলেন, লৌহজং নদীর উদ্ধার কার্যক্রম থমকে আছে। বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষসহ পরিবেশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। বর্তমানে শহরের বিভিন্ন ড্রেনের লাইন নদীতে দেওয়া আছে। স্থানীয় বাসিন্দারাও নদীর ময়লা-আবর্জনাসহ বাসায় টয়লেটের লাইন নদীতে দিয়ে দূষণ করছেন। নদী দখল ও দূষণে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান জড়িত। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে মির্জাপুর অংশে ২২ কিলোমিটার এলাকায় নদী পুনঃখনন ও নদীর তীর সংরক্ষণের একটি প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে শুকনো মৌসুমে কাজ শুরু হবে। এ ছাড়া শহরের অংশে নদী দখল ও দূষণমুক্ত করতে কাগজপত্র ঢাকায় পাঠানো আছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত