ঢাকা ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও শেষ হয়নি সেতুর অর্ধেক কাজ

* দেড় বছরের কাজ তিন বছর হয়ে যাচ্ছে, তাও সেতু হয়নি
নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও শেষ হয়নি সেতুর অর্ধেক কাজ

নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারের গাফিলতিতে জয়পুরহাট সদর উপজেলার করিমনগর ছোট যমুনা নদীর ওপর সেতুর নির্মাণ কাজ অর্ধেকও শেষ হয়নি। এতে দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ যেন পিছু ছাড়ছে না স্থানীয় বাসিন্দাদের। প্রতিদিন একটি ডিঙ্গি নৌকায় ও ড্রামণ্ডবাঁশ দিয়ে তৈরি ভেলায় নদী পারাপার হচ্ছেন অন্তত ৩০ গ্রামের মানুষ। প্রায়ই ঘটছে ছোটখাটো দুর্ঘটনা। তাই দ্রুত সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ করার দাবি এলাকাবাসীর।

জানা গেছে, ২০২১ সালের ৩০ মে জয়পুরহাট সদর উপজেলার ছোট যমুনা নদীর ওপর করিমনগর ও পাঁচবিবি উপজেলার বাগজানার ছোট যমুনা নদীতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অধীনে দুটি সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। সেই সেতুর নির্মাণ কাজ দেড় বছরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। নির্দেশনা অনুযায়ী পাঁচবিবির বাগজানা ছোট যমুনা নদীর সেতুটি নির্মাণ সম্পূর্ণ হয়েছে। তবে করিমনগরের সেতুটির নির্মাণকাজ এখনো অর্ধেকেও শেষ হয়নি। সাড়ে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮১ মিটার সেতুটির নির্মাণ কাজের দায়িত্ব পায় নওগাঁর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মন্ডল ট্রেডার্স ও ইথেন এন্টারপ্রাইস। দেড় বছরের মধ্যে কাজটি শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তিনবছরে সেতুটির চার পিলারের মাত্র একটির কাজ শেষ হয়েছে। অন্য তিন পিলারের কোথাও কিছু অংশ ঢালায় দেওয়া হয়েছে কোথাও আবার শুধু সাটারিং করা অবস্থায় আছে।

সদর উপজেলা এলজিইডি অফিস সূত্র জানায়, ২০২১ সালের ৩০ মে করিমনগর সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পর সেতুটির নির্মাণ শেষ করার নির্দেশনা ছিল ২০২২ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর। কিন্তু সে সময় সেতুর কাজ সম্পূর্ণ না হওয়ায় উপজেলা প্রকৌশলী অফিস থেকে তিনমাস সময় বাড়ানো হয়। এতেও কাজ না হওয়ায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদনের পর আরো ছয়মাস সময় বাড়ায়। যার সময় শেষ হয় ২০২৩ সালের ২৯ জুন। এরপরও ঠিকাদার সেতুর কাজ শেষ করতে পারেননি। সর্বশেষ ঠিকাদারের আবেদনের প্রেক্ষিতে আবারো ২০২৪ সালের ৩০ মে পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। এদিকে নির্ধারিত সময়ে কাজ না করায় ব্যাংকের মাধ্যমে ঠিকাদারকে ২ বার পারফরম্যান্স সিকিউরিটির ৩৮ লাখ ৫১ হাজার ৩৯০ টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য চিঠি দিয়েছেন জয়পুরহাট এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আলাউদ্দীন হোসেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদারের লোকজন একদিন কাজ করলে ১৫ দিন, ১ মাস এখানে আসে না। এজন্য রাতের বেলায় পিলারের রড কেটে নিয়ে যাচ্ছে চোরের দল। এছাড়া ধীরগতিতে সেতুটির কাজ হওয়ায় নানা ভোগান্তিসহ হতাশ স্থানীয়রা। একই গ্রামের হাবিবুর রহমান বলেন, সেতুটি নির্মাণ না হওয়ায় আমাদের চলাচলের খুব অসুবিধা। সেতুটি উদ্বোধন করার পর কাজই চোখে পড়লো না। একদিন করলে দীর্ঘদিন কাউকে দেখা যায় না। রশিদা নামে এক নারী বলেন, দেড় বছরের কাজ তিনবছর হয়ে যাচ্ছে তাও সেতু হয়নি। দাঁড়িয়ে থেকে বাচ্চাদের নৌকায় তুলে দেই, যেন কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে। আবার রাতে এখানে কেউ না থাকায় সেতুর রড চোররা কেটে নিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি জানতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মন্ডল ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী জাহাঙ্গীর আলমের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। এ বিষয়ে জয়পুরহাট সদর উপজেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী সামিন শারার ফুয়াদ বলেন, ঠিকাদার একটু আর্থিক সমস্যায় আছেন বলে সেতু নির্মাণে বিলম্ব হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না করায় তিনবার সময় বাড়ানো হয়েছে। সেতুটি যাতে দ্রুত নির্মাণ হয় এজন্য আমরা ঠিকারদারকে তাগাদা দিচ্ছি। আশা করছি, সেতুটির নির্মাণকাজ দ্রুত শেষ হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত