ঢাকা ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ফুলপুর হাসপাতালে অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনায় ভোগান্তি

ফুলপুর হাসপাতালে অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনায় ভোগান্তি

ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনার অভিযোগ উঠেছে। নৈশপ্রহরী দিয়ে চলছে জরুরি বিভাগের চিকিৎসাসেবা। এছাড়া ডাক্তার সংকট ও নিয়মিত অনুপস্থিতি; প্রাইভেট ক্লিনিকের সঙ্গে আঁতাত; আয়রনযুক্ত নলকূপের পানি ও নানা দুর্নীতি অনিয়মে জর্জরিত এই সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান। প্রায় চার লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবার জন্য এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তারের পদসংখ্যা ২৭ হলেও বর্তমানে ২২ জন কর্মরত। কর্মরত ২২ জনের মধ্যে তিনজন বর্তমানে বুনিয়াদি প্রশিক্ষণে, তিনজন প্রেষণে অন্যত্র দায়িত্ব পালন করছেন। ডাক্তার স্বল্পতার কারণে হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। ক্ষেত্র বিশেষে টেকনিশিয়ান, নার্স ও ওয়ার্ডবয়রা রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে থাকেন। এমনকি সময় সময় চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীকে জরুরি বিভাগে টেকনিশিয়ানের কাজ করতে দেখা যায়। অফিস চলাকালীন প্রায়ই ডাক্তাররা হাসপাতালে আগত রোগীদের লাইনে দাঁড় করিয়ে প্রাইভেট রোগী দেখায় ব্যস্ত থাকেন। হাসপাতালে কর্তব্য পালনকালীন কোনো কোনো ডাক্তার রোগীদেরকে বাইরে চেম্বারে দেখা করতে উৎসাহিত করেন। অভিযোগ রয়েছে, কিছু কিছু রিপ্রেজেন্টেটিভ ডাক্তারদের প্রতিমাসে তিন হাজার থেকে আট হাজার টাকা দিয়ে থাকেন তাদের কো¤পানীর ওষুধ প্রেসক্রাইব করার জন্য। এছাড়া ডাক্তাররা প্যাথলজি ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো থেকে চুক্তিমাফিক মাস শেষে কমিশনের টাকা একত্রে পেয়ে থাকেন বলে জানা যায়। হাসপাতালে ইনজুরি সার্টিফিকেটেরও রমরমা ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে। গোপন সূত্রে জানা যায়, কোনো কোনো ডাক্তার মামলার গুরুত্ব বাড়াতে সাধারণ আঘাতের স্থলে গুরুতর আঘাতের সার্টিফিকেট দেন ৫ থেকে ৮ হাজার টাকার বিনিময়ে। ফুলপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সংলগ্ন রাস্তার পাশে ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে ওঠেছে অনুমোদনহীন প্যাথলজি ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এসব প্যাথলজি ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কোনো কোনো মালিক ফুলপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চাকুরি করেন। একটি সংঘবদ্ধ দালালচক্র এসব প্যাথলজির পক্ষে কাজ করে। তারা আগত রোগীদের টেনে নিয়ে যায় তাদের প্যাথলজিতে। ওইসব প্যাথলজি থেকে কমিশনের লোভে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত ডাক্তাররা প্রয়োজনাতিরিক্ত লম্বা টেস্টের পরামর্শ দিয়ে থাকেন বলে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে জানা যায়। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ৫০ শয্যাবিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে গত ২০২২ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৩ সনের অক্টোবর পর্যন্ত বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসেন ১ লাখ ৯৮ হাজার ১৯০ জন। গড়ে প্রতিমাসে ১৬ হাজার ৫১৫ জন। জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নেন ৫৯ হাজার ৭৮৬ জন। গড়ে প্রতিমাসে ৪৪৪৮ জন। ভর্তি হয়ে সেবা নেন ১৯ হাজার ৬৯১ জন রোগী। গড়ে প্রতি মাসে ১৬৪০ জন। শয্যা সীমিত থাকায় জটিল রোগে আক্রান্ত অনেক রোগীরই ভর্তির সুযোগ ঘটে না। আবার কখনো কখনো শয্যা খালি থাকলেও ডাক্তাররা বাড়তি ঝামেলা মনে করে এসব রোগীকে রেফার্ড করেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। অর্থের অভাবে হতদরিদ্র অনেক রোগীই ময়মনসিংহে গিয়ে সেবা নিতে পারেন না। অভিযোগ রয়েছে, অপারেশন থিয়েটারটিতে গর্ভপাত এবং অবৈধ ভ্রূণ হত্যার মতো ঘটনা ঘটে। পাঁচ হাজার থেকে দশ হাজার টাকায় গোপন চুক্তিতে চলে এসব অবৈধ ভ্রূণ হত্যা। এসব এখন ওপেন সিক্রেট। বেশিরভাগ নার্স গর্ভপাতের ব্যবসায় জড়িত অভিযোগ থাকলেও নার্সিং সুপারভাইজার রাখি সায়মা তা অস্বীকার করে বলেন, আগে এগুলো হলেও বর্তমানে হচ্ছে না। এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে টিউবেকটমি ও ভেসেকটমি গ্রহণকারীরাও প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছে। বিভিন্ন অনিয়মের ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবীরের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার যোগদানের পর থেকে ইনজুরি সনদ সংক্রান্ত কোনো অনিয়ম হয়নি। জরুরি সেবায় চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখছি বলে তিনি জানান। ফুলপুর হাসপাতালে কোনো দালাল থাকার ব্যাপারে তিনি বলেন, দালালদের দৌরাত্ম্য আগের চেয়ে অনেক কমেছে। সম্পূর্ণ দালালমুক্ত করার চেষ্টা অব্যাহত আছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত