কেশবপুরে সরিষার ভালো ফলনের সম্ভাবনায় কৃষকের মুখে হাসি

৪ হাজার কৃষকের মধ্যে বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরণ

প্রকাশ : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  মশিয়ার রহমান, কেশবপুর (যশোর)

যশোরের কেশবপুর উপজেলায় হেমন্তের সকালে হালকা কুঁয়াশার চাঁদরে মোড়ানো সোনালি রোদের উষ্ণতায় মৌমাছিরা মধু আহরণে গুঞ্জন তুলেছে সরিষা খেতে। বিস্তৃত ফসলে মাঠজুড়ে হলুদের সমারোহ। নৈস্বর্গিক রূপের আবহাওয়ায় দিগন্ত ছুঁয়েছে। সরিষা ফুলের গন্ধে বিভোর সারা মাঠ। কেশবপুরের ১১টি ইউনিয়নের বিস্তৃত মাঠজুড়ে বারি সরিষা চাষের উৎসবে মেতেছেন কৃষকরা। সরিষার ভালো ফলনের সম্ভাবনায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, সরকারিভাবে এ বছর ৪ হাজার কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে। গত বছর এ উপজেলায় ১ হাজার ৫৭০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছিল। চলতি বছর সরিষার আবাদ হয়েছে ২ হাজার ৭৫ হেক্টর জমিতে। সে হিসেবে এ বছর সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ হাজার ৫৭০ হেক্টর জমি। গত বছরের চেয়ে এবছর বেড়ে ৫০৫ হেক্টর বেশি জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন কৃষকরা। কৃষকের মাঠে আগাম জাতের বারি সরিষা চাষে ভালো ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কেশবপুরের কৃষকরা বোরো আবাদের আগে একই জমিতে আগাম বারি-১৪, বারি-৯, বারি বীনা-৯, বারি-১৮, বারি-১৭ ও টরি-৭ জাতের সরিষা চাষ করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। আর সরিষার বাম্পার ফলন ঘরে তোলার সঙ্গে সঙ্গে কৃষি অধিদপ্তর কর্তৃক প্রদত্ত বার্ষিক লক্ষ্য মাত্রা অর্জিত করতে সক্ষম হয়। পাশাপাশি অধিক ফলনশীল বারী-১৪ ও বারি-৯ জাতের এই সরিষা চাষ করে কৃষকরা বোরো আবাদের খরচ উঠিয়ে নেয়। এ বছর নতুন করে টরি-৭, বারি-৯, বারি বীনা-৯, বারি-১৭ ও বারি- ১৮ জাতের উচ্চ ফলনশীল সরিষা চাষ শুরু করেছে। এসব জাতের সরিষা ৭০ থেকে ৮৫ দিনের মধ্যে কৃষকরা ঘরে তুলতে পারে। যার ফলে কৃষকরা সরিষা চাষের পরে খুব সহজে বোরো আবাদ করতে পারেন। যে কারণে উপজেলাব্যাপী কৃষকরা সরিষা চাষে ঝুঁকছেন বেশি। উপজেলার বাগদহা গ্রামের কৃষক আবদুল জলিল, হাবিবুর রহমান, জালাল মোড়ল, ওলিয়ার রহমান, নুর ইসলাম সানা, ইকবাল হোসেন, প্রতাপপুর গ্রামের আবদুল কুদ্দুস, কাকিলাখালী গ্রামের আফজাল হোসেন, দেউলি গ্রামের কৃষক আজিজুর রহমান, রেজাউল ইসলাম, শফিকুল ইসলাম, মজিদপুর গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম, আবদুস সাত্তার বলেন, প্রতি বছর সরিষার চাষ করা হয়। সরিষা চাষে অনেক লাভোবান হন তারা। ইরি বোরো মৌসুমের আগেই সরিষা তুলে সেই জমিতে বোরো ধানের আবাদ করে থাকেন কৃষকরা। তবে চলতি বছরে সরিষা চাষে বাম্পার ফলন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তারা। সাতবাড়িয়া গ্রামের কৃষক আলাউদ্দিন, ময়েজ উদ্দিন, ব্রহ্মকাটি গ্রামের তরিকুল ইসলাম, আবদুল মজিদ, বিশ্বনাথ, রামচন্দ্রপুর গ্রামের আবদুল সরদার, আজিজুর খাঁ তপন বসু বলেন, গত বছরের তুলনায় এবছরে বৃষ্টির পানি কম থাকলেও সরিষা ভালো ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বিঘাপ্রতি জমিতে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা খরচ করে প্রায় ৬ থেকে ৭ মণ সরিষা পাবে বলে তারা ধারণা করেছেন। বাজারে সরিষার দামও ভালো পাওয়া যাবে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদা আক্তার বলেন, সরিষা চাষে চলতি বছরে ১ হাজার ৫৭০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে এ পর্যন্ত ২ হাজার ৭৫ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ অর্জিত হয়েছে। অধিক দাম ও বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকরা সরিষার আবাদে ঝুঁকেছেন। এ বছর ৪ হাজার কৃষকের মাঝে সরকারিভাবে বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সরিষার ফলন ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা প্রতিনিয়ত এলাকায় গিয়ে কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে চলেছি।