অস্বাভাবিক হারে কমছে কাপ্তাই হ্রদের পানি

প্রকাশ : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

রাঙামাটি পার্বত্য জেলায় অবস্থিত দেশের অন্যতম বৃহৎ কৃত্তিম জলাধার কাপ্তাই হ্রদ। ১১ হাজার ১২২ বর্গকিলোমিটার আয়তনের বৃহৎ এই হ্রদে অস্বাভাবিক হারে কমতে শুরু করেছে পানির পরিমাণ।

১৯৬২ সালে কাপ্তাই বাঁধ তৈরির পর থেকে কখনো এমন পরিস্থিতি দেখা যায়নি। এদিকে কাপ্তাই বাঁধের জলকপাট খোলা না থাকলেও এত পানি কীভাবে কমছে কিংবা কোথায় যাচ্ছে তাই নিয়ে চিন্তা দেখা দিয়েছে কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের। কাপ্তাই হ্রদে পানির পরিমাণ কমাতে একদিকে যেমন বিদ্যুৎ উৎপাদনে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে, তেমনি জনজীবনে এর বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।

কাপ্তাই হ্রদের পাশে বসবাসকারী স্থানীয় বাসিন্দা মো. রফিক, জালাল উদ্দীন, মিলিপ্রু চাকমাসহ একাধিক বাসিন্দা জানান, বছরের বিভিন্ন মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদে পানির স্তর বাড়ে আবার অনেক সময় কমে। তবে এবারের চিত্র ভিন্ন। হঠাৎ করে অস্বাভাবিকভাবে কমছে কাপ্তাই হ্রদের পানি। এ বছর সেপ্টেম্বর মাসে কাপ্তাই হ্রদে পানি থাকার পর অক্টোবর মাস থেকে বৃষ্টি না থাকায় স্বাভাবিক নিয়মে কাপ্তাই হ্রদের পানি কমতে শুরু করে। তবে অন্যান্য বছর যে হারে কাপ্তাই হ্রদে পানি কমে এ বছর তার পরিমাণ অনেকটা বেশি।

সাধারণত কাপ্তাই হ্রদের পানি ১০৯ এমএসএল পৌঁছালে বাঁধের ঝুঁকি এড়াতে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জলকপাট খুলে দেওয়া হয়। তবে দুমাস ধরে জলকপাট বন্ধ থাকার পরও অস্বাভাবিকভাবে পানি কমতে থাকায় হ্রদের পাশে বসবাসরত বাসিন্দাদের চিন্তা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে কাপ্তাই হ্রদের ওপর নির্ভরশীল মানুষের জনজীবন বিপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এদিকে পরিবেশ প্রকৃতি নিয়ে কাজ করা রাঙামাটির গণমাধ্যমকর্মী শংকর হোড় জানান, কাপ্তাই প্রজেক্ট এর ৫টি ইউনিট চালু রেখে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হলেও কখনো কাপ্তাই হ্রদে এভাবে পানি কমেনি। কিন্তু হঠাৎ করে এ বছর দেখা যাচ্ছে প্রচুর পরিমাণ কমে যাচ্ছে। এটি অবশ্যই চিন্তার বিষয়।

দ্রুত পানি কমার কারণ খুঁজে বের করা জরুরি বলে জানান তিনি। এদিকে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, অন্য বছরের তুলনায় এ বছর কাপ্তাই হ্রদে পানি বেশি কমার ফলে নামিয়ে আনা হয়েছে কর্ণফুলী বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন। এ ছাড়া এত পানি কীভাবে কমছে তা নিয়েও চিন্তায় পড়েছে কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কয়সুল বারী জানান, যেহেতু বর্তমানে বছরের এই সময়টা শুষ্ক মৌসুম চলছে। এই সময়ে কাপ্তাই হ্রদে পানির পরিমাণ আসলে কমে আসে। তবে অস্বাভাবিক পানি কমে আসার অন্য কোনো কারণ আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে। এদিকে এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাপ্তাই কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এটিএম আব্দুজ্জাহের জানান, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে।

কাপ্তাই হ্রদে পানি কমার কোনো কারণ আছে কিনা সেটি একটি কমিটি গঠন করে খোঁজ নেওয়া হবে। সম্প্রতি কাপ্তাই জেটিঘাট ও রাঙামাটি সদর লঞ্চ ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, অস্বাভাবিকভাবে পানি কমতে থাকায় বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে যোগাযোগ ব্যবস্থা ও ব্যবসা খাতে।

লঞ্চ ও বোট চালকরা বলছেন, প্রতিবছর দুর্গম বাঘাইছড়ি, বরকল, জুড়াছড়ি উপজেলায় ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নৌযান চলাচল করতে পারতো তবে যেভাবে পানি কমছে এতে চলতি বছরের নভেম্বরের শেষদিকে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ফলে বাড়বে জনদুর্ভোগ।

প্রসঙ্গত, গত সেপ্টেম্বর মাসে কাপ্তাই হ্রদে পানি বাড়ার ফলে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ১৬টি জলকপাট দিয়ে ২ লাখ ৩৩ হাজার ৬৬৭ কিউসেক পানি অপসারণ করা হয়েছে। রুলকার্ভ অনুযায়ী নভেম্বর মাসে কাপ্তাই হ্রদে পানি থাকার কথা ১০৬ এমএসএল। তবে বর্তমানে পানি রয়েছে ৯৯ এমএসএল।