আদালতের নির্দেশ অমান্য করে চলছে ইটভাটা

প্রকাশ : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  গফরগাঁও (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি

ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য করে উপজেলার নিগুয়ারি ইউনিয়নে চামর্থা শামসুল হক মহিলা ফাজিল মাদ্রাসার পাশে চলছে বিবিবি নামে অবৈধ ইটভাটা। ফলে ইটভাটার কালো ধোঁয়া এবং ধুলাবালি আচ্ছন্ন হয়ে যাচ্ছে পরিবেশ এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এতে শ্বাসকষ্টজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন চামর্থা শামসুল হক মহিলা ফাজিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী। ইটভাটাটি একই ভৌগলিক অবস্থানে হলেও স্থানীয় প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালনের কারণে জনমনে ক্ষোভ বিরাজ করছে। নিগুয়ারি ইউনিয়নের চামর্থা গ্রামে শীলা নদীর তীরে বিবিবি ব্রিকস (আগের নাম এমবিবি ব্রিকস) প্রায় পাঁচ শত মিটারের মধ্যে শামসুল হক মহিলা ফাজিল মাদ্রাসা। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ সংশোধন) আইন ২০১৯ অনুযায়ী বিশেষ কোনো স্থাপনা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, রেলপথ, নৌপথ স্থান বা প্রতিষ্ঠান থেকে কমপক্ষে এক কিলোমিটার দূরে ইটভাটা স্থাপন করতে হবে।

কিন্তু চামর্থা বিবিবি ব্রিকস (আগের নাম এমবিবি ব্রিকস) উচ্চ আদালতের আদেশ অমান্য করে পরিবেশ দূষণ করে ভাটায় ইট তৈরি করে যাচ্ছে। এলাকাবাসী জানান, ২০১৮ সালে স্থানীয় ইউপি সদস্য হাবিবুল্লাহ শেখ, আসাদুল্লাহ, নুরুল্লাহ, শহীদুল্লাহ, মিজান ও ওয়াহিদুজামান নামে ব্যক্তিরা যৌথ মালিকানায় তিন ফসলি জমিতে বিবিবি ব্রিকস (এমবিবি ব্রিকস) অবৈধভাবে ইটভাটাটি গড়ে তোলেন। এই ইটভাটার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ফসলি জমি ব্যাপক ক্ষতি সাধনের কারণে এলাকাবাসী পরিবেশ অধিদপ্তর এবং জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেন। অভিযোগ করে বিচার না পেয়ে এলাকাবাসীর পক্ষে আব্দুল্লাহ হাসান নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি ২০২১ সালে হাইকোর্টে একটি রিট করেন (নম্বর-১০৪৬১/২০২১)। পরে হাইকোর্ট বিভাগ ২০২২ সালের ১৬ নভেম্বর ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসককে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে ইটভাটা বন্ধের জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। জেলা এবং উপজেলা প্রশাসন একাধিকবার অভিযান ও জরিমানা করলেও ইটভাটা আজও বন্ধ হয়নি। মালিক পক্ষ আদালতের আদেশ অমান্য করে ২০২২ সালে ইটভাটার নাম পরিবর্তন করে বিবিবি ব্রিকস নাম দিয়ে ইট পোড়ানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। আদালত অবমাননা সংক্রান্ত পিটিশন নং-২৪/২৩ এবং লিভ টু আপিল নং-২২৮৮/২৩ চলমান বা থাকা অবস্থায় চলছে এই ইটভাটা। এতে সাধারণ কৃষক, গ্রামবাসী একেবারেই কৃষিকাজ ও চাষাবাদ হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে ইউপি সদস্য হাবিবুল্লাহ শেখ বলেন, আমি ইটভাটা বন্ধ করে দিয়েছি। বিবিবি ইট ভাটার মালিক আমার ভাতিজা ওয়াহিদুজ্জান। এলাকাবাসীর পক্ষে আদালতে রিট পিটেশনকারী আব্দুল্লাহ হাসান জানান, ২০২১ সালে হাইকোর্টে অবৈধ এ ইট ভাটাটি বন্ধের নির্দেশে প্রদান করেন।

কিন্তু গফরগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবিদুর রহমান বার বার দায়িত্বহীনতার পরিচয় দেয়ার চেষ্টা করেন। যার ফলে এলাকাবাসী ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এছাড়াও বিভাগীয় পরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর ময়মনসিংহ বিভাগ দিলরুবা আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও এ বিষয়ে কোনো সাড়া পওয়া যাচ্ছে না। অজ্ঞাত কারণে সংশ্লিষ্ট বিভাগে কর্মকর্তারা নীরব ভূমিকা পালন করছেন বলে অভিযোগে তিনি বলেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবিদুর রহমান জানান, একাধিকবার অভিযান পরিচালনা করে এই ইট ভাটা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আদালতের আদেশ অমান্য করলে ইটভাটা মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।