সাতক্ষীরা মুক্ত দিবস আজ

প্রকাশ : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  শাহীন গোলদার, সাতক্ষীরা

আজ গৌরবোজ্জ্বল ৭ ডিসেম্বর। সাতক্ষীরা হানাদারমুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশকে হানাদারমুক্ত করতে সাতক্ষীরার শ্যামল মাটিকে রক্তে রঞ্জিত করে ছোট বড় অন্তত ৫০টি যুদ্ধে অংশ নেয় মুক্তিকামী দামাল ছেলেরা। অবশেষে আজকের এই দিনে হানাদারমুক্ত হয় সাতক্ষীরা। ১৯৭১ সালের এই দিনে মুক্তিযোদ্ধারা থ্রি নট থ্রি ও এসএলআর থেকে ফাঁকা গুলি ছুড়তে ছুড়তে সাতক্ষীরা শহরে প্রবেশ করে। উড়ানো হয় স্বাধীন বাংলার পতাকা। সন্তান হারানোর বেদনা ভুলে সেদিন মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে রাস্তায় নেমে বিজয় উল্লাসে মেতে ওঠেন মুক্তি পাগল মানুষ। ১৯৭১ সালের ২ মার্চ সাতক্ষীরা শহরে পাকিস্তানবিরোধী মিছিলে গুলিতে শহীদ হন আব্দুর রাজ্জাক। এর পরই রুখে দাঁড়ায় সাতক্ষীরার দামাল ছেলেরা। তারা যোগ দেন মহান মুক্তিযুদ্ধে। ৮ম ও ৯ম সেক্টরের অধীনে ভারতের বিভিন্ন এলাকায় ট্রেনিং শেষে ২৭ মে সাতক্ষীরার ভোমরা সীমান্তে প্রথম সম্মুখ যুদ্ধ শুরু হয়। এছাড়া টাউন শ্রীপুর, বৈকারী ও খানজিয়া সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হন আব্দুর রাজ্জাক, কাজল, খোকন, নাজমুল, নূর মোহাম্মদসহ ৩৩ জন মুক্তিযোদ্ধা। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে বিদ্যুতের আলো থেকে বিচ্ছিন্ন করতে ২৯ নভেম্বর টাইম বোমা দিয়ে শহরের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত পাওয়ার হাউস উড়িয়ে দেয় মুক্তিযোদ্ধারা। এতে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে যায় পাক হানাদার বাহিনী। রাতের আঁধারে বেড়ে যায় গুপ্ত হামলা। পিছু হটতে শুরু করে হানাদাররা। ৬ ডিসেম্বর রাতে মুক্তিযোদ্ধাদের হামলায় টিকতে না পেরে বাঁকাল, কদমতলা ও বেনেরপোতা ব্রিজ উড়িয়ে দিয়ে পাকিস্তানি বাহিনী সাতক্ষীরা থেকে পালিয়ে যায়। ৬ ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত হয় দেবহাটা ও কলারোয়া। ৭ ডিসেম্বর জয়ের উন্মাদনায় জ্বলে ওঠে সাতক্ষীরার মুক্তিকামী জনতা। এদিকে দেশ স্বাধীনের এতো বছর পরেও সাতক্ষীরার বধ্যভূমিগুলো রয়ে গেছে অরক্ষিত। মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী বীর সেনানীদের আজীবন স্মরণীয় করে রাখতে ওই সব বধ্যভূমিগুলো সংস্কারের পাশাপাশি স্মৃতিসৌধ নির্মাণের দাবি স্থানীয়দের। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে শত্রুদের গুলিতে সাতক্ষীরার যে সব বীরসন্তান শহীদ হন তারা হলেন- শহীদ আব্দুর রাজ্জাক, কাজল, খোকন, নাজমুল, হাফিজউদ্দিন, নুর মোহাম্মদ, আবু বকর, ইমদাদুল হক, জাকারিয়া, শাহাদাত হোসেন, আব্দুর রহমান, আমিনউদ্দিন গাজী, আবুল কালাম আজাদ, সুশীল কুমার, লোকমান হোসেন, আব্দুল ওহাব, দাউদ আলী, সামছুদ্দোহা খান, মুনসুর আলী, রুহুল আমীন, জবেদ আলী, শেখ হারুন অর রশিদ প্রমুখ। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ হুমায়ূন কবির জানান, ৭ ডিসেম্বর সাতক্ষীরা মুক্ত দিবসের তাৎপর্য নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে। তাহলে নতুন প্রজন্ম মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণায় নিজেদের গড়ে তুলতে পারবে। তিনি আরো বলেন, শহরের সরকারি বয়েজ স্কুলের পাশে একটি বধ্যভূমিতে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের জন্য মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি।