পার্বত্য জেলা বান্দরবানে পর্যটকের ভরা মৌসুম অক্টোবর থেকে জানুয়ারি। এ সময়ে মেঘের রাজ্য নীলাচল, নীলগিরিসহ জেলার বিভিন্ন পর্যটন স্পটগুলো পর্যটকের পদচারণায় মুখর থাকে। কিন্তু বিএনপির অবরোধ-হরতাল আর আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে বান্দরবানে ভরা মৌসুমে পর্যটক নেই। পর্যটক না থাকায় শহরের হোটেল-মোটেল রিসোর্টের পাশাপাশি বিপুল ক্ষতির মুখে পড়েছে পর্যটকবাহী যানবাহনের চালক ও শ্রমিকরা। দেশে শীতের শিশিরভেজা পরশের দেখা মিললেই পর্যটন মৌসুমের দুয়ার খোলে।
পর্যটন জেলা বান্দরবানের মেঘলা, নীলাচল, চিম্বুক, শৈলপ্রপাত, বগালেক, প্রান্তিক লেকসহ বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে বছরের অন্যান্য সময়ে তুলনায় এ সময় বেশি পর্যটকদের সমাগম হয়। জেলার পর্যটন স্পটগুলোও বান্দরবান জেলা শহর পর্যটকের পদচারণায় সকাল থেকে রাত অবধি মুখরিত থাকত। সপ্তাহের অন্যান্য দিনগুলো থেকে ছুটির দিনগুলোতে সে পদচারণা কয়েকগুণ বেশি হত। সচল হয় পর্যটকনির্ভর প্রতিষ্ঠানগুলো, ঘোরে বান্দরবানের অর্থনীতির চাকা। কিন্তু পর্যটকের ভরা মৌসুম শুরু হলে ও এইবার বাধ সেজেছে বিএনপির চলমান অবরোধ-হরতালের মতো কর্মসূচি। গত আগস্ট মাসে বান্দরবানে ভয়াবহ বন্যা এছাড়াও আঞ্চলিক সশস্ত্র দলের খুন, গুম ও অপহরণের মতো ঘটনায় বান্দরবানে এখন নেই পর্যটক। ভরা মৌসুমে পর্যটক না থাকায় হতাশ হোটেল-মোটেল রিসোর্টের ব্যবসায়ীরা। বান্দরবানের পর্যটন মোটেলের ইউনিট ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সোয়েব বলেন, টানা হরতাল ও অবরোধের কারণে বান্দরবানে পর্যটক নেই। পর্যটন মোটেলের ১৩টি এসি ও ১৪টি নন এসি রুম এই সময়ে বেশিরভাগ সময়ে খালি থাকছে। তিনি আরো বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই বান্দরবানে পর্যটক নেই বললেই চলে। আর পর্যটক না থাকায় ভরা এই মৌসুমে সব পর্যটন ব্যবসায়ীরাই ক্ষতির মুখে পড়ছেন। বান্দরবানের হলিডে ইন রিসোর্টের স্বত্বাধিকারী মো. জাকির হোসেন জানান, করোনার কারণে দীর্ঘদিন, এরপরে পাহাড়ের আঞ্চলিক সশস্ত্র দল কুকি ন্যাশনাল ফ্রন্টের নানা ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, আগস্ট মাসে ভয়াবহ বন্যা আর সর্বশেষ নভেম্বর মাস থেকে দেশব্যাপী হরতাল অবরোধে বান্দরবানে পর্যটন শিল্প পুরোপুরি ধ্বংসের পথে। তিনি আরো বলেন, বান্দরবানের পর্যটনশিল্প অনেক সমৃদ্ধ হয়েছে তবে পর্যটক না থাকায় ব্যবসায়ীরা দিন দিন মুখ থুবড়ে পড়ছেন। বান্দরবানের ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বিশ্বজিৎ দাশ বাপ্পা বলেন, ২২ সালের শেষ থেকে ২৩ সালের শেষ পর্যন্ত বান্দরবানে পর্যটক একদম কমে গেছে। পর্যটক সংখ্যা কমে যাওয়ায় এখানকার পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা যে পরিমাণ ক্ষতির মুখে পড়ছেন তা অবর্ণনীয়। অবরোধ-হরতালের মতো ধংসাত্মক কর্মসূচি বন্ধ হলে আর পাহাড়ের আঞ্চলিক সশস্ত্র দলগুলোর মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা হলে বান্দরবানের পর্যটন শিল্প আবার জেগে ওঠবে, আর বান্দরবানে ভ্রমণ করে পর্যটকরা অনাবিল শান্তি পাবে, সেইসঙ্গে পর্যটন ব্যবসায়ীরা নব জোয়ারে পর্যটন শিল্পকে উজ্জীবিত করবে। এদিকে পর্যটক না থাকায় বাস স্টেশনগুলোতে অনেকদিন ধরে বসে রয়েছে পর্যটকবাহী চাঁদের গাড়িগুলো। জেলায় পর্যটকদের ভ্রমণের জন্য পর্যটকবাহী ৪৫০টি চাঁদের গাড়ি এবং সেখানে কর্মরত ৭৫০ জন শ্রমিক এখন বেকার হয়ে পড়েছেন। পর্যটকবাহী চাঁদের গাড়ির চালক মো. জামাল হোসেন বলেন, এক সময়ে চাঁদের গাড়িগুলোতে আমরা দিনে দুই-তিনটি ট্রিপ (ভাড়া) পেতাম আর এখন পর্যটক না থাকায় মাসে একটি ট্রিপ পেতেও কষ্ট হচ্ছে।
বান্দরবান মাইক্রোবাস, জিপ ও পিকআপ শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. ইকবাল জানান, পর্যটক না থাকায় বান্দরবানে বর্তমানে পর্যটকবাহী ৪৫০টি চাঁদের গাড়ি এখন প্রায় বেকার, আর গাড়িগুলোর সঙ্গে জড়িত প্রায় ৭৫০ জন শ্রমিক অর্থাভাবে প্রচুর কষ্টে রয়েছে। বান্দরবানের আবাসিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অমল কান্তি দাশ বলেন, বান্দরবানে ১২০টিরও বেশি হোটেল-মোটেল আর রিসোর্ট রয়েছে, যার মধ্যে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার পর্যটক থাকতে পারে। কিন্তু অবরোধ-হরতালের কারণে পর্যটন মৌসুমে বান্দরবানে পর্যটক নেই। এদিকে পর্যটক না থাকায় প্রতিমাসে বিদ্যুৎ বিল, কর্মচারীদের বেতন, খাবারসহ নানা ধরনের খরচ দিতে গিয়ে মাস শেষে প্রচুর লোকসান গুনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। তিনি আরো বলেন, পর্যটক না থাকায় মাসে সবগুলো হোটেল-মোটেল আর রিসোর্টগুলোর প্রায় ১০ থেকে ১৫ কোটি টাকা।