ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট

নওগাঁয় দেড় বছরেও চালু হয়নি, চুরি হচ্ছে সরঞ্জাম

প্রকাশ : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আব্বাস আলী, নওগাঁ

নওগাঁ পৌরবাসীকে সুপেয় পানি সরবরাহে কোটি কোটি টাকায় ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণ করা হলেও দেড় বছরেও চালু হয়নি। ফলে পৌরবাসী যেমন একদিকে সুপেয় পানি পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অপরদিকে এর অনেক যন্ত্রাংশ হারিয়ে যাচ্ছে। এমনকি শ্যাওলা পড়ে মরিচা ধরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে অনেক যন্ত্রাংশ। কবে চালু হবে এ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট আর বিশুদ্ধ পানি পাবে পৌরবাসী তা অনিশ্চিত। দ্রুত এ প্রকল্পটি চালু করার দাবি পৌরবাসীর। নওগাঁ পৌরসভা সূত্রে জানা যায়- ১৯৬৩ সালে পৌরসভা স্থাপিত হয়। এরপর ১৯৮৯ সালে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত হয়। ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত পৌরসভাটির আয়তন ৩৮ বর্গকিলোমিটার। পৌরসভা প্রথম শ্রেণির হলেও পৌরবাসীর বিশুদ্ধ পানির কষ্ট দীর্ঘদিনে। পৌরসভা থেকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হবে, এমন একটি প্রকল্পের আশ্বাসও পাচ্ছিলেন পৌরবাসিন্দা। এ সংকট সমাধানে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ‘৩৭ জেলা শহরে পানি সরবরাহ প্রকল্প’ থেকে একটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট বরাদ্দ আসে। ২০১৬ সালের ১৯ জুলাই পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে শহরের বয়েজহোম পাড়ায় নির্মাণকাজ শুরু হয়। যা ৭ কোটি ২১ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। প্রকল্পের কাজটি ২০২১ সালের ৩০ মে সম্পন্ন হয়। প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পর পরীক্ষামূলকভাবে এর কার্যকারিতাও যাচাই করা হয়। প্রতি ঘণ্টায় যার পানি উৎপাদন ক্ষমতা সাড়ে ৩ লাখ লিটার এবং ২০ কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত সুবিধা পাবে। ২০২২ সালের ২৪ এপ্রিল পৌর কর্তৃপক্ষকে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট হস্তান্তর করা হয়। পৌর কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তর করার দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও আজও তা চালু করা হয়নি। পৌরবাসীর অভিযোগ- পৌরসভা থেকে যে পানি সরবরাহ করা হয় তা আয়রন যুক্ত এবং নোংরা। প্রথম শ্রেণির পৌরসভায় নিয়মিত পানি বিল পরিশোধ করা হলেও বিশুদ্ধ পানির সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট প্রকল্পটি কোনো কাজে আসছে না। পৌরবাসী আশ্বাস পেলেও প্রতিকার মিলছে না। দ্রুত এ সমস্যা সমাধান চান পৌরবাসী। সরেজমিন দেখা গেছে- ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের হাউজগুলো পানি জমে আছে। দীর্ঘদিন পানি জমে থাকায় পানিতে নোংরা জমেছে। আর নোংরা পানিতে হয়েছে শ্যাওলা। পানি থেকে গন্ধ বের হচ্ছে। এছাড়া লোহাগুলোতে মরিচা ধরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কোটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টটি চালু না হওয়ায় শ্যাওলা পড়ে মরিচা ধরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে অনেক যন্ত্রাংশ। অনেক যন্ত্রাংশ হারিয়ে গেছে। শহরের বয়েজহোম পাড়ায় বাসিন্দা শাহ জাহান আলী বলেন- পৌরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল বিশুদ্ধ পানির। সে লক্ষ্যে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টটি নির্মাণ করা হয়। কিন্তু তা কোনো কাজেই আসছে না। ভবনটি দীর্ঘদিন থেকে অকেজো হয়ে পড়ে আছে। অথচ এটি চালু করা হলে আমরা বিশুদ্ধ পানি পাব। কিন্তু প্রতিমাসে আমাদের পানির বিল দিতে হচ্ছে। বিনিময়ে পাওয়া যাচ্ছে আয়রণ যুক্ত নোংরা পানি। আরেক বাসিন্দা আরমান হোসেন বলেন- কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে এখানে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টটি নির্মাণ করা হয়েছে। দীর্ঘদিন চালু না থাকায় অনেক যন্ত্রাংশ হারিয়ে যাচ্ছে। আর এটি যদি চালু করা না হয়, তাহলে নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।

আবারো বাড়তি টাকা খরচ করে ঠিক করা হতে পারে। জয় হোসেন নামে আরেক বাসিন্দা বলেন- বিশুদ্ধ কবে পাব তা অনিশ্চিত। বাড়তি টাকা খরচ করে আমাদের বিশুদ্ধ পানি কিনে খেতে হচ্ছে। অথচ পৌরসভাকে আমরা প্রতিমাসেই পানির বিল পরিশোধ করতে হয়। আমরা চাই দ্রুত সমস্যা সমাধান করে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হোক।

নওগাঁ জনস্বাস্থ্য বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহমুদ আলম বলেন, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টটি আমরা চালু করে বুঝিয়ে দিয়েছি। তবে কেন চালু করছে না তা পৌরসভা বলতে পারবে। আর যদি এভাবে পড়ে থাকে তাহলে নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। নওগাঁ পৌরসভার মেয়র মো. নজমুল হক সনি বলেন, পৌর এলাকায় যেসব পাইপ দিয়ে পানি সরবরাহ করা হয়, সেগুলো সবই পুরাতন। ফলে বাসাবাড়িতে পুরাতন পাইপগুলো দিয়ে সুপেয় পানি সরবরাহ করা সম্ভব না হওয়ায় প্রকল্পটি চালু করা যাচ্ছে না। নতুন পাইপ স্থাপনে প্রকল্পে কাছে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। শিগগিরই বরাদ্দ পাওয়ার আশা। বরাদ্দ সাপেক্ষে পাইপ লাইনের কাজ শুরু হবে।