ভাঙা কাঁচে স্বপ্ন আঁকেন আমির হোসেন

প্রকাশ : ১০ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

চোখজুড়ে টলমল করছে পানি, তবুও এক টুকরো কাঁচ পেলেই মুখে তৃপ্ত হাসি দেখা যায় আমির হোসেনের। অভাবের তাড়নায় কাজের খোঁজে বছর বিশেক আগে লক্ষ্মীপুরে আসেন তিনি। স্ত্রী, তিন মেয়ে আর এক ছেলেকে নিয়ে ভাড়ায় থাকেন লক্ষ্মীপুর পৌর শহরের ডিবি রোড এলাকার হামিদ মাস্টারের পুরোনো বাড়িতে। প্রায় ২০ বছর ধরে ভাঙা কাঁচ কুড়িয়ে সংসার চালাচ্ছেন আমির। আমির হোসেনের গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে। বাবার বাড়িতে এক টুকরো সম্পত্তি না থাকায় স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে চলে আসেন লক্ষ্মীপুর। স্ত্রী-সন্তানদের মুখে আহার জোগাতে বিশ বছর ধরেই ভাঙা কাঁচে স্বপ্ন আঁকেন তিনি। আটানা (পঞ্চাশ পয়সা) কেজিতে ভাঙা কাঁচ বিক্রি শুরু করেন তিনি। এখন দেড় টাকা কেজিতে ভাঙা কাঁচ বিক্রি করে প্রতিদিন তার আয় হয় দেড়শত থেকে দুইশত টাকা। শহরের অলি-গলি ঘুরে ভাঙা কাঁচ কুড়িয়ে ভাঙাড়ি দোকানে বিক্রি করে কোনোভাবে চালান পাঁচ সদস্যের সংসার। প্রতিনিয়ত অভাবের তাড়নায় চাপা পড়ে তাদের জীবনের কোলাহল। দূর থেকে শহরের মায়াময় আলো ছড়ানো বাতিগুলো তাদের জীবনকে রাঙিয়ে তোলে না। অর্ধাহার-অনাহারে কাটে তাদের দিন। কেমন আছেন জানতে চাইলে হাসি মুখে আমির হোসেন তবুও বলেন বালা (ভালো) আছি। আমির হোসেন বলেন, প্রতিদিন সকালে এক টুকরো ভাঙা কাঁচের খোঁজে ঘর থেকে বেড়িয়ে পড়েন তিনি। কোনোদিন ৪০ কেজি, কোনোদিন তিন মণ আবার কোনোদিন খালি হাতেও ফিরতে হয় তাকে। বাড়িতে তীর্থের কাকের মতো খাবারের আশায় বসে থাকে তার পরিবারের সদস্যরা। কাঁচ কুড়িয়ে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার স্বপ্নও দেখেন তিনি। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, বড় দুই মেয়েকে বিয়ে দিলেও অর্থাভাবে জামাতারা তাড়িয়ে দিলে তারাও থাকেন তার কাছেই। এক ছেলে ও এক মেয়ে মাদ্রাসায় পড়াশুনা করে। জাতীয় পরিচয়পত্র নোয়াখালীর হওয়ায় ওএমএস বা সরকারি কোনো সহায়তাও পাচ্ছেন না তিনি। লক্ষ্মীপুর পৌরসভার মেয়র মোজাম্মেল হায়দার মাসুম ভূঁইয়া বলেন, জাতীয়পত্র লক্ষ্মীপুরের না হওয়ায় তাকে ভাতার আওতাভুক্ত করা যাচ্ছে না। তবে সরকারি অন্যান্য সহায়তা দেয়ার কথা জানালেন এই জনপ্রতিনিধি। লক্ষ্মীপুর জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ নুরুল হুদা পাটোয়ারী জানালেন, আমির হোসেন যদি তার ব্যবসা প্রসারিত করতে চায় সেক্ষেত্রে সমাজসেবা তাকে সহযোগিতা করবে।