ঢাকা ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আজ কুষ্টিয়া মুক্ত দিবস

আজ কুষ্টিয়া মুক্ত দিবস

আজ ১১ ডিসেম্বর সোমবার। ১৯৭১ সালের এই দিনে কুষ্টিয়া জেলার মুক্তি সেনারা রক্ত সংগ্রাম করে পাকিস্তানি বাহিনীর হাত থেকে কুষ্টিয়াকে মুক্ত করেছিলেন। অত্যাধুনিক অস্ত্রেশস্ত্রে সজ্জিত হানাদার পাকসেনার বিরুদ্ধে সাহসী বাঙালি তরুণ মুক্তিযোদ্ধারা অমিত তেজে অসীম সাহসিকতার সঙ্গে ছোট-বড় ২২টি যুদ্ধ করে কুষ্টিয়ার পবিত্র মাটি পাকিস্তানি হানাদার সেনাদের হটিয়ে মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছিল। হাজার হাজার মুক্তিকামী মানুষের গগনবিদারী ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে সেদিন কুষ্টিয়ার আকাশ-বাতাস মুখোরিত হয়ে উঠেছিল। পথে-প্রান্তরে গড়ে তোলা হয়েছিল বেরিকেড। লাঠি-সড়কি, ঢাল-তলোয়ার নিয়ে বিভিন্ন গ্রাম থেকে মানুষ ছুটে এসেছিল কুষ্টিয়া শহরে। মুক্ত দিবস উপলক্ষ্যে আজ কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড ইউনিট, জেলা আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনসহ একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি কুষ্টিয়া শাখা বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সকালে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক এহতেশাম রেজা, পুলিশ সুপার এএইচএম আবদুর রকিব, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড ইউনিট, জেলা আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠন কুষ্টিয়া কালেক্টরেট চত্বরে শহীদদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শহীদ বেদিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করবেন। ঐতিহাসিক ৭ মার্চে রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখমুজিবর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণে সেদিন সেসব মানুষের চোখেমুখে ছিল মুক্তির নেশা, প্রাণে ছিল বঙ্গবন্ধুর শেষ উচ্চারণ-‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ মুক্তির সনদ উচ্চারণকে বুকে ধারণ করে সারা দেশের ন্যায় কুষ্টিয়ার মুক্তিকামী মানুষও প্রস্তুতি নেয় মুক্তির পথ অন্নেষণে। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ যুদ্ধ পরিকল্পনা হিসেবে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ২৭ বেলুচ রেজিমেন্টের এক কোম্পানি সৈন্য ২৫ মার্চ রাতে যশোর সেনানিবাস থেকে কুষ্টিয়া এসে অবস্থান গ্রহণ করে। মেজর আবু ওসমান পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে কুষ্টিয়ার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলাপ করে ক্যাপঃ আযম চৌধুরীকে যশোরে ঝিকরগাছায় প্রেরণ করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান নেয়ার জন্য। স্বাধীনতাপ্রিয় কুষ্টিয়ার মানুষ পাকিস্তানি বাহিনীর এ জাতীয় কার্যক্রম সেদিন মেনে নিতে পারেনি। সান্ধ্য আইন ভেঙে তারা বেরিয়ে পড়ে রাস্তায়। যুদ্ধকালিন সময়ে বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলা ৮নং সেকটরের সেক্টর কমান্ডার হিসেবে মেজর আবু ওসমান চৌধুরী দায়িত্ব পালন করেন। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ৩০ মার্চ ভোর ৪টায় তিন দিক থেকে অতর্কিতভাবে কুষ্টিয়ায় আক্রমণ শুরু হয়। স্থানীয় হাজার হাজার জনগণের গগনবিদারী‘ জয় বাংলা’ জয়ধ্বনিতে শত্রু পক্ষের মনোবল মারাত্মকভাবে ভেঙে পড়ে। মাত্র এক ঘণ্টা তুমুল যুদ্ধের পর মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি বাহিনীর দখলে থাকা কুষ্টিয়া পুলিশ লাইন্স দখল করে নেয়। ৩১ মার্চ তুমুল যুদ্ধ চলে। পাকিস্তানি বাহিনী দুটি জিপ ও একটি ডজ গাড়ি নিয়ে কুষ্টিয়া থেকে পালানোর সময় গাড়াগঞ্জের ব্রিজের গর্তে গাড়ি দুটো পড়ে গিয়ে মেজর শোয়েবসহ শত্রু সেনারা মারা যায়। ১ এপ্রিল কুষ্টিয়া সম্পূর্ণ রূপে শত্রুমুক্ত হয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে চলে যায়। এই যুদ্ধে চারজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং অনেকে আহত হন। দীর্ঘ ১৭ দিন মুক্ত থাকার পর কুষ্টিয়া পুনরায় পাকিস্তানি বাহিনীর দখলে চলে যায়। এর পর পাকিস্তানি সেনারা শহরে প্রবেশ করেই অগ্নিসংযোগ, গণহত্যা এবং ত্রাসের রাজত্ব চালিয়ে যায়। ১০ ডিসেম্বর সকালে কুষ্টিয়া শহরের দক্ষিণে চৌড়হাস জিকে ক্যানেলের ব্রিজের উত্তর পাশে মেইন রাস্তায় মুক্তিবাহিনী-মিত্র বাহিনী যৌথভাবে পাকিস্তান বাহিনীর সঙ্গে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়। এখানেও মিত্র বাহিনীর ৭০ জন শহীদ হন। ১০ ডিসেম্বর সন্ধ্যা পর্যন্ত কুষ্টিয়া জেলার সমস্ত এলাকা স্বাধীন ও শত্রুমুক্ত হয়। ১১ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া শহর, পোড়াদহ, মিরপুর, ভেড়ামারা এলাকা স্বাধীন শত্রু মুক্ত হয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত