ঢাকা ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ফলন কম

বোনা আমন চাষে আগ্রহ কমছে কৃষকের

বোনা আমন চাষে আগ্রহ কমছে কৃষকের

চলতি মৌসুমে পাবনায় পুরোদমে চলছে বোনা আমন ধান কাটা-মাড়াই। এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে ধান কাটার কাজ। ফলন কম হওয়া এবং প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে পাবনার বিল অঞ্চলে কমছে বোনা আমনের চাষ। উফশি জাত না থাকায় চাষিরা এ ধান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন। বিগত চার দশকে এ জেলা থেকে হারিয়ে গেছে প্রায় অর্ধশত বাহারি বোনা আমনের জাত। কৃষকের হাতে উফশি জাত থাকলে বিল অধ্যুষিত পাবনা জেলায় বোনা আমন চাষে বিপ্লব ঘটত বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। চলতি বছর জেলায় ৩৪ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে বোনা আমন চাষ হয়েছে। তিন বছর আগে চাষ হয়েছে ৩৯ হাজার হেক্টর জমিতে, পাঁচ বছর আগে চাষ হতো ৪২ হাজার হেক্টর জমিতে। ১০ বছর আগে চাষ হতো ৪৩ হাজার হেক্টর জমিতে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, পাবনার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, বেড়া, সাঁথিয়া, ফরিদুপর, সুজানগর উপজেলায় বেশি পরিমাণ বোনা আমন ধান চাষ হয়ে থাকে। কারণ এসব উপজেলায় বিলের পরিমাণ বেশি। কৃষি বিভাগের হিসাবে দেখা যায়, ১০ বছরের মধ্যে ৯ হাজার হেক্টর জমিতে কমেছে বোনা আমনের চাষ। বোনা আমনের ক্ষেতগুলোতে এখন অন্য জাতের ধান চাষ হচ্ছে। প্রবীণ চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আমন ধানের বীজ ছিটিয়ে বোনা হয়। বোরো ধান কাটার পর বৈশাখ মাসের দিকে একটা চাষ দিয়ে এ ধানের বীজ ছিটিয়ে দিতে হয়। মই দেওয়ারও দরকার পড়ে না। আর জমি নরম থাকলে চাষেরও দরকার হয় না। শুধু ছিটিয়ে দিলেই হয়। এমনকি কোনো সার-কীটনাশকও লাগে না। বোনা আমন ধানে প্রচুর পরিমাণ নাড়া বা জ্বালানি পাওয়া যায়। এ নাড়া বিভিন্ন ফসলের ক্ষেতেও বিছিয়ে দেওয়া হয়। আবার নাড়ার অংশ বিশেষ ক্ষেতে থেকে যায় যা জৈব সারের কাজ করে। এ ধান ক্ষেতে আপনা-আপনি বেড়ে ওঠে। বিলে আট- দশ ফুটের মতো পানি হয়। এ জাতের ধানগাছ তার চেয়েও বড় হয়। বানের পানির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়ে ওঠে বোনা আমন ধান। কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে পাকা ধান কাটা হয়। একে বাওয়া আমন, আছরা আমন, গভীর জলের আমন ধানও বলা হয়। কৃষি কর্মকর্তারা জানান, দেশে জনসংখ্যা বাড়ছে এবং এ কারণে খাদ্য চাহিদাও বাড়ছে। অন্যদিকে চাষযোগ্য জমির পরিমাণ আশঙ্কাজনক কমার কারণে অল্প জমিতে ধানের উৎপাদন বাড়াতে হচ্ছে। কিন্তু বোনা আমন ধানের ফলন কম। এ কারণেই মূলত বোনা আমনের চাষ কমছে। চাটমোহর উপজেলার চলনবিল, সাঁথিয়ার বিল গ্যারকা ও সুজানগর উপজেলার গাজনা বিলপাড়ের বেশ কিছু চাষি জানান, জমিগুলো এখন রাসায়নিক সারে নষ্ট হচ্ছে। তাই জমির প্রাণ বাঁচাতে বোনা আমন জাতের ধান চাষ জরুরি হয়ে পড়েছে। কারণ বোনা আমন চাষে সার-বিষ লাগে না উপরন্তু নাড়া পচলে তা থেকে থেকে জৈব সার তৈরি হয়। এতে জমিগুলোর জৈব উপাদান বৃদ্ধি পায়। বিল গ্যারকা এলাকার প্রবীণ চাষি জানে আলম বলেন, এক সময় প্রতিটি গ্রামেই গভীর পানিতে এ ধান চাষ হতো। তবে হঠাৎ বন্যা, ঠিক সময়ে বর্ষার পানি না আসা ও ফলন কম হওয়ায় আমনের চাষ কমে আসছে। কৃষক উন্নয়ন সোসাইটি পাবনার সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান কুল ময়েজ বলেন, সময়ের প্রয়োজনে বোনা আমন ধান নিয়ে গবেষণা ও উন্নত জাত উদ্ভাবন জরুরি।

এক্ষেত্রে আগের জাতের চেয়ে ফলন বেশি হতে হবে। কম সময়ে বেশি ফলনের জাত হতে হবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পাবনার উপ-পরিচালক ড. জামাল উদ্দিন বলেন, বোনা আমন ধানের উন্নত জাত উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণ হলে দেশে ধানের উৎপাদন আরো বাড়বে। এতে উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় চাষিরাও লাভবান হবেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত