আজ আদমদীঘি হানাদার মুক্ত দিবস

প্রকাশ : ১২ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আদমদীঘি (বগুড়া) প্রতিনিধি

আজ ১২ ডিসেম্বর। বগুড়ার আদমদীঘি থানা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাত থেকে মুক্ত হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধে দীর্ঘ ৯ মাস বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা আক্রমণে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পালিয়ে যাওয়ায় ১৯৭১ সালের এই দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধারা বিজয়ের পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে আদমদীঘি থানা সদরকে পাকিস্তানি হানাদার মুক্ত ঘোষণা করেন। আদমদীঘি থানা এলাকায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এবং এ দেশীয় দোসর রাজাকারদের পাশাপাশি বিহারিদের (অবাঙালি) অত্যাচার ছিল অবর্ণনীয়। ১৯৭১ সালের এপ্রিলের শুরু থেকেই বিভিন্ন গ্রামে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, মানুষ হত্যাসহ ধর্ষণের ঘটনা ঘটিয়েছিল পাকিস্তানি হানাদাররা। সান্তাহার রেলওয়ে জংশন শহরে ৯ মাস কোনো বাঙালিকে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। বাঙালি দেখা মাত্রই চালানো হতো নির্মম নির্যাতন।

মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই মুক্তিযুদ্ধকালীন কমান্ডার মরহুম এলকে আবুল হোসেন, ফজলুল হক, আজিজার রহমান নান্টু, মেজর আব্দুল হাকিম, মুনছুর রহমান, নাজির হোসেন, আব্বাস আলীসহ অন্যান্য যুদ্ধকালিন কমান্ডারদের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি হানাদারদের সাথে আদমদীঘির কুসুম্বী গ্রাম, রেলস্টেশন, নশরতপুর, মথুরাপুর গাদোঘাট রেলওয়ে ব্রিজ, সান্তাহার রেলওয়ে জংশন শহর রানীনগরসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে গেরিলা ও সম্মুখ যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এতে বেশ কিছু পাকসেনা ও রাজাকার নিহত হয়। শুরু থেকে রক্তদহ বিল, বোদলা, পালসা, বিহিগ্রাম, বিষ্ণপুর, গণিপুর, কদমা, বেজার, থলবড়বরিয়া গ্রাম ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের নিরাপদ মুক্ত এলাকা। মুক্তিযোদ্ধাদের চারিদিকের আক্রমণে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পর্যুদস্ত হয়ে ১৯৭১ সালের ১২ ডিসেম্বর সকাল থেকেই আদমদীঘি থানা সদর থেকে সান্তাহার রেলওয়ে জংশন শহরে পালিয়ে একত্রিত হয়। অবশেষে ওইদিন দুপুরে আদমদীঘি থানা সদরে বিজয়ের পতাকা উড়িয়ে আদমদীঘি থানা সদরকে হানাদার মুক্ত ঘোষনা করেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। এর দুইদিন পর ১৪ ডিসেম্বর সান্তাহারে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমন তীব্রতার কারনে সান্তাহার রেলওয়ে জংশন শহরে টিকতে না পেরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নওগাঁ অভিমুখে পালিয়ে যাওয়ায় সান্তাহার জংশন শহর মুক্ত হয় ১৪ ডিসেম্বর। মহান স্বাধীনতার পুর্ব মুহুর্তে পাকসেনারা আদমদীঘির শ্বশানঘাটিতে চারজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে শারীরিক নির্যাতনের পর প্রকাশ্যে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যাসহ দীর্ঘ ৯ মাসে এই উপজেলায় ২৫ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। বীর মুক্তিযোদ্ধা কাবিল উদ্দিন, তহির উদ্দিনসহ অনেকের দাবি ১২ ডিসেম্বর আদমদীঘি সদর হানাদান মুক্ত দিবসটি ব্যাপকভাবে পালন করে আগামী প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধে এই সঠিক ইতিহাস তুলে ধরা প্রায়োজন।