আজ বুধবার পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে ভান্ডারিয়ার বীর মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে চূড়ান্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। শহরের বহমান পোনা নদীর তীরে পুরোনো স্টিমারঘাট এলাকায় মুক্তিযুদ্ধকালীন কমান্ডার সুবেদার আব্দুল আজিজ সিকদারের নেতৃত্বে অর্ধশত সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা একত্রিত হয়েছিলেন। এরপর সংগঠিত মুক্তিযোদ্ধারা পোনা নদীতে অবস্থানরত পাকহানাদারের গানবোর্ড লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ শুরু করে। এর জবাবে হানাদার বাহিনীও পাল্টা গুলি চালায়। সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধারা পোনা নদীতে হানাদার বাহিনীর গানবোট ডুবিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হন। এরপর মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান বদলে ভান্ডারিয়া শহর থেকে প্রায় চার কিলোমিটার ভিটাবাড়িয়া গ্রামের পোনা নদীর মোহনার শিয়ালকাঠি এলাকায় নতুন করে প্রতিরোধের জন্য ঘাঁটি গড়েন। এ সময় তাদের সাথে আরও কিছু মুক্তিযোদ্ধা যোগ দিলে তাদের শক্তি বৃদ্ধি পায়। মুক্তিযোদ্ধারা হানাদারদের গানবোট ডুবিয়ে হানাদারদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালায়। এ সময় মুক্তিযোদ্ধাদের মুহুর্মুহু গুলিতে পাকিস্তানি বাহিনীর একটি গানবোটের তলা ছিদ্র হয়ে কঁচা নদীতে ডুবে যায়। এ সময় পাকিস্তানি হানাদাররা অন্য একটি গানবোটে পিছু হটে যায়। তবে মুক্তিযোদ্ধাদের সশস্ত্র আক্রমণে ঘটনাস্থলে পাকিস্তানি হানাদারের কয়েকজন সদস্য নিহত হয়। এরপর স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা বিজয় মিছিল করে ভাণ্ডারিয়া শহরে প্রবেশ করলেই ভান্ডারিয়া সম্পূর্ণ হানাদার মুক্ত হয়। সব মুক্তিযোদ্ধা শহরে প্রবেশ করলে সর্বস্তরের জনতা মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে নিয়ে জয়বাংলা ধ্বনিতে বিজয় মিছিলে মুখরিত করে। এ বিষয়ে সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা খান এনায়েত করিম জানান, আজও আমরা ভান্ডারিয়ায় বধ্যভূমি সংরক্ষণ করতে পারিনি। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চত্বরে এক কর্ণারে তৎকালীন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ৫০ থেকে ৬০ জন লোককে হত্যা করে ফেলে রেখে ছিল। পরবর্তীতে ওই জমি বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ করে সরকারি হাসপাতাল চত্বরের ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়। আমরা একাধিকবার বধ্যভূমি সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছিলাম। সরকারি কর্মকর্তাদের সহয়তা না পাওয়ায় বধ্যভূমিতে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করতে পারিনি।