ঢাকা ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

শীতলপাটি বিক্রি করে চলে ৬০০ পরিবারের সংসার

শীতলপাটি বিক্রি করে চলে ৬০০ পরিবারের সংসার

ঝালকাঠির বহুকালের পুরোনো ঐতিহ্য শীতলপাটি। একটা সময় ছিল যখন গ্রামের বাড়িতে অতিথি এলে তাকে বসতে দেওয়া হতো শীতলপাটিতে। গৃহকর্তার বসার জন্যও ব্যবস্থা থাকত এই বিশেষ পাটিতে। বর্তমানে হিন্দুদের বিয়ের অন্যতম অনুষঙ্গ এই শীতলপাটি। দেশের যে কয়টি জেলায় শীতলপাটি তৈরি হয় তার মধ্যে ঝালকাঠি জেলা অন্যতম। দেশ-বিদেশে ঝালকাঠির শীতলপাটি ব্যাপকভাবে সমাদৃত।

ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার মোল্লার হাট, তিমিরকাঠি, কামদেবপুর সুবিধপুর প্রভৃতি জায়গায় শীতলপাটি তৈরি ও উপকরণ চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে পাটিকররা। রাজাপুর উপজেলার ৬নং মঠবাড়ি ইউনিয়ন হাইলাকাঠি, ২নং শুক্তাগড় ইউনিয়নের ডহশংকর সাংগর ও জগন্নাথপুর গ্রামে শিশু, কিশোর-কিশোরী থেকে শুরু করে ৭০-৮০ বছরের বৃদ্ধা পাটিকরদের নিপুণ কারুতে শীতলপাটি তৈরি করে ঝালকাঠি জেলায় প্রায় ৬০০ (ছয়শত) পরিবারের চলে সংসার। তবে ডিসি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এক বছর আগে সরকারি তালিকাভুক্ত ৭৯টি পরিবারের নামের তালিকা তাদের কাছে রয়েছে। তবে পাটিকর সমিতির পরিচালক জানান, তাদের প্রতিবছর পাটিকরদের নিয়ে একটা আয়োজন থাকে সেখানে জেলার সব পাটিকরদের নিমন্ত্রণ করা হয়। সেই সূত্রে জেলায় ৬০০টি পরিবার রয়েছে। জেলা পাটিকরদের দুটি সরকারি রেজিস্ট্রেশনভুক্ত সংগঠন রয়েছে একটি হলো রাজাপুর উপজেলায় আশার আলো শীতলপাটি উন্নয়ন প্রকল্প সমিতি। এটি ২০০৭ সালে সেনাবাহিনী তৈরি করে দেন পাটিকরদের জন্য। এরপর তারা ২০১২ সালে সরকারি রেজিস্ট্রেশন পান। অপরটি হলো নলছিটি উপজেলায় শীতলপাটি শিল্প যুব ফাউন্ডেশন। তারা ২০২২ সালে সরকারি রেজিস্ট্রেশন পান তবে ভবনের কাজ চলমান আছে এখন পর্যন্ত শেষ হয়নি। মঠবাড়ি ইউনিয়নের ছোট হাইলাকাঠি ও ডহরশংকর দুটিই শীতলপাটির গ্রাম।

কবি জীবনানন্দ দাশের কবিতার সেই ধানসিঁড়ি নদী পাড়ি দিয়ে কিছুদূর গেলেই বিষখালী নদীর তীরে অবস্থিত এ গ্রামটি। শীতলপাটির জন্যই পুরো গ্রাম সুশীতল ছায়ায় আবৃত। চিরন্তন বাংলার প্রাকৃতিক রূপ এই হাইলাকাঠি গ্রামটি অসম্ভব সুন্দর। রাস্তার দুই পাশে রয়েছে পাইত্রার খেত। বাঙালি ঐতিহ্যের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো শীতলপাটি। গরমে ঠাণ্ডা অনুভূতি পাওয়ার জন্য একসময় ঘরে ঘরে একপাশে লাল কাপড় লাগানো শীতলপাটির ব্যবহার ছিল চোখে পড়ার মতো। আগের মতো ওতো বেশি না হলেও শীতলপাটির ব্যবহার এখনও রয়েছে। ঐতিহ্যের অনুষঙ্গ শীতলপাটি শিল্প, শীতলপাটির গ্রাম ও পাটি শিল্পী, যাদের বলা হয় পাটিকর। তাদের একমাত্র পেশা হচ্ছে পাটি তৈরি করা। সাধারণত ঘরের নারীরাই নিপুণ হাতে পাটি বুননের কাজ করেন। আর পুরুষরা পাটির কাঁচামাল পাইত্রা সংগ্রহ, বেতি তৈরি ও বিপণনের কাজ করেন। গুণগত মান অনুযায়ী কারিগররা একহাজার টাকা থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত একটি শীতল পাটি পাইকারি দরে বিক্রি করেন। তবে এই পাটি দেশের বিভিন্ন স্থানের মেলা ও বিপণি বিতানে চড়া দামে বিক্রি হয়। জেলা শহরের পাইকারি দোকান ছাড়াও বাড়ি বাড়ি গিয়ে পাটির ফড়িয়া আড়তদাররা পাটি বিক্রি করেন। এখন হাল্কা শীত আর রোদে ঘেরা অগ্রহায়ণ মাস চলমান।

এ সময়ে বর্ষা স্থায়ী হয়। আর তিন মাস পরেই আবার দেখা মেলবে চৈত্র-বৈশাখের কাঠফাটা রোদ্দুর। তখনই স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকগুণ বেড়ে যাবে শীতলপাটির কদর। নলছিটির শীতলপাটি শিল্প যুব ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক বাবুল দত্ত বলেন, ঢাকা ইসলামী ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে শীতলপাটির মান-উন্নয়নের জন্য পাটিকরদের তিনটা প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রতিটা ব্যাচে ৩০ জন করে পাটিকর প্রশিক্ষণ নিয়েছে। ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক ফারাহ গুল নিঝুম বলেন, ঝালকাঠির শীতলপাটি একটি ‘ব্র্যান্ড পণ্য’।

পাটি প্রসারে পাটিকরদের প্রশিক্ষণসহ নানা রকম সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার উদ্যোগ চলছে। তারপরও আমরা তাদের কাছে যাব। তাদের সব সমস্যার কথা শুনব এবং সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করব। ঝালকাঠির ‘ব্র্যান্ড পণ্য’ শীতলপাটিকে তুলে ধরতে সরকারিভাবেই বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত