আকাঙ্ক্ষা থেকেই সুজনের ইংরেজি জয়

প্রকাশ : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

সুজন পাহান, জন্মের দুই বছর পর তাকে ও তার মাকে ফেলে রেখে চলে যান বাবা বগা পাহান। এরপর অন্যের বাড়িতে কাজ করে দুই বছরের সুজনকে নিয়ে চলে মা দুলালি পাহানের অভাবের সংসার। কিছুদিন পর বগা পাহানের মৃত্যুর খবর পান তারা। অভাবের সংসারে সুজন যখন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়তেন, তখন অসুস্থ হয়ে পড়েন তার মা। এরপর মায়ের দেখা-শোনা, সংসার চালানোসহ সংসারের যাবতীয় দায়দায়িত্ব এসে পড়ে সুজন পাহানের কাঁধে। কিছুই রেখে যাননি তার বাবা। বসতভিটাটুকুও অন্যের। কিন্তু মায়ের স্বপ্ন, অভাবের সঙ্গে লড়াই করে বড় হয়ে ওঠা একমাত্র ছেলে একদিন অনেক বড় চাকরি করবে। মুন্ডা সম্প্রদায়ের সুজনের বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ের রুহিয়ার কশালগাঁও গ্রামে। মায়ের স্বপ্ন আঁকড়ে ধরে সুজন মাঠে কাজ করার পাশাপাশি পড়ালেখাটাও চালিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমানে রুহিয়া ডিগ্রি কলেজে ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা দিয়ে তৃতীয় বর্ষে ভর্তির অপেক্ষায় আছেন সুজন। দেখা যায়, হাতে কাস্তি নিয়ে ফসলের মাঠে ধান কাটতে কাটতে, কখনও আবার গৃহস্থালির কাজ করতে করতে, চলতে ফিরতে শিশুদের নিয়ে সব সময় ইংরেজিতে কথা বলার চর্চা জারি রেখেছেন সুজন। প্রতিবেশীরা ভিনদেশি ভাষা বুঝতে না পারায় অনেক সময় হাসি-ঠাট্টা করে তাকে পাগলও বলে। তবুও ইংরেজিতে কথা বলার চর্চা থামাননি এ যুবক। ছোট্ট একটি কুঁড়ে ঘর থেকে তিনি স্বপ্ন দেখছেন নিজের জীবনমান উন্নয়ন করে কীভাবে সমাজের পিছিয়ে পড়া শিশুদের সামনে এগিয়ে নেওয়া যায়। তাদের কাছে নিজেকে অনুপ্রেরণা হিসেবে গড়ে তুলতে চাইছেন তিনি। সুজন পাহান বলেন, স্মার্ট ও টেকনোলজির যুগে ভালো কিছু করতে গেলে বাংলা ভাষার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ভাষা ইংরেজি শেখাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু অভাব অনটনের সংসারে যেখানে পাঠ্যবই পড়ার সময় নেই, সেখানে ভালো ইংরেজি শিখতে চাওয়াটা নিজের কাছেও কখনো কখনো অপ্রাসঙ্গিক লেগেছে, তবে অসম্ভব বলে কিছু নেই। আমি ফেসবুকে ইংরেজিতে কথা বলার ভিডিও দেখে দেখে ইংরেজি রপ্ত করার চেষ্টা করেছি এবং নিজের ইংরেজি চর্চার ভিডিও ফেসবুকে আপলোড করছি। কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে ইংরেজি কোর্স করার সুযোগ হয়নি জীবনে। সারা দিন ইংরেজিতে কথা বলার চেষ্টা করি। মানুষ হাসি-ঠাট্টা করে। অনেকেই ভাবে আমার বুঝি মাথায় সমস্যা দেখা দিয়েছে, কিন্তু আমি এসবের তোয়াক্কা করি না। মাঠে কাজ করার সময়, গৃহস্থালির কাজ করার সময় ও গবাদি পশু পালনের সময় সবখানে ইংরেজিতে কথা বলার চেষ্টা করি। মাঠে কাজ করে যা আয় হয়, তা নিত্যদিনের জীবনযাপনে চলে যায়। একটি ছোট চাকরি হলেও স্বপ্ন পূরণে একধাপ এগোতে পারব, যোগ করেন ভাইরাল এ যুবক।