খাজনামুক্ত হাটে কৃষকের মুখে হাসি

প্রকাশ : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

অগ্রহায়ণের এই শীতের সকালে কৃষক নিজেই তার চাষ করা শাকসবজি নিয়ে হাজির হন। সাধারণ ক্রেতারাও অপেক্ষা করতে থাকেন ভেজালমুক্ত তরতাজা সবজি কিনতে। ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার পৌর এলাকার পুরাতন ডাকবাংলো এলাকায় সড়কের দুই পাশজুড়ে বসে এই হাট। সরেজমিন দেখা যায়, নতুন এই হাটে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব ধরনের পণ্যের দোকান বসেছে। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকার লোকজনের সমাগমও ঘটছে এ বাজারে। হাটে যেমন ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, বেগুন, লাউ, শিম, পালংশাক, লালশাকসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি বিক্রি হচ্ছে- তেমনি মাছ, গরুর মাংস, পান-সুপারি ও গৃহপালিত হাঁস-মুরগি, পাখিও বেচাকেনা হচ্ছে। বাজারে দেখা যায়, প্রতি কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা, টমেটো ৫৫ টাকা, গাজর ৫০ টাকা, ফুলকপি ৫০ টাকা ও বাঁধাকপি ৩০ টাকায়, যা পার্শ্ববর্তী অন্যান্য বাজারের তুলনায় অনেকটাই কম। গরুর মাংস বিক্রেতা রফিক মিয়া বলেন, নতুন বাজার হলেও এখানে ক্রেতা চাহিদা সন্তোষজনক। দুটি গরু সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বিক্রির জন্য জবাই করে মাত্র ৩ ঘণ্টার মধ্যেই মাংস বিক্রি হয়ে যায়। কেজিপ্রতি ৬৫০ টাকা করে মাংস বিক্রি করছি। উপজেলার জগতপুরের কৃষক আহমেদ করিম বলেন, একদম জমি থেকে সবজি তুলে এনে এখানে বিক্রি করছি। মানে কোনো ভেজাল নেই। এমন সুযোগ আমাদের মতো প্রান্তিক কৃষকদের জন্য অনুপ্রেরণা। উপজেলার রাজাপুরের কৃষক শাহ আলম বলেন, স্থানীয় কৃষকদের পাশাপাশি ব্যবসায়ীরাও হাটে বসছেন। আমাদের মতো সাধারণ কৃষকরা খাজনা বা বিভিন্ন জটিলতায় বাজারে উৎপাদিত জিনিসপত্র সরাসরি বিক্রি করতে পারতাম না। কিন্তু এ বাজার নতুন দ্বার খুলে দিয়েছে। সাধারণ মানুষ মান ও দাম যাচাই করে চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় জিনিস ক্রয় করছে। হাটে আসা তাজুল ইসলাম নামের এক ক্রেতা বলেন, অন্যান্য বাজার থেকে এখানে দাম তুলনামূলক কম। এ ছাড়া সবচেয়ে বড় কথা আমরা ভেজালমুক্ত তরতাজা শাকসবজি পাচ্ছি। এমন উদ্যোগে আমাদের মতো সাধারণ ভোক্তাদের অনেক উপকার হয়েছে। মো. শাহজাহান নামের আরেক ক্রেতা বলেন, এই বাজারকে ঘিরে দাগনভূঞা উপজেলা ও পার্শ্ববর্তী নোয়াখালীর সেনবাগ, কোম্পানীগঞ্জ, কুমিল্লার নিমশাহ, চৌদ্দগ্রাম, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড, মিরসরাই, বারাইয়ারহাটসহ আশপাশের মানুষের সঙ্গে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠবে। পাশাপাশি উভয় এলাকার মানুষ অর্থনৈতিকভাবেও লাভবান হবে। দাগনভূঞা বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব ইফতেখার সিবলু বলেন, পৌরসভা ও বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সমন্বয়ে সপ্তাহে দুই দিন (শনিবার ও মঙ্গলবার) এ হাট বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। সকাল সাড়ে ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত চলে এই বাজার। প্রান্তিক কৃষকরা যেন তাদের কৃষিপণ্য ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করতে পারে, সেজন্যই মূলত এ উদ্যোগ। হাটে কোনো দোকানিকে খাজনা দিতে হচ্ছে না।

এর ফলে শুরুতেই সবার মাঝে ব্যাপক উৎসাহ ও সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। নিরাপত্তার জন্য বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির পক্ষ থেকে নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। দাগনভূঞা পৌরসভার মেয়র ওমর ফারুক খাঁন বলেন, প্রান্তিক কৃষকদের কথা চিন্তা করে এ হাট বসানো হয়েছে। কৃষকরা যেমন তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করতে পারবে পাশাপাশি ক্রেতারাও তরতাজা শাকসবজি, মাছ, মাংসসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য সাশ্রয়ী দামে কিনতে পারবে। আগামীতে পৌর এলাকায় জায়গায় কিনে স্থায়ীভাবে এ হাট বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে।