ঢাকা ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

চালের রাজ্যে ভালো নেই চাতাল শ্রমিকরা

চালের রাজ্যে ভালো নেই চাতাল শ্রমিকরা

দেশের অন্যতম বৃহৎ চালের মোকাম কুষ্টিয়ার খাজানগর। কুষ্টিয়া শহর থেকে মাত্র ৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই মোকামে গড়ে উঠেছে প্রায় অর্ধশত অটোরাইচ মিলসহ ছোট-বড় প্রায় ৫ শতাধিক রাইচ মিল। যেখানে নারী-পুরুষ মিলে প্রায় ১৫ হাজার শ্রমিক কাজ করছেন। যার মধ্যে নারী শ্রমিকের সংখ্যা চার হাজারের অধিক। কিন্তু চালের এই রাজ্যে ভালো নেই চাতাল শ্রমিকরা। এখানকার মিল থেকে উৎপাদিত চাল স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের চাহিদার ৩০ ভাগ জোগান দেয় বলে দাবি এখানকার মিল মালিকদের। মিনিকেট নামের যে সরু চাল দেশবাসীর কাছে বহুল পরিচিত, সেই মিনিকেট চাল উৎপাদনের জন্য প্রসিদ্ধ কুষ্টিয়ার খাজানগর। এখানকার উৎপাদিত শতাধিক ট্রাক চাল প্রতিদিন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার বাজারে যায় বিক্রির জন্য। মূলত চাল উৎপাদনের জন্যই দেশব্যাপী খাজানগরের নাম ব্যাপকভাবে পরিচিত। কিন্তু বিপুল সম্ভাবনার পাশাপাশি বাণিজ্যিক এ এলাকায় আছে নানা সংকট। তবে সেই সংকট কাটিয়ে উঠতে পারলে খাজানগরের এই মোকামে চাল শিল্পে বিপ্লব ঘটবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট অনেকেই। জানতে চাইলে খাজানগরের চাল ব্যবসায়ী এবং বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির সভাপতি আবদুর রশিদ বলেন, চাল শিল্পের জন্য দেশের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় এলাকা কুষ্টিয়ার খাজানগর। যেখান থেকে দেশের চাহিদার ৩০ শতাংশ চালের জোগান যাচ্ছে। এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারকে ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়াতে হবে। বিশেষ করে যারা নতুন অটোরাইচ মিল স্থাপন করতে চান, তাদের বিনা সুদে বা কম সুদে লোন দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। মিল মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, খাজানগরের এই মোকামের মিলে প্রায় ৪ হাজার মেট্রিক টন চাল উৎপাদন হয়। এতে যে পরিমাণ ধান লাগে তার অধিকাংশটাই আসে যশোর এবং নওগাঁ জেলা থেকে। এখানে মিনিকেট চাল বেশি উৎপাদন হলেও আটাশ, কাজললতা ও গুটি স্বর্ণা নামের কিছু চালও উৎপাদন করা হয়। অন্যান্য ধান স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করা হলেও মিনিকেট নামের সরু ধান আনা হয় উত্তরবঙ্গের নওগাঁ থেকে। মিল মালিকদের দাবি, মিনিকেট ধান বছরে একবার আবাদ হয়। চালকল মালিকদের দেওয়া তথ্য মতে, চাতাল শ্রকিক বা এ সংক্রান্ত কাজ বা ব্যবসার কাজে এখানে প্রায় ১৫ হাজার মানুষের জীবিকা নির্বাহ করে। প্রতিদিন রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে যারা দেশের এতো বড় পরিমাণ চালের চাহিদা পূরণ করছে তাদেরও সমস্যার অন্ত নেই। দিনে দিনে আধুনিক হচ্ছে চালকলগুলো। তাতে চাতাল শ্রমিকদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন আসেনি। চাতাল ঘুরে দেখা যায়, একজন পুরুষ শ্রমিকের পাশাপাশি একজন নারী শ্রমিক গুদাম থেকে ধান নামানো, হলারে ধান ভেজানো, গ্যাস চুল্লিতে ধান সিদ্ধ করা, ধান শুকানো, ভাঙানো, চাল ও গুঁড়া পৃথক করা চাল বস্তায় ভরা, বস্তা সেলাই করাসহ নানা ধরনের কাজ করে চলেছেন। কাজ সমান সমান করলেও আছে মজুরি বৈষম্য। তবে মালিকদের ভয়ে স্বীকার করেন কেউ। শুধু মজুরি বৈষম্য নয়, অনেক ক্ষেত্রেই তাদের চলতে হয় মালিকের মন জুগিয়ে। তা না হলে পড়তে হয় নির্যাতনের মুখে। স্বামী পরিত্যক্তা চাতাল শ্রমিক জবেদা খাতুন ও জরিনা খাতুন জানান, মালিকরা পুরুষ শ্রমিকদের অনেক বেতন দেন। কিন্তু তাদের বেলায় উল্টো। তারা খুদের পরিবর্তে টাকা চায়। তবে অন্যান্য সময় যা পায় তা দিয়ে তাদের কোনো রকম চললেও বর্ষা মৌসুমে বিপাকে পড়েন তারা। কাজ না থাকায় অর্ধাহারে-অনাহারে থাকতে হয় তাদের। এ বিষয়ে সুজন আলী নামের একজন চাতাল মালিক বলেন, এখানে সরকারি কোনো নিয়মণ্ডকানুন নেই। তবুও তারা নারী শ্রমিকদের সাধ্যমতো দেওয়ার চেষ্টা করেন। আর খুদের সঙ্গে তারা কিছু ভালো চালও নারী শ্রমিকদের দিয়ে থাকেন। জানতে চাইলে সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) সভাপতি রফিকুল আলম টুকু বলেন, যে শ্রমিকদের কারণে মালিকরা কোটি টাকা আয় করছে, সেই শ্রমিকের মজুরি বা সুবিধাবঞ্চিত করা এক ধরনের প্রতারণার সামিল এবং অপরাধ। তাই শ্রমিকদের সঠিক মজুরিসহ তাদের সুযোগ-সুবিধার প্রতি মালিকদের বিশেষ দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানান তিনি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত