ঢাকা ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মোয়া তৈরি করে ভাগ্য ফিরেছে সাইফুলের

মোয়া তৈরি করে ভাগ্য ফিরেছে সাইফুলের

কুড়িগ্রামে প্রত্যন্ত অঞ্চলে হাতে বানানো সুস্বাদু মোয়া তৈরি করে স্বাবলম্বী হয়েছেন মো. সাইফুল ইসলাম। মুড়ি-গুড় দিয়ে তৈরি সুস্বাদু মোয়া বা মলা বিক্রি করে তার সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরেছে। নিজের আত্মকর্মসংস্থানের পাশাপাশি এলাকার আরো ২০ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে তার কারখানায়। সাইফুলের বানানো মোয়া তিন উপজেলার মানুষের চাহিদা পূরণ করছে। এখন তার মাসে আয় প্রায় ৪০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাইফুল ইসলাম বাইসাইকেল ও রিকশা মেকানিকের কাজ করে সংসার চালাচ্ছিলেন। শারীরিক অসুস্থায় মেকানিকের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। সংসারে শুরু হয় টানাপড়েন। উপায়ন্তর না পেয়ে ২০২০ সালে এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে শুরু করেন বাড়িতে মোয়া তৈরির কাজ। শুরুর দিকে স্বামী-স্ত্রী দুজনে মিলে মোয়া তৈরি করলেও পর্যায়ক্রমে বাজারে মোয়ার চাহিদা বেশি থাকায় এখন তার কারখানায় কাজ করছে ২০ থেকে ২৫ জন নারী-পুরুষ। সাইফুল ইসলামের বাড়ি কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের তিস্তাপাড়ের গোড়াই পিয়ার এলাকায়। তার পরিবারে স্ত্রী এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। ছেলে স্থানীয় স্কুলে নবম শ্রেণি ও মেয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। সরেজমিন দেখা গেছে, একটি বড় হাঁড়িতে জমাট বাঁধা গুড় তাপ দিয়ে তরল করা হচ্ছে। তরল গুড়ে মুড়ি মিশ্রিত করে তিনটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নারীরা তৈরি করছেন মোয়া বা মলা। এসব মোয়া রাখা হচ্ছে পাশের একটি ঘরে। সেখানে আবার ১০টি করে মোয়া দিয়ে করা হচ্ছে একটি করে প্যাকেট। এক প্যাকেট মোয়ার পাইকারি দাম ৩০ টাকা। প্রতিদিন ৩-৪ মণ মুড়ি ও ১ মণ গুড় দিয়ে উৎপাদন হচ্ছে ৮-১০ হাজার মোয়া বা মলা। এগুলো বিক্রি করে শ্রমিক, পরিবহন ও অন্যন্য খরচ মিটিয়ে প্রতিদিন আয় করছেন দেড় থেকে দুই হাজার টাকা। এখন বাজারে মোয়ার চাহিদা বেশি থাকায় খুবই ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি গত ৩ বছর ধরে মলা তৈরি করছি। আমার এখানে ২০-২৫ জন নারী ও পুরুষ কাজ করছে। তাদের ২০০ টাকা পারিশ্রমিক দিচ্ছি। আমারও দিন গেলে এক থেকে দেড় হাজার টাকা আয় হচ্ছে। মোটামুটি সংসারটা এখন ভালো চলছে। আগে তো অভাব খুব ছিল। টাকা-পয়সা বেশি থাকলে আরো বড় পরিসরে কাজটি করতে পারতাম। আমার এখানে প্রতিদিন ৮-১০ হাজার মলা তৈরি হচ্ছে। এসব মলা আমি নিজেই পার্শ্ববর্তী তিনটি উপজেলায় বিক্রি করছি। সাইফুল ইসলামের মোয়া তৈরির কারখানায় কাজ করছেন মাহমুদা নামের এক নারী। তিনি বলেন, আমরা অনেকে এখানে কাজ করি। দিন ২০০ টাকা পারিশ্রমিক পাই। স্বামীর ইনকাম ছাড়াও এখানকার আয়ে সংসারে যোগান দিচ্ছি। পাশাপাশি ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ারও খরচ চালাচ্ছি। স্থানীয় ইউপি সদস্য (মেম্বার) মন্টু মিয়া বলেন, আমার ওয়ার্ডের সাইফুল আগে মেকানিকের কাজ করত। কয়েক বছর থেকে বাড়িতে মোয়া তৈরি করে বিক্রি করছে। বাড়িতে মলা তৈরি করে ভালোই লাভবান হচ্ছে। পাশাপাশি তার এখানে ২০-২৫ জন নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। সরকারিভাবে তাকে যদি সহযোগিতা করা হয়, তাহলে আমার মনে হয় আরো বড় পরিসরে মোয়া তৈরির কাজটি করতে পারত। কুড়িগ্রাম বিসিক শিল্পের উপব্যবস্থাপক শাহ মোহাম্মদ জোনায়েদ বলেন, সাইফুল ইসলাম মোয়া তৈরি করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন। কোনো প্রকার সহযোগিতার প্রয়োজন হলে কুড়িগ্রাম বিসিক তার পাশে থাকবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত